আকস্মিক বন্যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৩ উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৩ লক্ষাধিক মানুষ। সেইসঙ্গে বন্যার পানিতে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বীজতলা তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

বন্যার পানিতে নলকূপ ডুবে যাওয়ায় খাওয়ার পানির তীব্র সংকটের কথাও জানিয়েছেন তারা।

চন্দনাইশের বাসিন্দা জাফর আলী বলেন, '১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের আমাদের বাড়ির উঠানে পানি উঠেছিল কিন্তু পানি আমাদের ঘরে ঢুকতে পারেনি। আজ বন্যার পানি আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে।' 

'সকাল থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, রান্নার কোনো সুযোগ না থাকায় শুধু শুকনো খাবারই খেতে হচ্ছে। এলাকার নলকূপগুলো ডুবে যাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে পানি আনতে হচ্ছে,' বলেন জাফর। 

হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পোড়েছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৩ উপজেলার বাসিন্দারা। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

সোমবার মধ্যরাত থেকে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-আরাকান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সড়কে পানি জমে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার সকালে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও বেলা ১১টার পর থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রায় ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল ১১টার দিকে রাস্তার একপাশে কিছু যানবাহন চলাচল শুরু করলেও, পরে আবার থেমে যায়।

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার একাংশের স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী মঙ্গলবার চন্দনাইশ উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলায় যেতে পারেননি।

তিনি বলেন, 'আমি বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য তিনটি লংগরখানা খুলেছি। এখানে ১২টি ইউনিয়নে এক লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

হঠাৎ বন্যায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইশ ইউনিয়নের বাসিন্দা ইলিয়াস চৌধুরী জানান, গত সোমবার রাতে তার বাড়িতে পানি ঢুকেছে। তার পরিবার বাজারের একটি স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, রান্না করতে না পারায় দুই সন্তানকে নিয়ে শুধু শুকনো খাবার খেয়েছি। বাড়ির টিউবওয়েলটিও পানির নিচে চলে যাওয়ায় আমাদের খাবার পানির খুব সংকট।'

এলাকার লোকজন তাদের পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তিনি।

কমিউনিটি সেন্টারের মালিক আমিলাইশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সারোয়ার উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন্যা দুর্গত মানুষের স্বার্থে কমিউনিটি সেন্টারটি খোলা রাখা হয়েছে।

সারোয়ার বলেন, পাহাড়ি ঢলে এখানকার দুই নদী সাঙ্গু ও ডলু উপচে দুই পাশের গ্রাম প্লাবিত করছে। বান্দরবানের সঙ্গে সাঙ্গু আর মিয়ানমারের সঙ্গে ডলুর সংযোগ থাকায় সেখাকার পাহাড়ি ঢলে পানি নেমে এসেছে।

যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব জানান, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত।

তিনি বলেন, সোমবার সকালেও এলাকায় পানি ছিল না। কিন্তু দুপুর থেকে হঠাৎ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার গ্রামগুলো।

কয়েকশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শত শত হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, 'এলাকায় নৌকার সংকট থাকায় আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে লোক আনতে পারছি না। সোমবার রাত থেকে এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা লোহাগড়া উপজেলার এসি (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার উপজেলায় নয়টি ইউনিয়ন রয়েছে এবং এর মধ্যে ছয়টিই বন্যাকবলিত এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি কিন্তু লোকজন সেখানে আসছে না। মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০০ জন এই কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Thousands of crores of taka of citizens wasted on unnecessary projects: Commerce Adviser

The adviser, however, added that liabilities of foreign-funded projects should still be repaid

32m ago