থাম্বস-আপ ইমোজি দিয়ে ৬১ হাজার ডলার জরিমানা গুনলেন কৃষক

থাম্বস-আপ ইমোজি দিয়ে ৬১ হাজার ডলার জরিমানা গুনলেন কৃষক
ছবি: সংগৃহীত

ভবিষ্যতে ইন্টারনেটে থাম্বস আপ ইমোজি ব্যবহার করার সময় আপনাকে হয়তো বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হতে পারে, কারণ এটি আপনার ডিজিটাল স্বাক্ষর হিসেবে গণ্য হতে পারে!

মেসেজের মাধ্যমে পাওয়া একটি চুক্তিপত্রে থাম্বস আপ ইমোজি ব্যবহার করার কারণে কানাডার এক কৃষককে বিশাল অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।

ক্রিস অ্যাকটার নামের ওই কৃষকের দাবি, তিনি চুক্তিপত্রের প্রাপ্তিস্বীকার করে ওই থাম্বস আপ ইমোজি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আদালতের বিচারক রায় দিয়েছেন, ওই থাম্বস আপের অর্থ হচ্ছে তিনি চুক্তিপত্রটিতে রাজি হয়েছেন বা সম্মতি দিয়েছেন।

চুক্তি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ওই কৃষককে এখন ৬১ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কেন্ট মিকেলবোরো নামের একজন ক্রেতা ২০২১ সালে ক্রিসের কাছ থেকে ৮৬ টন শস্য কিনতে চেয়েছিলেন। এজন্যই একটি ক্রয়ের চুক্তিপত্র তিনি ক্রিসকে মেসেজের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। ক্রিস সেটি পেয়ে থাম্বস আপ ইমোজি দিয়েছেন এই অর্থে যে তিনি চুক্তিপত্রটি পেয়েছেন। কিন্তু ওই চুক্তিপত্র অনুসারে পণ্য সরবরাহ করেননি ক্রিস। ফলে মিকেলবোরো আদালতের শরণাপন্ন হন। 

মিকেলবোরো বলেছেন, তিনি ফোনেও ক্রিসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে জানিয়েছেন সেই বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যেই তিনি ওই শস্য কিনতে চান।

তিনি এরপর ক্রিসকে চুক্তির একটি নমুনা পাঠান এবং অনুরোধ করেন 'তিনি (ক্রিস) যাতে চুক্তিটি নিশ্চিত করেন'।

ক্রিস ওই চুক্তিটি পাওয়ার পর থাস্বস আপ ইমোজি দেন, কিন্তু চুক্তিতে উল্লেখিত সময় অনুসারে আর পণ্যটি সরবরাহ করেননি।

মিকেলবোরো বলেছেন, তার সঙ্গে ক্রিসের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। এর আগেও ক্রিস টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে এ ধরনের চুক্তি নিশ্চিত করেছেন। ফলে এবারও থাম্বস আপ ইমোজি পেয়ে তিনি বিশ্বাস করেছেন যে ক্রিস চুক্তিতে রাজি হয়েছেন।

কিন্তু আদালতে ক্রিস জানিয়েছেন, থাম্বস আপ ইমোজি দিয়ে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন 'তিনি চুক্তিপত্রটি পেয়েছেন। চুক্তিতে তিনি রাজি হয়েছেন, ইমোজির মাধ্যমে এমন কোনো নিশ্চয়তা তিনি দেননি।'

গত মাসে দেওয়া এই মামলার রায়ে আদালত মিকেলবোরোর পক্ষাবলম্বন করেছেন।

বিচারক টিমোথি কিন জানিয়েছেন তিনি ডিকশনারি.কম থেকে এই ইমোজির সংজ্ঞা জেনেছেন, যেখানে বলা হয়েছে এটি ' ডিজিটাল যোগাযোগে সম্মতি, অনুমোদন বা উৎসাহ প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়'।

বিচারক তার রায়ে লিখেন, 'আমি নিশ্চিত নই যে এটি কতটা কর্তৃত্বপূর্ণ, তবে এটি আমার দৈনন্দিন ব্যবহার থেকেও এর এমন অর্থই পেয়েছি, যদিও আমি প্রযুক্তি দুনিয়ায় দেরিতে প্রবেশ করা মানুষ'।

তিনি আরও যোগ করেছেন যে কারো পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য স্বাক্ষর যথার্থ। তবে কোনো চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ইমোজির মতো আধুনিক পদ্ধতিগুলি কেউ ব্যবহার করতে পারেন এবং একটি ইমোজি ডিজিটাল স্বাক্ষর হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিচারপতি কিন লিখেছেন, 'এই আদালত স্বীকার করছে যে থাম্বস আপ ইমোজি কোনো নথিতে 'স্বাক্ষর' করার একটি অপ্রচলিত উপায়।'

তিনি বলেন, একটি স্বাক্ষরের মূলত দুটি উদ্দেশ্য থাকে। এক- স্বাক্ষরটি যিনি দিয়েছেন, তার পরিচয় শনাক্ত করা (এক্ষেত্রে ক্রিসের ফোন থেকে ইমোজিটি দেওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত করা গেছে) ও চুক্তির গ্রহণযোগ্যতা জানানো। এই মামলায় ইমোজির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই সাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচারক।

সূত্র: বিবিসি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English
Polytechnic students protest Bangladesh 2025

Polytechnic students issue 48-hr ultimatum over six-point demand

Threaten a long march to Dhaka if govt doesn't respond to demands

3h ago