জ্বালানি তেলের দাম লিটারে অন্তত ১০ টাকা বাড়তে পারে

ছবি: সংগৃহীত

ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০-৩০ টাকা বাড়াতে পারে সরকার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষ যখন তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আবারও বাড়বে পরিবহণ ব্যয়। এর প্রভাব সব নিত্যপণ্যের দামের ওপরও পড়বে।

জ্বালানি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা গত সোমবার পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের অস্থিতিশীলতার কারণে জুনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি ১৮ লাখ টাকা করে লোকসান করছে।

বিদ্যুৎ ভবনের বৈঠকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

জ্বালানি তেলের দাম ১০, ২০ অথবা ৩০ টাকা বাড়ানো হলে পরিবহন খরচ কত বাড়তে পারে, বৈঠকে এ সংশ্লিষ্ট একটি বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ফলে সরকার কত টাকা দাম বৃদ্ধি করেছিল, তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে।

ওই উপস্থাপন বলছে, যদি ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানো হয়, তাহলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্বল্প দূরত্বের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ২৩ পয়সা হবে। দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৮৯ পয়সা হবে। একইভাবে, ডিজেলের দাম ২০ ও ৩০ টাকা বাড়ানো হলে পরিবহণ খরচ প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১৬ পয়সা ও ২৪ পয়সা করে বাড়বে।

তবে, ভোক্তা অধিকার সংগঠনের মতে, পরিবহণ সংস্থাগুলো কখনোই সরকারের নির্ধারিত ভাড়া মানে না, ফলে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলা, বিপিসি, বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবহন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও ফিলিং স্টেশন মালিকরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি দ্য ডেইলি স্টারকে প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানান, জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য ঘোষণার আগে সরকার পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করতে চায়।

২০২১ সালের নভেম্বরে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন ব্যবসায়ীরা ৩ দিনের ধর্মঘট করে। ফলে সেসময় সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। সরকার বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়ানোর পর পরিবহন কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

বিপিসির হিসাবে, চলতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫৯ লিটার ধারণক্ষমতার ডিজেলের ব্যারেলের গড় মূল্য ছিল ১৭১ ডলার। এ ছাড়াও, ১ ব্যারেল অকটেন ও অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল যথাক্রমে ১৪৮ ও ১১৫ ডলার।

বিপিসির দাবি, প্রতি লিটার অকটেন ৮৯ টাকা ও ডিজেল ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় লোকসান হচ্ছে যথাক্রমে ৩৬ টাকা ও ৫৫ টাকা ১৫ পয়সা।

বিপিসি এখন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের করে ১ লিটার পেট্রোল পেতে ৯৬ টাকা ৮৭ পয়সা খরচ করলেও তা ৮৬ টাকায় বিক্রি করে।

বিপিসি বছরে ৬২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে, যার মধ্যে ৭২ শতাংশ ডিজেল, ৪ দশমিক ৮ শতাংশ অকটেন ও ৬ শতাংশ অপরিশোধিত তেল।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, 'বিপিসি বা জ্বালানি বিভাগের তেলের দাম নির্ধারণের কোনো এখতিয়ার নেই। কারণ বিপিসি নিজেই এখানে ব্যবসা করে। তাদের হিসাবনিকাশেও অনেক ধরনের চুরি ও গোঁজামিল রয়েছে।'

'আমরা এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির যথাযথ অডিটের দাবি জানিয়েছি', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আইন অমান্য করায় ক্যাব জ্বালানি বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের আইনগত অধিকার শুধু বিইআরসির আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টে ক্যাবের রিট আবেদন বিচারাধীন রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি মুনাফা করছে। যখন আপনি লাভ করেছেন, তখন দাম কমাননি। কিন্তু যখন আপনার লোকসান হচ্ছে, তখন আপনি দাম বাড়াতে চান। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
High Court

Fresh probe by home ministry needed: HC

The August 21, 2004 grenade attack case should be referred to the home ministry for a fresh probe by a proper and expert investigation agency to ensure justice, observed the High Court in its full verdict

40m ago