‘নির্বাচন ব্যবসায় আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে’

প্রতীকী ছবি

ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা, আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল এবং ব্যবসা-বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচিত সরকার জরুরি বলে মত দিয়েছেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা।

গত সোমবার আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পর ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে দেশে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

গত আগস্টের শুরুতে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের বিষয়ে এই ঘোষণা দেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের আগে কয়েকটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অবশ্যই শেষ করতে হবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, সুদের হার বাড়ানো ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে সম্প্রতি দেশের অর্থনীতি মন্দায় ভুগছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির আরেক সূচক মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও মন্দার দিকে।

অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ থেকে কমে আট দশমিক তিন শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি ৩৩ শতাংশ কমে ৫৮২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্তত জরুরি সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করাই ভালো। অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।'

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সময়সীমায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের সুযোগ আছে।

'ব্যবসায়ীরা ঘোষিত সময়সীমার সমালোচনা করছেন না। সবাই জানেন, এই উদ্যোগ তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নির্বাচিত সরকারের জন্য তা সহজ।'

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও একই মত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রবিষয়ক কার্যক্রম অবশ্যই নির্বাচিত সরকারের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।'

তবে সংস্কারে আরও সময় লাগলে নির্বাচন আয়োজনেও সময় লেগে যেতে পারে।

বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সংস্কার উপেক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি বলতে চাই: প্রথমে সংস্কার, তারপর নির্বাচন।'

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা চান অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুক।'

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আমিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে এবং তা খুবই বিচক্ষণ।'

তিনি মনে করেন, জনরায়ের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার খুবই প্রয়োজন।

'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়' জানিয়ে তিনি বলেন, 'জনগণ আশা করে অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে।'

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করা কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে ভালো ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে।'

নীতি, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের উন্নতিও আশা করা হচ্ছে।

'দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নীতি ব্যবসার আস্থা বাড়াবে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি এটি দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে। দেশে ইতিবাচক বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তুলতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।'

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে অনেক সংস্কার বাস্তবায়ন করা কঠিন।

তার ভাষ্য, 'উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করতে পারেন এবং দেখতে পারেন কীভাবে নির্বাচন হয়। পরে তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। দেশের অর্থনীতি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে ২০২৫ সাল কঠিন বছর হতে যাচ্ছে।'

'প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায় নাও হতে পারে। সরকার ব্যাংকে ঋণ নিতে হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও কম হতে পারে। ফলে ব্যাংকিং খাতে অর্থপ্রবাহ সংকুচিত হতে পারে। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট হতে পারে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর হবে। সংস্কারের ধারাবাহিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সংস্কার চলমান রাখবে এবং আন্তরিকভাবে তা বাস্তবায়ন করবে।'

আশা করা হচ্ছে, সংস্কার কার্যক্রমের স্থায়িত্ব ও নিশ্চয়তা নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা ঐকমত্যে আসবেন।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের উদ্যোগের পরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে।'

গণতান্ত্রিক উত্তরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। বলেন, 'সঠিক ভোটার তালিকাও গুরুত্বপূর্ণ।'

Comments

The Daily Star  | English
UN fact-finding report on July uprising

Awami League govt guilty of gross human rights violations: UN

Coordinated, calculated acts of violence, repression tantamount to crimes against humanity

3h ago