বিক্রি-চাহিদা কমেছে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি ব্যবসা

বন্যা, অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি, ব্যবসা, আকিজ সিরামিকস,
রাজধানীর শপিং সেন্টারগুলো আবারও চালু হয়েছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা আগের মতো বাড়েনি। গতকাল বৃহস্পতিবার শপিং সেন্টার ও মলগুলো এক প্রকার জনশূন্য ছবি। ছবি: প্রবীর দাস

দেশের বিভিন্ন অংশে আকস্মিক বন্যা, সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যবসায়িক কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে এখনো অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক কাজ করছে। ফলে তারা আগের মতো কেনাকাটা করছেন না।

তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

তারা বলেন, এই মুহূর্তে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, 'ব্যবসায়ীরা এখন কঠিন সময় পার করছেন। কারণ মাসব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, এরপর সাম্প্রতিক বন্যার কারণে বিক্রি ও চাহিদা কমে গেছে।'

তিনি বলেন, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে নির্মাণ সামগ্রীর বিক্রি কমে যায়। কারণ বর্ষাকালে ইস্পাতের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

'তবে বিভিন্ন কারণে প্রায় সব খাতের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।'

তিনি জানান, যেহেতু গ্রাহক ও ডিলারদের কাছ থেকে চাহিদা কমেছে। তাই বিএসআরএম পণ্যের মজুত এড়াতে উৎপাদন ইউনিট আংশিকভাবে চালু রেখেছে।

'ভোক্তাদের আস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত ও উন্নয়ন প্রকল্প পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত বিক্রি বাড়বে না,' মন্তব্য করেন তিনি।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, গত বছর থেকে দ্রুত বর্ধনশীল ভোগ্যপণ্য ও নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

তিনি বলেন, 'এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক অস্থিরতা, যা ব্যবসার প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো নয়।'

তার ভাষ্য, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোক্তারা অপ্রয়োজনীয় পণ্যের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী নন।'

রূপালী চৌধুরী বলেন, সব বহুজাতিক কোম্পানি একই পরিস্থিতির সম্মুখীন।

'রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সাম্প্রতিক সময়ে আকস্মিক বন্যার কারণে অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। এছাড়া মানুষ এখনো মানসিকভাবে সাম্প্রতিক অস্থিরতা থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি।'

তিনি বলেন, 'তাই ব্যবসা-বাণিজ্য একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের পরিচালক (রিটেইল) আরফানুল হক বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে তাদের আউটলেটগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে গেছে।

তিনি বলেন, 'বিক্রি কমে যাওয়ার একটি মৌলিক কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অন্তত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশে, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

'এরপর রাজনৈতকি অস্থিরতা ও আকস্মিক বন্যায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।'

তবে তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

তিনি বলেন, 'বর্ষা মৌসুমের কারণে চাহিদা কমে গেছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের মধ্যে এখনো আস্থা ফিরে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে আমরা উৎপাদন ইউনিটগুলো আংশিক চালু রেখেছি।'

'পরিস্থিতির ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকা ও গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার কারখানাগুলো তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে।

'এ অবস্থায় আমরা জ্বালানি নিশ্চিত করতে ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাচ্ছি, এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই মুহূর্তে চাহিদা কমলেও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেন না।'

এগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি, ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগের আগে তাদের কয়েকবার ভাবতে হবে।

আকিজ সিরামিকস লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি ক্রেতাদের অনুকূলে না থাকায় ব্যবসা এখনো সঠিক পথে আসেনি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো বেচাকেনা হয়নি। আবার আকস্মিক বন্যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

তবে দেড় মাসের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago