দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা

গ্রেপ্তার ২ শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

university_teachers_network.jpg
ছবি: সংগৃহীত

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনরত ২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানায়।

এতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মারফত আমরা জেনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত ২ শিক্ষার্থী আলভী মাহমুদ ও মোহাম্মদ সানিকে পরের দিনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার জন্য শাহবাগ থানায় ডেকে নিয়ে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া রাতভর আটক রাখা হয় এবং পরেরদিন মিথ্যা মামলায় আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়।  এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি ইতোপূর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ বাহিনী দফায় দফায় হুমকি ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

'সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালায়। এ ঘটনায় আহত হয় প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। হামলার পরবর্তীতে ২৪ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে এবং ২৯ জানুয়ারি শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি আন্দোলনের ২ সংগঠক আলভী মাহমুদ ও মোহাম্মদ সানিকে শাহবাগ থানা থেকে সেকেন্ড টাইম আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনার জন্য ডাকলে তারা দুপুর ১টায় শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়। এরপর থেকেই ২ শিক্ষার্থীকে থানায় আটক রাখা হয়। কোনো কারণ উল্লেখ না করেই রাতভর আটক রেখে পরের দিন একটি মিথ্যা মামলায় তাদের নাম জড়িয়ে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়', বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা জেনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছি যে, গত বছর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের একটি সমাবেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনার পরবর্তীতে ৮ অক্টোবর ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ১৪০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের ২ নেতার করা মামলার এই পুরান ঘটনার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী আলভী মাহমুদ ও মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সানিকে এই মামলায় যুক্ত করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, চুরি ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। কার্যত এই ২ শিক্ষার্থীর কেউ সেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। এমনকি তারা ছাত্র অধিকার পরিষদ কিংবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত নয়। তারা বামপন্থি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রধান সংগঠক। ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে ঢাবি ও পুলিশ প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ জানানোয় এই ২ শিক্ষার্থীকে ভয়াবহ আইনি নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। যা বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনের সীমাহীন ক্ষমতার চর্চা, ভিন্নমত দমন ও নাগরিকের মানবাধিকার হরণের আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

সবশেষে সেখানে বলা হয়েছে, আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বন্ধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের শিক্ষা সংকোচন ও বেসরকারিকরণের নীতি স্পষ্ট। এর বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলন করলে তা দমনে প্রশাসন যে চূড়ান্ত অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তা বস্তুতই রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। প্রতিবাদের ভাষাকে দমনের জন্য চলমান হামলা-মামলার সংস্কৃতি নাগরিক অধিকার পরিপন্থি। এর বিরুদ্ধে জনগণের বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে৷ অনতিবিলম্বে আলভী মাহমুদ ও মোহাম্মদ সানির বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২ জনকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

বিবৃতিতে সই করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাবি অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের এক্সপেরিমেন্টাল হিউম্যানটিজ বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর ফাহমিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা    বিভাগের প্রভাষক প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল এডুকেশন বিভাগের প্রভাষক নির্ণয় ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মিম আরাফাত মানব, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরাফাত রহমান, বিইউপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়াহ তাবাসসুম সাদিয়া, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম যোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরা শরমিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, জাবির দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ, ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান    , ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল রানা।

Comments

The Daily Star  | English
Jewellery shops VAT evasion in Bangladesh

80% of jewellers remain outside VAT net

Around 32,000 jewellery shops in the country are operating without value-added tax (VAT) registration, apparently evading the indirect tax paid by their consumers, according to the National Board of Revenue (NBR).

13h ago