ওষুধ বিক্রিতে ধীর গতি
দাম বাড়লেও ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রিতে অন্তত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। কারণ জীবন রক্ষাকারী নয় এমন ওষুধ কেনার হার কমে গেছে।
লাইফ সায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিতে উন্নত বিশ্লেষণ, এবং ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ওষুধ বিক্রি ২ শতাংশ বেড়ে ৩০ হাজার ৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২ সালের চার বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালের মে থেকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর। এটিকে ওষুধ বিক্রির ধীর প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।
ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে, তাই যদি পরিমাণের দিক থেকে ওষুধ বিক্রি আগের মতোও থাকতো, টাকার অংকে বিক্রি বেশি হওয়ার কথা ছিল।
'কিন্তু তা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, ফলে মানুষ কম পরিমাণে ওষুধ খাচ্ছে।
সাধারণত ওষুধকে ধরা হয় যে, আয় কমলেও মানুষ ওষুধের চাহিদা কমায় না। কিন্তু তিনি জানান, মানুষ যখন কঠিন আর্থিক অবস্থার মুখে পড়ে এবং খাদ্য ব্যয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে চান- তখন জীবন রক্ষাকারী নয় এমন ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, যেহেতু অনেক পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, তাই গুরুতর না হলে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন না। এতে ওষুধের বিক্রি কমেছে।
আইকিউভিআইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে টার্নওভার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় নেমে এলেও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ বিক্রিতে শীর্ষ স্থানে আছে। দেশের ওষুধ বিক্রির ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই এই কোম্পানির দখলে।
তবে, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আইকিউভিআইএর তথ্যের সঙ্গে একমত নন।
তিনি বলেন, '২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের বিক্রি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা এখনো বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিনি।'
বিক্রির দিক দিয়ে দ্বিতীয়তে আছে ইনসেপ্টা ফার্মা, তাদের বিক্রি ৩ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, ওষুধের বাজারে কোম্পানিটির শেয়ার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বিক্রি ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, এক বছর আগের তুলনায় ২০২৩ সালে হাসপাতাল ও চেম্বারে রোগীর হার কমেছে।
'এর কারণ হতে পারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তাই মানুষ শুধু জরুরি হলেই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'গুরুতর কোনো উপসর্গ না থাকলেও পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ জানার চেষ্টা করেন এমন রোগীর সংখ্যাও অনেক কমেছে।'
'অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন ওষুধ প্রেসক্রাইব করার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা সতর্ক আছেন।'
তিনি মন্তব্য করেন, কিছু মানুষ ব্যয় কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই প্রেসক্রিপশন থেকে একটি বা দুটি ওষুধ বন্ধ করে দেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে, তিনি যোগ করেন্
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেলথকেয়ার, রেনাটা ও অপসোনিনের বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৮১ কোটি, ১ হাজার ৫০৪ কোটি ও ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
এসিআই হেলথ কেয়ার বিভাগের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম মহিবুজজামান বলেন, মূলত মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি থাকায় ওষুধ ব্যবহারে ধীর গতি আছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গত বছরের মার্চ থেকে ৯ শতাংশের ওপরে আছে।
দেশের শীর্ষ ওষুধ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এক ধাপ করে এগিয়েছে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ও একমি ল্যাবরেটরিজ।
ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন এসকেএফ এখন বাংলাদেশের সপ্তম বৃহত্তম ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির বিক্রি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অষ্টম স্থানে থাকা এরিস্টোফার্মার বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকা।
আইকিউভিআইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করে নবম স্থানে আছে একমি ল্যাবরেটরিজ। দশম স্থানে থাকা রেডিয়েন্ট ফার্মার বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।
Comments