বগুড়া

কেজি ২ টাকা, বাজারের শোভা বাড়ালেও ক্রেতা মিলছে না ফুলকপির

চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো ফুলকপি। মহাস্থান বাজার থেকে তোলা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

শীতের বাহারি সব সবজি আর নানা পদের কপির ভিড়ে বঙ্গ-রসনায় ফুলকপির কদর যে আলাদা, তা নিয়ে তর্ক করার লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সবজির বাজার মহাস্থানগড়ে সেই ফুলকপিই এখন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা মণ দরে।

'শীতকে ডেকে আনা' এই ফুলকপি খুচরা বাজারে সাধারণত পিস হিসেবে বিক্রি হয়। তবে পাইকারির হিসাব আলাদা। সে হিসাবে মহাস্থানগড় বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি ফুলকপির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন দুই টাকা। এরপরেও অনেক সবজিচাষি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।

মৌসুমের শেষের দিকে এসে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাঙালির রসনাতৃপ্তির পাশাপাশি বাজার ও খেতের শোভা বাড়ানো শীতের এই 'সিগনেচার আইটেমটির' দাম পড়ে গেছে বলে ভাষ্য স্থানীয় চাষিদের।

চাষিরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিমণ ফুলকপির দাম ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। গত এক সপ্তাহে সেই দাম কমতে কমতে ১০০ টাকার নিচে এসে ঠেকেছে।

ফুলকপির আদি নিবাস ভূমধ্যসাগরের সাইপ্রাস দ্বীপ। ছবি: স্টার

শিবগঞ্জ উপজেলার বাদিয়াচড়া গ্রামের কৃষক মো. পটল ইসলাম আজ শনিবার ভোরে মহাস্থান বাজারে নয় মণ ফুলকপি নিয়ে এসেছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সবগুলো কপি তিনি বিক্রি করেন মাত্র ৮০০ টাকায়। এর ভেতর কিছু কপি ফেলেও দেন তিনি।

পটল বলেন, 'আজ কপি বিক্রির টাকা দিয়ে ভ্যানভাড়া শোধ করে আর কিছু থাকবে না।'

গাবতলী উপজেলার কৃষক আব্দুল বাসেদ বাজারে এনেছিলেন পাঁচ মণ কপি। এই প্রতিবেদকের সামনেই তিনি এক মণ কপি বিক্রি করলেন দেড়শ টাকায়।

শিবগঞ্জের আরেক চাষি নাজমুল ইসলাম জানালেন, প্রতি পিস কপি উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে পাঁচ টাকা। বিক্রি করতে গিয়ে এখন তার দাম পড়ছে দুই টাকারও কম।

ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। অবিক্রিত ফুলকপি গরুকে খেতে দিচ্ছেন চাষি। ছবি: স্টার

একই উপজেলার শঙ্কপুর গ্রামের কৃষক মিন্টু মোল্লার কাছ থেকে জানা গেল, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এক মাস আগে যারা কপি তুলে বিক্রি করেছেন তারা প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেছেন। এখন প্রতি বিঘায় ২০ হাজার টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে।

গাবতলী উপজেলার কৃষক রাজু মিয়ার পর্যবেক্ষণ, ফুলকপি উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সারের পেছনে। ডিলাররা সার মজুত করে দাম বাড়িয়ে দেয়। সেখানেই অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। কিন্তু ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

এদিকে আজ সকালে পুরো মহাস্থান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপির মতো শীতের অন্য সব সবজির দামও কমে এসেছে। মুলা বিক্রি হচ্ছে তিন টাকা কেজিতে। বাঁধাকপির দাম পড়ছে পাঁচ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ বিকোচ্ছে ২৮ টাকা কেজিতে।

মহাস্থান বাজারের 'মা-বাবার দোয়া সবজি ভাণ্ডারের' ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বললেন, দুই টাকায় ফুলকপি কিনে ঢাকায় পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ হচ্ছে ১০ টাকা।

১৮২২ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতবর্ষে আসে ফুলকপি। ছবি: স্টার

মহাস্থান বাজারের আড়ৎদার মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানালেন, 'ফুলকপি এখন বগুড়ার বাইরে তেমন একটা যাচ্ছে না। দেশের অন্য সব জায়গার কপি বাজারে চলে এসেছে। আর মহাস্থান বাজারেও প্রতিদিন ২০ ট্রাক ফুলকপি নামছে। ফলে দাম পড়ে গেছে।'

আপামর বাঙালির পছন্দের এই ফুলকপি কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের আদি সবজি নয়। ইতিহাস বলছে, এর আদি উৎস ভূমধ্যসাগরের সাইপ্রাস দ্বীপে। সেখানকার ফরাসি রাজন্যবর্গের প্রয়াসে ক্রমে এটা পশ্চিম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া ইতালির জেনোয়া অঞ্চলেও ফুলকপি ফলত। ফ্রান্সের চতুর্দশ লুইয়ের রাজত্বে এটি রাজপ্রাসাদের টেবিলে ঠাঁই পায়। পরে ১৮২২ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে ভারতবর্ষে আসে।

Comments

The Daily Star  | English
challenges for police to regain public trust

Cops want own commission with sweeping powers

Independent body to end politicisation, nepotism, corruption

15h ago