নতুন চাকরি: যা করবেন, যা করবেন না
প্রথম চাকরির শুরুতে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, কখন কি ভুল করে ফেললাম? কার কাছ থেকে শিখব? চাকরির প্রথম বছরেই এমন হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
এ যুগের প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে খেই হারিয়ে ফেলা খুবই স্বাভাবিক। তবে শুরু থেকে কিছু নীতি মেনে চললে পুরো বিষয়টি সার্বিকভাবে সহজ হয়ে ওঠে। তাই যারা নতুন চাকরিতে ঢুকে কাজ শুরু করতে চলেছেন, তাদের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে এমন কিছু টিপস যা আপনার চাকরিজীবন কে করবে আরও সহজ এবং মসৃণ।
প্রশ্ন করতে একেবারেই ভয় পাবেন না
নতুন কোম্পানি, নতুন বস, নতুন সব সহকর্মী। চাকরির শুরুতে সবারই এমন এক নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। একেক অফিসের রীতিনীতি একেক রকম। নতুন কর্মী হিসেবে সব কিছু নিমিষেই জেনে যাওয়া হয়তো আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। এসব ক্ষেত্রে প্রশ্ন করার বিষয়টিকে একেবারেই ভয় পাওয়া যাবে না। নতুন কর্মক্ষেত্রের সব বিভ্রান্তি দুর করতে প্রশ্ন করার কোনো বিকল্প নেই। আপনার ওপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব যদি আপনি বুঝতে না পারেন, তবে তা না বুঝে করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এড়াতে অভিজ্ঞরা প্রশ্ন করার ওপর বিশেষ জোর দেন।
একটি শীর্ষ আর্থিক হিসাবরক্ষণ সেবা সংস্থার বিশ্লেষক মাহিন আবরার রহমান বিশ্বাস করেন, প্রশ্ন করা আপনাকে ভালো ফলাফল এনে দিতে এবং কর্মক্ষেত্রে নিজের একটি ভালো ভাবমূর্তি তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। প্রয়োজনে প্রশ্ন করা সবসময়ই বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে বিবেচিত।
নিশ্চিত হয়ে কাজ করবেন
ধরুন আপনাকে একটি নির্ধারিত কাজের জন্য অফিস থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হুট করে আপনার ডেস্কে বস এসে উপস্থিত হলেন, আর আপনি কিছু বিষয় বেমালুম ভুলে গেলেন। তখন কি করনীয়? অফিসে এমন দৃশ্য নতুন কিছু নয়। কাজের শতভাগ বৃত্তান্ত মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে এই অসম্ভব কে সম্ভব করা যায় আবারও নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে।
নিজের কাজ ভালো করে বোঝার জন্য এবং ঠিক মতো শেষ করার জন্য বারবার যোগাযোগ করা এবং কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি যার অধীনে চাকরি করছেন, অর্থাৎ, আপনার বসের কাছ থেকে আবারও কাজের পরিধি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে পুরো কাজ আবারও বুঝে নিতে হবে। অফিসে কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অসংগতি এড়ানোর জন্য প্রতিটি কাজই নিশ্চিত হয়ে শুরু করা উচিৎ। অফিসে সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ পরিষ্কার থাকলে কাজ দ্রুততার সঙ্গে আগাতে বাধ্য।
সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিন
সামাজিক কর্মকাণ্ড অফিস সংস্কৃতির একটি সাধারণ অংশ, তা সে হোক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মিলন মেলা বা সাপ্তাহিক ছুটির দিন কোনো সহকর্মীর বাসায় সম্মিলিত আড্ডা। আপনি যদি অফিসে নতুন হন তবে এই সামাজিক কাজগুলোতে অংশ নিয়ে আপনি সহকর্মীদের সঙ্গে আরও সহজ হতে পারবেন ও তাদের সান্নিধ্যে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারবেন। নিজের যোগাযোগের আওতা বাড়ানোর মোক্ষম সুযোগ এই সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো।
একটি শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ মানবসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা প্রায়ই মাসিক বা বার্ষিক সামাজিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে থাকি, যেমন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অথবা ডায়েট চ্যালেঞ্জ। এই কার্যক্রমগুলো সবাইকে একত্রিত করার জন্য আয়োজন করা হয় যাতে সবাই একসঙ্গে, একই উদ্যমে কাজ করতে পারেন।'
নিজেকে দুর্বল মনে করবেন না
একজন নতুন কর্মচারী হিসেবে আপনি সব জানবেন এমনটা নাও হতে পারে। নতুন কাজে আপনার জ্ঞান এবং কাজের অসম্পূর্ণতা প্রকাশ পেতে পারে। এমন অনেক কিছু থাকবে যা আপনি জানবেন না। হতে পারে সেটা অফিসের কোনো অলিখিত নিয়ম অথবা কোনো শব্দ বা আইনের সংজ্ঞা। একেক অফিসের নিয়ম একেক রকম। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞান কাজে নাও লাগতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে কোনো কাজে গাফিলতি প্রকাশ পেলেই নিজেকে দুর্বল ভাববেন না, মনে রাখবেন মেধা ঘাটতি পরিশ্রম দিয়ে পুষিয়ে দেয়া যায়। তাই যথাযথ পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের কাজকে উন্নত করতে থাকুন। নিজেকে দুর্বল মনে করে কাজ না করা কখনই কোনো সমাধান হতে পারে না। এক্ষেত্রে সাজিদা সাইয়েদুল সুরমা যোগ করেন, " কর্মক্ষেত্রে নিজের মতামত প্রকাশ করলে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলে কাজের মান এবং নিজের অভিজ্ঞতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।"
নিজের পরামর্শদাতা নিজেই খুঁজে বের করুন
আজকাল অনেক অফিসেই নিয়োগপ্রাপ্ত পরামর্শদাতা থাকেন। তারা নিয়মিত বিভিন্ন অধিবেশনের মাধ্যমে অফিস বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে আপনার অফিসের পরিস্থিতি এরকম নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার নিজ থেকেই নিজের মেন্টর বা 'গুরু' খুঁজে নিতে হবে। একজন আদর্শ পরামর্শদাতা হবেন তিনিই, যিনি নিজ কর্মক্ষেত্রে সুপরিচিত এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন। যাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন, ভরসা করতে পারবেন এমন কাউকে গুরু হিসেবে নির্বাচন করুন। গুরুকে হতে হবে এমন একজন মানুষ, যার সাহায্য এবং পরামর্শ আপনাকে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এবং কর্মক্ষেত্রে আরও ক্ষমতাবান করে তুলবে।
সব সময় বাস্তবসম্মত চিন্তা করুন
আপনার কর্মক্ষেত্র, বেতন এবং অফিস সংস্কৃতি সব বিবেচনা করে বাস্তবসম্মত চিন্তা করা উচিত। আশা-প্রত্যাশাও বাস্তবসম্মত রাখা উচিত। অবাস্তব আশা আপনার কর্মক্ষেত্রকে অসহনীয় করে তুলতে পারে। কোনো সুন্দর কাজের অভিজ্ঞতাকে নষ্ট করে দিতে পারে এ ধরনের অবাস্তব চাহিদা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাকরিতে নিয়োগের শর্তে বোনাস সহ ছুটির উল্লেখ নেই, কিন্তু তারপরও যদি অন্য সবার বোনাস পাওয়া দেখে আপনি মন খারাপ করেন বা অসন্তুষ্ট হন, তবে এই ঘটনাগুলো আপনার কাজের অভিজ্ঞতার অবনতি ঘটায়। এছাড়াও, অনেক সময় নতুন কর্মীদের ওপর বাড়তি কাজের চাপ এসে পড়ে। তারাও নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছে থেকে বাস্তবতা বিবেচনা না করেই কাজগুলো নিয়ে নেয়। পরে তাল সামলাতে না পেরে ঝামেলায় পড়ে যান। বিশেষজ্ঞরা এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে বলেছেন।
সর্বোপরি, নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে বিবেচনায় রেখে কাজ করুন। দীর্ঘমেয়াদে যে কাজের চাপ আপনি নিতে পারবেন না, সে কাজে না জড়ানোই ভালো, আবার একইসঙ্গে, অনেক ছোট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলেও আপনার ক্যারিয়ারে উন্নতি আসবে না। এ ২ বিষয়ের মাঝে সমন্বয় করতে পারলেই নতুন চাকরিতে সাফল্য আসবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন আদনান তূর্য
Comments