ব্যাংকের পরিচালকরা যেভাবে একে অপরকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন

আটটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা পরস্পরকে দিয়েছেন প্রচুর পরিমাণে ঋণ। কিছু ব্যাংক আরও এক ধাপ এগিয়ে এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের আত্মীয়দের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্লেষণ করা আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে আটটি ব্যাংকের পরিচালকরা অন্য ব্যাংকের পরিচালকরদেরকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন, বিপরীতে তারা সেসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এর বাইরে চারটি ব্যাংক পরিচালকদের আত্মীয়দের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

অর্থাৎ এই পরিচালক ও তাদের আত্মীয়রা ব্যাংকগুলো থেকে পারস্পরিক যোগসাজসে ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের অধিকাংশই গত পাঁচ বছরে দেওয়া হয়েছে।

গত তিন মাস ধরে দ্য ডেইলি স্টার বাংলাদেশের ৫১টি তফসিলি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে এবং দেখা গেছে, আটটি ব্যাংক এই ধরনের ঋণ দিয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

ব্যাংকগুলো এমন প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাংকিং পদ্ধতির জন্য আলোচিত এবং সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে এস আলম, বেক্সিমকো, নাসা ও সিকদার গ্রুপসহ শক্তিশালী ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো রাজনীতির অপব্যবহার এবং আইনের ফাঁকগুলোর সুযোগ নিয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, যা দেশের পুরো আর্থিকখাতকে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এই আট ব্যাংকের যেসব পরিচালক এ ধরনের ঋণের সঙ্গে জড়িত তারা সম্মিলিতভাবে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়েছেন। আর তারা একে অপরের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, তাদের পরিশোধিত মূলধন ঋণের মাত্র পাঁচ শতাংশ।

ব্যবসায়ীক হিসাব, আর্থিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং নীতি বিবেচনায় নিলে এই ব্যবসায়ীক গ্রুপগুলোর বেশিরভাগই ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল না। তাই তারা একে অপরকে ঋণ দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের পরিচালক তার নিজ ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট অংকের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। এই নিয়ম ফাঁকি দিতেই তারা নিজের ব্যাংক থেকে অপরকে ঋণ দেওয়ার ধূর্ত পদ্ধতি বেছে নেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রবণতা নতুন না হলেও গত সাত-আট বছরে ব্যাংকিংখাতে অধিকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে।

একজন ব্যাংকিং বিশ্লেষক বলেন, 'যেহেতু অধিকাংশ ব্যাংকের মালিকরাও সফলভাবে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন, তাই অন্য ব্যাংক থেকে তারা ঋণ নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটা আটকাতে পারে না।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৪ সালের এক সার্কুলার অনুসারে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালকদেরকে নিজ নিজ পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই আট ব্যাংকের মধ্যে চারটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। দুটি ব্যাংক জানিয়েছে, তারা যেসব ঋণ দিয়েছে তা আইন মেনেই অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি দুটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ব্যাংকাররা বলছেন, এ ধরনের পারস্পরিক ঋণ দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিংখাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

তাদের মতে, এই ধরনের ঋণ ইঙ্গিত দেয় যে এই পরিচালকরা আমানতকারীদের অর্থ একে অপরকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছিলেন। কারণ, তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন।

ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের তিনজন মধ্যসারির কর্মকর্তা জানান, পরিচালকদের নির্দেশেই বেশিরভাগ ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কিছুই করার ছিল না।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক কিছু কোম্পানিকে বড় অংকের ঋণ দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ঋণের পরিমাণ ছিল তাদের বার্ষিক বিক্রির কয়েকগুণ পর্যন্ত।

এই তিন ব্যাংকারের একজন বলেন, 'তাহলে তারা কীভাবে এই ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে?' বাকি দুজনও বলেন একই কথা।

'অনৈতিক সুবিধা'

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এস আলম গ্রুপ যখন থেকে ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দখল নেয়, তখন থেকেই এই পারস্পরিক ঋণ প্রদান শুরু করে ব্যাংক দুটি।

এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক এর আগে থেকেই এই প্রক্রিয়ায় ঋণ দিয়ে আসছিল, কিন্তু সেটা সীমিত পরিসরে। এই ধরনের ঋণের আকার গত ১০ বছরে বহুগুণ বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলো যখন পরিচালকদের আত্মীয়দের ঋণ দেয়, তখন ভয়াবহ ঝুঁকিতে পরে। কারণ, এই ঋণ অনুমোদন করার সময় ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না।

এই ঋণগ্রহীতারা সাধারণত ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা পান। এ ধরনের ঋণ দেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যেই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখতে হয় তাদের যে পরিমাণ সম্পদ ও দায় আছে সেই হিসাবে তারা ঋণ পায় কি না।'

তিনি বলেন, 'কোনো প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।'

এক্সিম ব্যাংক

এক্সিম ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আট হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা পারস্পরিক ঋণের হিসাবে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৮২ কোটি টাকা গেছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন তিনটি কোম্পানিতে, যার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)। এস আলম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।

এই পারস্পরিক ঋণের অংশ হিসেবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক নাসা গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে যে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৩৪ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজেই এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন নাসা গ্রুপের নামে। নাসা গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকেও ঋণ পেয়েছে, যেখানে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম চেয়ারম্যান।

এক্সিম ব্যাংক ইউনিটেক্স স্পিনিং এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৮০১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের ঋণের স্থিতি এখন ৬৫১ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের শেষে এক্সিম ব্যাংকে বেক্সিমকো এবং এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬১ কোটি টাকা। বেক্সিমকোর ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৬৩৭ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংক পাওয়ারপ্যাক মতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টকে দুই হাজার ৬৭১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রিক হক সিকদার ও তার ভাই রন হক সিকদারের মালিকানাধীন সিকদার গ্রুপের একটি সহযোগী সংস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জোরপূর্বক বহিষ্কার করার আগে এই দুই ভাই ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।

২০২৩ সালের শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে নাসা গ্রুপের বকেয়া ঋণ ছিল এক হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।

এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের কাছে এ ব্যাংকের প্রায় ২৫ কোটি শেয়ার রয়েছে অর্থাৎ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তার অবদান প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ব্যাংকটি থেকে সর্বোচ্চ ১২৫ কোটি টাকা (পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ) ঋণ পেতে পারতেন।

একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, 'এর ফলে ঋণ কয়েকজনের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় এবং এই ধরনের ঋণ ব্যাংকের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে—যদিও এই ঋণ এখনো খেলাপি দেখানো হয়নি।'

তিনি বলেন, 'যদি কোনো বড় ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়ে যায়, তাহলে ওই ব্যাংক দুর্বল হয়ে যাবে। এই ধরনের উদ্বেগের কারণে কোনো ভালো ব্যাংক সাধারণত এমন ঋণ অনুমোদন দেয় না।'

এক জায়গায় অধিক পরিমাণে যেন ঋণ যেতে না পারে এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একক ঋণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম ফাঁকি দিতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছে ব্যবসায়ীক গ্রুপগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী বলেন, 'ব্যাংকিং দিক থেকে কে ঋণের চূড়ান্ত সুবিধাভোগী তা খুঁজে বের করা কঠিন না। তাই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেই তাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।'

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ ওই পরিচালকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

উদাহরণস্বরূপ, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক ইনফিনিয়া গ্রুপের কয়েকটি সংস্থাকে এক হাজার ৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যার চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

বিনিময়ে ইসলামী ব্যাংক ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

এই পারস্পরিক ঋণ ছাড়াও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ১৯৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ ও এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম পরস্পর আত্মীয়।

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকে ইউনিটেক্স গ্রুপের প্রায় সাড়ে চার কোটি শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে কোম্পানির অবদান ৫০ কোটি টাকারও কম। এস আলমের বেশ কয়েকজন আত্মীয়েরও এই ব্যাংকে শেয়ার রয়েছে এবং ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তাদের সম্মিলিত অবদান প্রায় ২৩০ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক পারস্পরিকভাবে অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকদের চার হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

এ ছাড়া, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ও তার আত্মীয়রা ব্যাংকটিতে পরিশোধিত মূলধন দিয়েছেন ৩৫০ কোটি টাকা এবং এর সমপরিমাণ শেয়ার তাদের রয়েছে।

এস আলম গ্রুপ নামে ইসলামী ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়নি। তাই ব্যবসায়ীক গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।

অন্যান্য ব্যাংক

ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকেরও এমন পারস্পরিক ঋণ দেওয়ার ঘটনা রয়েছে প্রচুর।

উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল ব্যাংক বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে সাত হাজার ৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যেসব কোম্পানির মালিকরা অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালক। বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপকে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে।

বিনিময়ে সিকদার গ্রুপ আইএফআইসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে।

একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংক নাসা গ্রুপ ও সিকদার গ্রুপকে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বিনিময়ে বেক্সিমকো গ্রুপ এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডকে এক হাজার ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যৌথ উদ্যোগের এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মালিক বেক্সিমকো।

সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে আহমেদ শায়ান রহমানের কাছে ব্যাংকটির ৪ দশমিক ১১ শতাংশ বা সাত কোটি ৫১ লাখ শেয়ার রয়েছে; যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এই ধরনের ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন গ্রুপের এমন পারস্পরিক ঋণ এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকার।

এস আলমের বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের কাছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার অর্থ ব্যাংকে তাদের বিনিয়োগ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ৫৭০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।

এসব ব্যাংকের সঙ্গে গত ১৫ জুন প্রথম যোগাযোগ করে দ্য ডেইলি স্টার এবং ১২ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে পুনরায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি বা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের চিফ অপারেটিং অফিসার জাফর আলম জানিয়েছেন, তারা ব্যাংকিং নিয়ম মেনেই সব ঋণ অনুমোদন দিয়েছেন এবং এস আলম গ্রুপসহ ঋণগ্রহীতারা বড় অংকের ঋণ পাওয়ার যোগ্য।

ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল মওলা জানান, তারা ১৯৯০ সাল থেকে নাসা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপে বিনিয়োগ করে আসছে এবং এই দুটি গ্রুপের লেনদেন খুবই ভালো।

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

1h ago