জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

২০ বিঘা জমির গাছ কেটে ৩ একাডেমিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০ বিঘা জমির গাছ কেটে ৩টি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাবি ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণের স্থান। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০ বিঘা জমির গাছ কেটে ৩টি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়।

২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পর্ষদের বিশেষ সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানার পেছনে ব্যবসায় প্রশাসনসহ আরও দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ২০ বিঘা জমি বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে।

সেখানে ছায়াঘেরা বৃক্ষরাজির মধ্যে এসব ভবন নির্মাণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

তারা বলছেন, ভবনের জন্য নির্ধারিত জায়গাটিতে গাছের ঘনত্ব বেশি এবং সেখানে পশু-পাখির অবাধ বিচরণ। সেখানে ভবন নির্মাণ করতে অনেক গাছ কাটতে হবে, ধ্বংস হবে ওই জায়গার প্রাণীদের আবাসস্থল।

একাডেমিক ভবন নির্মিত হলে এসব গাছ কাটা পড়বে। ছবি: অরিত্র সাত্তার

ভবন নির্মাণ করতে কতগুলো গাছ কাটতে হবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের প্রিন্সিপাল এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার মো. আব্দুর শরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেখানে ঠিক কতগুলো গাছ আছে, তা আমাদের গণনায় নেই। ভবন নির্মাণ হলে কত গাছ কাটা পড়বে, সে বিষয়েও কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি।'

এ বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন তো নির্মাণকাজের অনুমোদনও দেওয়া হয়ে গেছে। আমরা গাছ রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। যত গাছ কাটা পড়বে, তার চেয়ে বেশি লাগানো হবে।'

শিক্ষার্থীরা জানান, একের পর এক গাছ কেটে নতুন নতুন ভবন তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে, কেন্দ্রীয় মাঠ থেকে মীর মশাররফ হোসেন হলে যাওয়ার রাস্তা থেকে সারি সারি গাছ কেটে ফেলা হয়।

এদিকে একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে গাছ কাটার প্রতিবাদ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটা লে-আউটকে "রিভাইজড মাস্টারপ্ল্যান" বলে চালানোর চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টা এমন যে, অনেক টাকা এসেছে, সেগুলো খরচ করতে হবে। কোথাও ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করলে, প্রশাসন জায়গা পছন্দ করে দিতে বলে।'

তিনি বলেন, 'গাছ কেটে যেখানে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে আমরা এর বিরোধিতা করছি। তিনটি ভবনের জন্য সেখানে ২০ বিঘা জঙ্গল কাটতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।'

গাছ কেটে ভবন নির্মাণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, মন্তব্য করে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে অংশীজনের মতামত না নিয়ে একের পর এক ভবন তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, 'আইবিএ ভবনের জন্য যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে গাছের ঘনত্ব বেশি। পাশাপাশি পশু-পাখির বিচরণও অনেক। কিন্তু প্রশাসন এই জায়গাটা উজাড় করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। ভবন তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকছে না।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিপূর্ণ মাস্টারপ্ল্যান নেই বলে জানান পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা জরুরি। যেটাকে মাস্টারপ্ল্যান বলে দাবি করা হচ্ছে, তা কোনো মাস্টারপ্ল্যানই না। একটা লে-আউট প্ল্যান করার চেষ্টা করা হয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যত্রতত্র জমি বরাদ্দ দিয়ে ভবন নির্মাণ সঠিক চর্চা হতে পারে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরূপ। পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সেভাবে ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিষদের সদস্যসচিব মো. নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিন্ডিকেট ভবন নির্মাণের জায়গা অনুমোদন দিয়েছে।'

মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের একটি রিভাইজড মাস্টারপ্ল্যান আছে। আর মাস্টারপ্ল্যান তো সময়োপযোগী করতে হয়, পরিবর্তন করা যায়।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়ার পরও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Comments