গাজীপুরের ‘গোলাপি লিচু’
ঘন সবুজ পাতা ঢেকে রেখেছে ঘন গোলাপি রঙের লিচু। গাছের ডালে থোকায় থোকায় দুলছে মধু ফল। কোথাও আবার গাছ থেকে নামানো হচ্ছে। বেপারীরা ৫০ ও ১০০ লিচুর আঁটি বাঁধছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের লিচু বাগানগুলোয় এখনকার দৃশ্য এমনই।
বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হওয়ায় শ্রীপুরে এমন দৃশ্য চলবে আরও এক মাস।
গত ২ বছর করোনা মহামারিতে লিচু বিক্রি কম হয়েছে। এবার ফলন বেশি হওয়ায় অন্তত গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে মনে করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
টেপিরবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলাম মৃধার দেশি জাতের লিচু গাছ আছে ১৫০টি, কদমী জাতের ৬০টি, বোম্বে জাতের ১০টি ও ভেরারী জাতের কয়েকটি।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বাণিজ্যিকভাবে কদমী ও বোম্বে জাতের লিচুর বাজার ভালো।
কেওয়া গ্রামের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশি ও উন্নত জাতের লিচুর পরিচর্যা একইরকম। গাছ থেকে পাতি বা দেশি জাতের লিচু প্রতিটি দেড় টাকা এবং উন্নত জাতের লিচু ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।'
দেশি বা পাতি লিচুর চেয়ে উন্নত জাতের লিচু চাষের প্রতি চাষিদের আহবান জানান তিনি।
লিচুর বেপারী আসাদুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লিচু বাগানের শ্রমিকের মজুরি আগের মতোই আছে। মহামারির সময়ের তুলনায় এবার লিচু বেচাকেনা ভালো।'
তিনি জানান, গত ২ বছর বাগান কিনলেও লিচু বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ অন্য বছরের চেয়ে বেশি।
ব্যবসায়ী আজিজুল হক জানান, তিনি ৩ লাখ টাকায় আড়াই লাখ লিচু কিনেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় লিচুর দাম বাজারে কিছুটা কম।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় রাজধানীর বাজারে লিচুর চাহিদা কম বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনার কারণে গত ২ বছরে ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এ বছর লিচু বিক্রি করে অন্তত ১ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।'
তিনি প্রায় ১৩ লাখ লিচু কিনেছেন। তার বাগানে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বৃষ্টির হয়েছে বলে সেচ না লাগায় এবার খরচ কমেছে বলেও জানান তিনি।
চাষি এনামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে অনেক লিচু ঝরেও গেছে।'
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরে দেড় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর আবাদ হয়। মোট আবাদের প্রায় অর্ধেক হয় শ্রীপুরে।
শ্রীপুরের উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস ডেইলি স্টারকে জানান, এবার শ্রীপুরে ৭৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে।
এর মধ্যে দেশি বা পাতি (চায়না-৩) ৫০ হেক্টর, কদমী ৪০ হেক্টর, বোম্বে ১৫৫ হেক্টর, ভেরারী ১৫ হেক্টর ও বাকিগুলো দেশি জাতের লিচু।
Comments