আইএমএফের কাছে ৫০ বিষয়ে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলো সরকার

সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আইএমএফের সঙ্গে পরামর্শ করে খেলাপি ঋণ কমানোর দিকনির্দেশনাটি কার্যকর করে যাবো।’
আইএমএফ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে প্রায় ৫০ বিষয়ে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

গত সোমবার আইএমএফের বোর্ড সভায় এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

২০২৬ সালের মধ্যে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের (এনপিএল) অনুপাত আট শতাংশ ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় খেলাপির অনুপাত ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সরকার দিক নির্দেশনা দিয়েছে।

এটি কার্যকর করতে ব্যাংকের আইন বিভাগকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে ঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।

সরকার এক বিবৃতিতে আইএমএফকে বলেছে, 'আমরা আইএমএফের সঙ্গে পরামর্শ করে খেলাপি ঋণ কমানোর দিকনির্দেশনাটি কার্যকর করে যাবো।'

ব্যাংকের একত্রীকরণ প্রসঙ্গে সরকার আইএমএফকে জানিয়েছে, আর্থিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করার জন্য বাজারভিত্তিক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

দুটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূতকরণে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই প্রক্রিয়া আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মার্চে যখন প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর হবে, তখন ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি আদায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সরকার বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের ক্ষমতা পাবে।

'খেলাপি ঋণ কমাতে ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করতে আমরা খেলাপির সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবো। একত্রীকৃত ব্যাংকগুলো পরিচালনা করবো। আরও ব্যাংকের একত্রীকরণের প্রস্তাব যাচাই করবো এবং এ ধরনের প্রস্তাবগুলো অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠাবো।'

মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সুষ্ঠু সমন্বয় এবং প্রকল্প নির্বাচন জোরদার করতে সরকার ১৫-র মধ্যে সাত খাতের জন্য সেক্টর স্ট্র্যাটেজি পেপারস বা সেক্টর অ্যাকশন প্ল্যান করেছে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ অতিরিক্ত পাঁচ খাতের জন্য কয়েক বছর মেয়াদি সরকারি বিনিয়োগ কর্মসূচি তৈরি করা হবে।

সরকার ধীরে ধীরে বকেয়া শোধ ও প্রয়োজন অনুসারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভর্তুকি খরচ তুলে আনার পরিকল্পনা করেছে।

সরকার জানিয়েছে, চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদকদের নতুন করে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রতিশ্রুতি এড়ানো হবে।

কর-রাজস্ব বাড়াতে সরকার বৃহত্তর ডিজিটালাইজেশন, করের পরিধি বাড়ানো ও কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা জোরদার করছে।

সরকার গ্রাহকদের ৩৮ সেবা পেতে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক করে করদাতার নিবন্ধন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ২০ লাখে বাড়াতে সহায়তা করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এক কোটি করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।

সরকার গত এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৪১টি ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন করায় তা চলতি অর্থবছরে প্রায় ৭৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিবৃতি অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে মোট তিন লাখ ইএফডি স্থাপনের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

Comments