দেশ থেকে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই এবং পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'সিআইবি ডাটাবেজে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর বাইরে উচ্চ আদালতের নির্দেশ বহাল আছে এমন ঋণ স্থিতির পরিমান ২১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। যা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আদায় করতে পারছে না।'

খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং খেলাপি গ্রাহক চিহ্নিত ও তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাগুলো তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এক ব্যাংকের খেলাপি অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।'

ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জামালপুর-১ আসনের সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রাক্কলন করে থাকে, যার যথাযথতা ওই সব প্রতিষ্ঠানও দাবি করে না।'

'ওই সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয় সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দেখা যায়। তবে, দেশ থেকে অর্থপাচারের মাত্রা বা পরিমাণ যাই হোক না কেন, পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

'বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে সচেষ্ট ও তৎপর আছে' উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,  'ইতোমধ্যে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে পাচারকৃত ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউই) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে সরবরাহ করে আসছে। বিদেশে যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পাচার বিষয়ক বেশ কিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন আছে। এছাড়া, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পাচার সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু মামলা চলমান আছে।'
 
মন্ত্রী জানান, বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের সাথে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করতে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন ২০১২ ও পারস্পরিক সহায়তা বিধিমালা ২০১৩ জারি করা হয়েছে। 

এ আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমানা আলীর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে  আছে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলো অনেক শক্তিশালী।'

তিনি জানান, শ্রীলংকার বেশিরভাগ বৈদেশিক ঋণ বাণিজ্যিক ও সার্বভৌম বন্ডে নেওয়া, যেগুলোর সুদহার বেশি ও ৫ বছরে সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। অনাদিকে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধকাল অনেক বেশি এবং স্বল্প সুদে নেওয়া। বাংলাদেশ সরকারের কোন সার্বভৌম বন্ড নেই।

মন্ত্রী আরও বলেন, 'বাংলাদেশে বর্তমান ঋণ পরিস্থিতি সহনশীল ও টেকসই মাত্রায় আছে এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে শ্রীলংকার মতো বড় কোন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

4h ago