সবজি রপ্তানি ৬ বছরে সর্বনিম্ন

সবজি
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চ পরিবহণ খরচ ও দাম বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে সবজি রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ৬ বছরের মধ্যে কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় বাজারে ফল ও শাকসবজির এয়ার-শিপিং থেকে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় হয়েছিল ৩৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, রপ্তানি আয় কমেছে ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ফল, সবজি ও ফল রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, 'গত ৬ মাস ধরে এয়ারলাইন সংস্থাগুলো কার্গো ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়িয়েছে। গত ১ বছরে উড়োজাহাজে পরিবহনের ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।'

এ ছাড়া, চলতি বছরের আগস্টে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন খরচও বেড়েছে।

পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশের আমদানিকারকদের বাংলাদেশ থেকে সবজি নেওয়ার আগ্রহ কমে গেছে।

বর্তমানে তাদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে সবজি কিনছেন। কলকাতায় পণ্য পরিবহনের খরচ কম হওয়ায় রপ্তানিকারকরা এই রুটের মাধ্যমে সবজি রপ্তানি করছেন।

মোহাম্মদ মনসুর বলেন, 'আকাশপথে পোশাকের চালানের চাহিদা থাকায়, কার্গোতে জায়গা পেতে আমাদের বেশি ভাড়া দিতে হয়।'

মন্দার আশঙ্কা এবং ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস পণ্য মজুদের কারণে বাংলাদেশের সামগ্রিক রপ্তানি কমে আসছে। এ অবস্থায় কৃষিখাতের অন্যতম প্রধান পণ্য সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রেও মন্দা দেখা দিয়েছে।

সার্বিকভাবে চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবরে কৃষিপণ্য থেকে রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ কমেছে বলে ইপিবির তথ্যে উঠে এসেছে।

মনসুর বলেন, 'দেশে মার্কিন ডলারের দাম প্রবাসীদের পাওয়া দামের সমান হলে, আমরা প্রতিযোগিতায় আরও ভালো করতে এবং আয় বাড়াতে পারতাম।'

রপ্তানিকারক এবং প্রবাসীদের জন্য মার্কিন ডলারের জন্য একই দাম পেতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বর্তমানে রপ্তানিকারকরা প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা পান। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের দাম পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা।

ডলারের মূল্য কম পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিএফভিএপিইএ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর।

এদিকে রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধীনে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অভাবে সবজির শিপমেন্ট কমে যাচ্ছে এবং এতে কমে আসছে রপ্তানি আয়।

সবজি ও ফল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা পাচ্ছি না।'

ডিএইর প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন উইংয়ের পরিচালক সৈয়দ রফিকুল আমিন ডেইলি স্টারকে জানান, তারা সবজি বা ফল রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্রেসেবিলিটি বা গন্তব্য জানার মতো কমপ্লায়েন্সের নিশ্চয়তা চান।

'আমদানিকারকদের মধ্যে অনেকেই এ ধরনের কমপ্লায়েন্স চান,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমরা রপ্তানিকারকদের চালান ত্বরান্বিত করতে সহজ ও ঝামেলামুক্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

সবজির প্রধান মৌসুম শীতকাল। এ বছর ইতোমধ্যে শীতের সবজি চলে আসায় সামনের মাসগুলোতে রপ্তানি আয় বাড়বে বলে আশা করছেন সবজি ও ফল রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণভাবে জুলাই-অক্টোবর হচ্ছে রপ্তানির জন্য খারাপ সময়। এ সময়টা রপ্তানির জন্য গ্রীষ্মকালীন ও মৌসুমি সবজির সীমিত মজুদের ওপর নির্ভর করতে হয়।'

এছাড়া গ্রীষ্মকালে ইতালিতে উৎপাদিত সবজি ইউরোপের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সুতরাং, শীতকাল একটি ভাল সময়। এ সময় সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং দাম কমে যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza rescuers say Israeli forces kill 60, half near aid centres

Civil defence spokesman Mahmud Bassal told AFP that five people were killed while waiting for aid in the southern Gaza Strip and 26 others near a central area known as the Netzarim corridor, an Israeli-controlled strip of land that bisects the Palestinian territory

11m ago