জুনে আরও বাড়তে পারে লোডশেডিং

ডলার সংকট, জ্বালানি ঘাটতি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৪৫ শতাংশ অব্যবহৃত থাকায় জুনে লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত দেশে দিনেরর বেলায় গড়ে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

পিজিসিবি সূত্র জানায়, ১৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে গতকাল সন্ধ্যায় দেশে উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। এ সময় তীব্র লোডশেডিং দেখা গেছে। বৃষ্টিপাত কয়েক সপ্তাহের জন্য সাময়িক স্বস্তি এনেছিল। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ (গতকাল) পর্যন্ত আমরা সহনীয় পর্যায়ে লোডশেডিং করেছি। কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি কেমন হবে তা আমরা জানি না। কয়লা সংকটের কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা বন্ধ হয়ে যাবে।'

সূত্র জানায়, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। তারা আরও জানান, দুটি বিতরণ কোম্পানিকে দিনেরবেলায় বেশির লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

রাজধানীবাসী দিনে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।

ফার্মগেটের এক দোকানদার জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে ৩ বার লোডশেডিং হয়েছে এবং প্রত্যেকবারই প্রায় ১ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না।

বাংলামোটরের বাসিন্দা ফেরদৌস হাসান প্রান্ত বলেন, রাতে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। সারারাত ঘুমাতে পারিনি। গরমের কারণে জেগে থাকতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, 'সারারাত জেগে থাকার পর সকালে অফিসে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। বিদ্যুৎ না থাকায় সকালে বাসায় পানি ছিল না। গত ১০ দিন ধরে প্রতি রাতে ৩ থেকে ৪ বার বিদ্যুৎ চলে যায়।'

আদাবরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'গতকাল সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ৪ বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। গত ৩ দিন ধরে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে আমার এক বছরের বাচ্চাটা অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে।'

উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, 'আমরা সব জায়গায় সমানুপাতিক হারে লোডশেডিং করার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয় ও হাসপাতালগুলোর মতো কিছু এলাকায় লোডশেডিং করা সম্ভব নয়। আমাদের যদি প্রায় ২০০ মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি থাকে তাহলে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তবে ঘাটতি এখন তার চেয়ে অনেক বেশি।'

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী বলেন, 'চাহিদা ও উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান পার্থক্যেরে কারণে আমাদের দিনে অন্তত দু'বার লোডশেডিং করতে হয়।'

বিদ্যুৎ খাত এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে যা প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি। তবে তা অপর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে। কারণ ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যবহৃত রয়েছে।

পিজিসিবি সূত্র জানায়, ২৪ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৭ হাজার ১২২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৩ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে এক হাজার ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে।

কয়লাভিত্তিক পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গত কয়েকদিন ধরে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যার ফলে খুলনার বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।

দেশের ৫৫ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতির কারণে তারাও সব এলাকায় লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।

২৯ মে পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। এরপর রয়েছে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট ও বরিশাল অঞ্চল।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh at a historic crossroads: Dr Kamal Hossain

Eminent jurist Dr Kamal Hossain today said Bangladesh stands at a turning point of history following recent mass uprisings

1h ago