ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড

খরচের এক-তৃতীয়াংশই গেছে বোর্ড সভার সম্মানী দিতে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের যে টাকা বিতরণ করেনি তা দেখভাল করতে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)।

এ কাজের জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরের পাশাপাশি, প্রায় অর্ধডজন কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির অন্তত ৫৪টি সভা করা হয় মাত্র এক বছরে। এসব সভায় কমিটির সদস্যদের সম্মানী ও বিভিন্ন সভা আয়োজনে মোট দুই কোটি ১২ লাখ টাকা খরচ করে সিএমএসএফ। এটি তাদের মোট পরিচালন খরচের এক-তৃতীয়াংশ।

এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে তারা সম্মানী ও অনুষ্ঠান বাবদ খরচ করেছিলেন এক কোটি ১৯ লাখ টাকা। মোট পরিচালন খরচ ছিল দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।

সিএমএসএফ বোর্ড এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার তহবিল পেয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, যে টাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অবণ্টিত লভ্যাংশ হিসেবে জমা ছিল।

নজিবুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এই টাকা ব্যবস্থাপনার জন্য সিএমএসএফ'র পর্ষদের দায়িত্ব পান।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিষয়টি আমলে নিয়ে এত সভার যৌক্তিকতা ও পরবর্তী খরচ মূল্যায়নের জন্য তদন্ত করেছে।

বিএসইসি সিএমএসএফ গঠন করা হয় হয়, তহবিলের অর্থ ও শেয়ার যেকোনো সময় বিনিয়োগকারীরা চাইলে যেন ফেরত দিতে পারে। আর তারা চাওয়ার আগ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ তহবিল ব্যবহার করা হবে।

তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ কেনা-বেচা, অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তা করা যেতে পারে।

নজিবুর রহমান তহবিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১১ সদস্যের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত মাসে তার তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বোর্ড ও বিভিন্ন কমিটি অন্তত ৫৪টি সভা করেছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সম্মানী বাবদ খরচ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং অনুষ্ঠানের জন্য করা করা হয় ৬৫ লাখ টাকা।

তবে বৈঠকগুলোর কার্যবিবরণী হাতে না আসায় বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছিল তা জানা যায়নি।

তহবিলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬৫ কোটি টাকা দুই হাজার ৭০০ বিনিয়োগকারীকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

'নৈতিকতা ও যুক্তির প্রশ্ন'

এ তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা স্পন্সরশিপে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলী মিউচ্যুয়াল ফান্ড চালু করা হয়। বাকি ২২৫ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়।

এ ছাড়া, এ তহবিল থেকে কয়েকটি বাজার মধ্যস্থতাকারীকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

একটি ব্যাংকে ৩৪৮ কোটি টাকা রাখার পাশাপাশি বাকি টাকা স্টক লভ্যাংশ হিসেবে তহবিলটির বিও অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তহবিলের একটি বড় অংশ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। তারা বিনিয়োগের সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই এত সভা করা তো দূরের কথা, সিএমএসএফের জিম্মাদারেরও তেমন কিছু করার নেই।'

মনিরুজ্জামান বলেন, সব খরচের যথাযথ যৌক্তিকতা থাকা উচিত। কারণ এটি নৈতিকতা ও যুক্তির প্রশ্ন।

ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত কোনো তহবিলের পরিচালন খরচের বেশিরভাগ গবেষণা ও কর্মীদের বেতনে যায়। সিএমএসএফের বড় অংশ অন্য প্রতিষ্ঠানে থাকায় এর পরিচালনা পর্ষদকে বিনিয়োগের বিকল্প সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে গবেষণা করতে হয় না। এর পরিচালন অনেক খরচ কম হওয়া উচিত ছিল।'

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানে গত বছর চারটি সভা হয়েছে। পরিচালকদের সম্মানী ভাতা ছিল প্রায় দুই লাখ টাকা। এটি মোট পরিচালন খরচের এক শতাংশ। সিএমএসএফে সম্মানীর পেছনে এত টাকা খরচ করার যৌক্তিকতা দেখি না।'

টাকার অপচয়?

সম্প্রতি কয়েকবার মেসেজ পাঠিয়েও নজিবুর রহমানের জবাব পাওয়া যায়নি।

সিএমএসএফের চিফ অব অপারেশন মো. মনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তহবিলটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় কর্মকর্তাদের অনেক সভা করতে হয়েছিল। এখন এটি শক্তিশালী অবস্থান পৌঁছেছে।'

তার ভাষ্য, 'সিএমএসএফ সঠিক বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অবিতরণকৃত লভ্যাংশ দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের তহবিল যাতে না কোনভাবেই কমে না যায় সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সচেষ্ট।'

তিনি জানান, যে খরচ করা হয়েছে, তা মূল টাকা থেকে হয়নি। সুদ থেকে সব খরচ হয়েছে।

সিএমএসএফ পরিচালনা পর্ষদের দুই সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেছে ডেইলি স্টার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন, বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাসঙ্গিক প্রায় সব সিদ্ধান্ত সিএমএসএফ চেয়ারম্যান নিয়েছেন।

তারা মনে করেন, সভা বাবদ যে খরচ ও সম্মানী ভাতার নামে যেসব খরচ করা হয়েছে সেটি এক ধরনের অপচয়। তারা আগেই কমিটি ও সভার সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন, বলে দাবি করেন।

বিএসইসির মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কয়েকবার বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছে, পরবর্তীতে তদন্তও করেছে।'

তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে বিএসইসি শিগগিরই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

15h ago