জুলাইয়ে কার্ডে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন বেড়েছে ২৭৪ শতাংশ

জুলাই মাসে ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২৭৪ শতাংশ বেড়েছে। এমন সময়ে এই লেনদেন বাড়ছে যখন সরকার দেশে ডলারের রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকরা জুলাইয়ে ৪৪২ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মাসিক ব্যয়। গত বছর জুলাইয়ে এই খরচের পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানান, কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার এই বিপুল পরিমাণ লেনদেনের কারণে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ২১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তরা প্রায়ই এখন বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদেশ ভ্রমণ এখন বেড়েছে, ফলে কার্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হচ্ছে।

সর্বোপরি, সারা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকায় কার্ডের গ্রাহকদের বিদেশে থাকাকালে আগের তুলনায় বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

এ ছাড়াও, অনেকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাহবুবুর রহমান জানান, এটাও কার্ডে বিদেশি মুদ্রা খরচ করার আরেকটি কারণ।

ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. মহিউল ইসলাম জানান, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা খরচের পরিমাণ বেড়েছে।

ভোক্তারা দেশের বাইরে কার্ড ব্যবহার করে কিছু কিনলে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা করে চার্জ করছে। এক বছর আগে এই খরচ ৮৮ থেকে ৮৯ টাকার মধ্যে ছিল।

মহিউল ইসলাম জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ থাকলেও ভোক্তাদের মধ্যে পণ্য ও সেবা কেনার চাহিদা কমেনি। এ বিষয়টি কার্ডের মাধ্যমে খরচ বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

'উড়োজাহাজের ভাড়া বেড়ে যাওয়া কার্ডে পেমেন্ট বাড়ার একটি কারণ', যোগ করেন তিনি।

ঢাকা ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এইচএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৈদেশিক মুদ্রায় কার্ডের লেনদেন বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে বহু শিক্ষার্থী এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন।

ক্ষেত্র বিশেষে কিছু সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের বাবা-মাও বিদেশ ভ্রমণ করছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যাতায়াতের ওপর বিধিনিষেধ ছিল, কিন্তু সম্প্রতি এ বাধাগুলো দূর হয়েছে।

'এ কারণে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভ্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে', যোগ করেন তিনি।

গত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে আছে। বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ খাতে বিঘ্ন ঘটার কারণে আমদানি বিল বেড়েছে।

এ সময়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহও ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়নে নেমে আসে।

সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি, উভয়ই বেড়েছে। তবে এখনও তা উচ্চ আমদানি ও বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

গত বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে জুলাইতে আমদানির বিল ৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন হয়েছে। ইতোমধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ১৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন হয়েছে এবং একই সময়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন হয়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

1h ago