নীতিমালা উপেক্ষা: এখনো পুঁজিবাজারে আসেনি এনটিটিএন অপারেটররা
বাধ্যবাধকতা থাকলেও ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) ছয় অপারেটরের মধ্যে পাঁচটিই লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসেনি।
এনটিটিএন লাইসেন্সিং গাইডলাইন অনুসারে, লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে অপারেটরকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য আবেদন করতে হবে।
দেশে তিন রাষ্ট্রায়ত্ত ও তিন বেসরকারিসহ ছয় এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান আছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শুধু পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) তালিকাভুক্ত।
প্রায় ১০ বছর থেকে ১৫ বছর আগে লাইসেন্স পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে শেয়ার ছাড়েনি।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ফাইবারঅ্যাটহোম লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড, বাহন লিমিটেড, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ফাইবারঅ্যাটহোম ও ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ খাতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের সহযোগী সামিট কমিউনিকেশনস লাইসেন্স পায়।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ রেলওয়ে, পিজিসিবি ও বিটিসিএল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে লাইসেন্স পায় বাহন লিমিটেড।
ফাইবারঅ্যাটহোম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ময়নুল হক সিদ্দিকী জানান, তার প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা করেছিল।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগের সরকারের আইপিও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত করেছিল।'
তার মতে, 'দেরি হওয়ার পেছনে এটাই কারণ।'
তিনি আরও বলেন, 'শেয়ারের দামের জন্য বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে আসতে রাজি না। বিষয়টি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।'
গত মে মাসে চিঠিতে বিটিআরসি ফাইবারঅ্যাটহোমকে শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ নিতে বলে।
ময়নুল হক সিদ্দিকী বলেন, 'আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আইপিও ইস্যু করতে পারব। আরও আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে মূল্যায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে।'
সামিট কমিউনিকেশনস ইমেইলে জানিয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে আইপিওর জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করেছিল। তা না পারার কারণও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, 'স্থানীয় বাজারে সংকট ও করোনা মহামারিসহ অপ্রত্যাশিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কারণে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারিনি।'
বাংলাদেশের টেলিকম ও ইন্টারনেট খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও আরও অনুকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আইপিও ছাড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে এতে সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।
আরও বলা হয়, 'আমরা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছি। যখন আত্মবিশ্বাসী হবো যে বাজার স্থিতিশীল হতে যাচ্ছে তখন এগিয়ে আসবো।'
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠানের আইপিওতে যাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে তাদেরকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদেরকে কারণ দর্শানো বা পরিকল্পনা জানাতে বলা হবে।'
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত নিয়ম প্রয়োগ করা। প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম না মানলে বিটিআরসির উচিত তা কার্যকর করা। বাধা থাকলে তা দূর করতে কাজ করবো।'
তিনি আরও বলেন, 'পুঁজিবাজারের জন্য সংস্কারের সুপারিশ করতে টাস্কফোর্স কাজ করছে। এর মধ্যে আইপিওর মূল্যায়ন পদ্ধতি পুনর্বিবেচনাও থাকতে পারে। আইপিওর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকলে কমিশন তা বিবেচনা করবে।'
হোয়াটসঅ্যাপ পাঠানো প্রশ্নের জবাবে বিটিসিএল জানায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসির ইস্যু করা ১০টি লাইসেন্সের আওতায় সমন্বিত টেলিকম সেবা দিচ্ছে।
বিটিসিএল এসব লাইসেন্সের আওতায় যেসব সেবা দিয়ে থাকে তার হিসাব রাখে। এনটিটিএনের হিসাব আলাদা করার সুযোগ নেই। বিটিসিএল বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
Comments