প্রাচীন উল্কাপিণ্ডে পানির উৎস অনুসন্ধান

উইঞ্চকম্ব উল্কাপিণ্ড। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
উইঞ্চকম্ব উল্কাপিণ্ড। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

কার্বনসমৃদ্ধ একটি উল্কাপিণ্ড ২ বছর আগে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে। এতে পাওয়া যায় পানি ও আরও কিছু উপাদান। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে পানি কীভাবে এলো--তা জানা যাবে এই উল্কা থেকে।

উল্কাটি পরিচিত 'উইঞ্চকম্ব উল্কা' নামে। ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে প্রায় অক্ষত অবস্থায় যুক্তরাজ্যের গ্লোসেস্টারশায়ারে এটি পতিত হয় । এই উল্কাপিণ্ডের ছবি নিয়ে ও রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে এর চমকপ্রদ রূপ দেখতে পান গবেষকরা। আজ থেকে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর আগেকার সৌরজগতের সঙ্গে এর গঠনগত মিল পাওয়া যায়।

পৃথিবীতে পতনের পরপরই একে সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু হয়। ফলে পৃথিবীর কোনো উপাদান এর বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে পারেনি।

এটি খুবই দুষ্প্রাপ্য এক নমুনা, কেননা এখানে কার্বনের পরিমাণ শতকরা ২ ভাগ। যুক্তরাজ্যে এরকম উল্কা পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। উল্কায় খনিজ উপাদান আকারে ১১ শতাংশের মতো পানি পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে, সৌরজগৎ সৃষ্টির সময় পাথরের সঙ্গে তরলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় গ্রহাণুপুঞ্জে তৈরি হয়েছিলো এই উল্কা।

বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, এই উল্কায় খুঁজে পাওয়া হাইড্রোজেন আইসোটোপের সঙ্গে মিল রয়েছে পৃথিবীতে থাকা পানির হাইড্রোজেনের। উল্কায় পাওয়া গেছে অ্যামাইনো এসিড, যেটি প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রাণের উৎপত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। অবিকৃত রয়ে যাওয়া এই উল্কায় থাকা কার্বন সাগরের উৎপত্তি ও পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত।

যুক্তরাজ্যের ফায়ারবল অ্যালায়েন্সের নেয়া ভিডিওচিত্র ও রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, উল্কাটি বৃহস্পতি গ্রহের কাছের গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে ছুটে যায় পৃথিবীর দিকে। পৃথিবীতে এসে আঘাত হানতে এর সময় লেগেছে ১০ লাখ বছরেরও বেশি সময়। এটি প্রাক-বায়ুমণ্ডলীয় কক্ষপথে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরেছে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, উইঞ্চকম্ব মিউজিয়াম ও চেলটেনহামের উইলসন আর্ট গ্যালারিতে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন উল্কাপিণ্ডটির নমুনার অংশবিশেষ। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, উইঞ্চকম্ব মিউজিয়াম ও চেলটেনহামের উইলসন আর্ট গ্যালারিতে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন উল্কাপিণ্ডটির নমুনার অংশবিশেষ। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত পৃথিবীতে যেসব ধূমকেতু এসে থাকে, সেগুলোর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশের ক্ষেত্রে এরকম প্রবণতা দেখা যায়।

গবেষকরা এখনো এই উল্কা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কেননা এখান থেকে সৌরজগতের আরো রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে।

পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে, সেটাই বিজ্ঞানীদের কাছে বড় প্রশ্ন। ধর্মগ্রন্থ ছাড়া এ বিষয়ে এখনো তেমন কোনো সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ল্যুক ডালির মতে, 'এই ধূমকেতুর (ও উল্কার) গুরুত্ব আছে, কারণ এর থেকে জানা যেতে পারে পৃথিবীতে পানি এলো কোথা থেকে। বলাই বাহুল্য, পানি থেকেই এসেছে প্রাণ।'

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের কিউরেটর ড. নাতাশা আলমেইদার মতে, 'খুব দ্রুত উদ্ধার করে যত্নের সঙ্গে উল্কাটিকে নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গোটা পৃথিবীতে এমন বিশুদ্ধ ও অবিকৃত উল্কাপিণ্ড খুব কমই আছে।'

যুক্তরাজ্যের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, উইঞ্চকম্ব মিউজিয়াম ও চেলটেনহামের উইলসন আর্ট গ্যালারিতে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন উল্কাপিণ্ডটির নমুনার অংশবিশেষ।

তথ্যসূত্র: রিপলিস, বিবিসি

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English
Yunus gives election preparation deadline

Complete polls preparations by December: Yunus

Asks to review if those who served as polling officers in past three elections shall not be assigned the same roles again

1h ago