মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই বাজেটে

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই বাজেটে

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.২৪ শতাংশে। কিছু মানুষের জন্য অর্থনৈতিক এই শব্দটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে বেশির ভাগ নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জীবনযাপন দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

রাজধানীর আদাবরের মাকসুদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে আমি ভয় পাই। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে মনে হয় আমাদের কথা ভাবার সময় নেই কারও।'

৯টা-৫টার একটি চাকরি করে মাকসুদুরের মাসিক আয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ৩৫ বছর বয়সী মাকসুদুর ৪ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

তিনি মনে করেন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা খরচ এবং শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি তার ওপর আলাদা চাপ তৈরি করবে। এ জন্য তার তালিকা থেকে কিছু জিনিস বাদ দিতে হয়েছে; যেগুলো খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয়। এগুলো মধ্যে আছে, বাইরে খাওয়া এবং গ্রামের বাড়িতে যাওয়া। এমনকি তার খাবারের খরচও কমাতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ছাঁটাইয়ের তালিকা বেশ দীর্ঘ, তারপরও আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছি না।'

'গত বছর পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। আমার বাচ্চারা মুরগি পছন্দ করে বলে আমি মাসে কয়েকবার মুরগি এবং মাছ কিনতাম। এখন আমি মাসে মাত্র দুবার মুরগির মাংস কিনতে পারি এবং ডিম, মসুর ডাল এবং সবজি খাওয়ার চেষ্টা করি। বাচ্চাদের এসব খেতে দেখলে মন খারাপ হয়', বললেন মাকসুদুর।

মহানগর ঢাকা থেকে শুরু করে মফস্বল শহর ও গ্রাম পর্যন্ত মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মহামারির ধাক্কায় মাকসুদুরের মতো নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের মজুরি না বাড়ায় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

গতকাল প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট তাদের জন্য কোনো স্বস্তি বয়ে আনবে না।

এটা ঠিক যে, বাজেটে ন্যূনতম করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু বাজেটে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই যা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি রোধ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমানোর জন্য বাজেটে খুব বেশি কিছু নেই।'

কীভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো হবে বা দ্রব্যমূল্য কমাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা বাজেটে স্পষ্ট নয়।

সেলিম রায়হান বলেন, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি মূলত ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মার্চ মাসে সারাদেশে ১ হাজার ৬০০ বাড়িতে সানেমের পরিচালিত একটি জরিপ অনুসারে, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো যথাক্রমে ৩৭.০৮ শতাংশ এবং ৫৬.৫৫ শতাংশ চাল এবং গমের ব্যবহার কমিয়েছে।

এর মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৯৬ শতাংশ মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে এবং ৮৮.২২ শতাংশ মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।

সানেমের জরিপে আরও দেখা গেছে, তাদের প্রাণীজ আমিষের সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস ডিম এবং ভোজ্য তেলের ব্যবহার ৭৭.০৬ শতাংশ এবং ৮১.৪৩ শতাংশ কমেছে। 

সংক্ষেপিত: বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus inaugurates month-long programme on July uprising

The chief adviser said the annual observance aimed to prevent the reemergence of authoritarian rule in the country

1h ago