কোনো কিছুই নেই সাধ্যের মধ্যে

কারওয়ান বাজার
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসে হিমশিম খান ক্রেতারা। ছবি: সুমন আলী/স্টার

'বাজারে কোন জিনিসটার দাম নাগালের মধ্যে আছে সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। যারা বলেন জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে আছে তাদের মনে হয় বাজার থেকে কিছু কিনতে হয় না। বাড়িতে বসেই তারা সবকিছু পেয়ে যান।'

কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহানুর রহমান। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে।

বাজার থেকে কী কী কিনলেন জানতে চাইলে খানিকটা বিরক্তই হন শাহানুর। বাজারের ব্যাগটি এই প্রতিবেদকের সামনে মেলে ধরে বলেন, 'এই যে দেখেন কী কী কিনেছি।'

এ সময় তার ব্যাগে কিছু মুলা দেখতে পাওয়া যায়। আর কিছু কিনবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, '৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আরও কয়েকটা দোকান ঘুরে তারপর কিনব।'

শাহানুর রহমানের ভাষ্য, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি আরও অনেকের মতো তারও নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। যেহেতু তার আয় বাড়েনি, সেহেতু জিনিসপত্র কম কিনে, কম খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কারওয়ান বাজার
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শীতের সবজির দাম ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে। ছবি: সুমন আলী/স্টার

শাহানুর বলেন, 'কিছু জায়গা আছে যেখানে খরচ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। একটাই উপায় জিনিসপত্র কম কেনা। সেটাই করছি। আগে ১ কেজি বেগুন কিনলে এখন আধাকেজি কিনছি। আগে প্রতি সপ্তাহে গরুর মাংস খেতাম। এখন মাসে একবার খাচ্ছি। আগে দেশি মুরগি খেতাম, এখন ব্রয়লার খাচ্ছি। বেঁচে তো থাকতে হবে।'

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেও পণ্যমূল্য ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, 'কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।'

কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক অনেক। বাজারে সব ধরনের চালের দাম এখন বাড়তি। খোলা আটার দামও বেড়েছে কেজিতে ২-৫ টাকা। বড় দানার মসুর ডাল কিনতে কেজিতে বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৫-১০ টাকা। এ ছাড়া সব ধরনের ভোজ্যতেল পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এতে করে নিম্নবিত্তের মানুষ থেকে মধ্যম আয়ের পরিবার—সবার যেন হাত পুড়ছে বাজারে গিয়ে।

গতকাল সোমবার সকালে বাড্ডা থেকে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন বায়িংহাউজে কর্মরত রাফিয়া বেগম। তিনি কিনেছিলেন বেগুন, শিম, করলা ও মুলা।

রাফিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানকার চেয়ে আমাদের এলাকায় সব জিনিসের দাম ২০-৩০ টাকা বেশি। করলা কিনলাম ৬০ টাকা দিয়ে। বাড্ডায় কেজি ৮০ টাকা। বেগুন এখানে ৬০ টাকা, ওখানে ৮০ টাকা।'

রাফিয়াও বলেন, 'যে অবস্থা চলছে তাতে টিকে থাকাই মুশকিল। কোনো জিনিসের দাম নাগালের মধ্যে নেই। ছেলে-মেয়েদের আগের মতো আর খাওয়াতে পারি না। আগে যেখানে রিকশায় যেতামে, সেখানে এখন হয় হেঁটে যাই, না হয় বাসে।'

এরপর কারওয়ান বাজার এলাকায় এমন আরও অন্তত ৫ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তাদের সবার অভিজ্ঞতা, ভাষ্য মোটামুটি একইরকম।

এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে মানুষ যে কম কিনছেন, তার সত্যতা পাওয়া যায় বাজারের কয়েকজন দোকানীর সঙ্গে কথা বলে।

সবজি বিক্রেতা নুর বলেন, 'এখন আধাকেজির কাস্টমার বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। উপায়ও নাই মানুষের।'

আরেক সবজি বিক্রেতা রনি ইসলামের বক্তব্য, আগে তার দোকানে দৈনিক ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হতো। এখন ৫-৬ হাজার টাকার বেশি হয় না।'

কারওয়ান বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। করলার দামও ছিল একই রকম। এ ছাড়া পটল, শিম ও ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে এবং মূলা ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

একই দিনে আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকায়। পাশাপাশি লাউ ৬০-৭০ টাকা, প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গাজরের দাম ১৬০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা এবং শসা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

এর বাইরে প্রতি কেজি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা, লবণ ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়। সেইসঙ্গে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৬৫ টাকা, ময়দার দাম ছিল ৭০ টাকা।

আটা-ময়দা বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, 'মানুষ এখন কম কিনছেন, কম খাচ্ছেন। আগে আমি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার আটা-ময়দা বিক্রি করতাম। এখন দিনে ১৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয় না।'

Comments

The Daily Star  | English

Cybergangs breaking into NBR server at will

On May 20, 2024, Chattogram Custom House Deputy Commissioner Mohammad Zakaria was in Kolkata, India, where he had gone for treatment a week earlier.

17h ago