গুগলে দক্ষতা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কর্মীদের উদ্বেগ

গুগলের দক্ষতা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে কর্মীদের উদ্বেগ
ছবি: রয়টার্স

কর্মীদের কাজের মূল্যায়নে গত বছরের শেষ দিকে নতুন একটি পদ্ধতি চালু করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। যেটি গুগল রিভিউ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআরএডি) নামে পরিচিত। নতুন এই কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন ব্যবস্থার অধীনে কম স্কোর পাওয়া কর্মচারীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন চাকরি হারানোর।

গুগল জানিয়েছে, এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, জ্ঞানবৃদ্ধি, কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন, নিয়মিত কাজের ফিডব্যাক, সেই সঙ্গে অতিরিক্ত কাজের জন্য পুরষ্কার। 

নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি কর্মীদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করবে বলেও আশা গুগলের।

তবে প্রযুক্তি বিষয়ক অনলাইন এনালিটিক্স ইনসাইট জানিয়েছে, অনেকের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি। কেন না কোম্পানির অনেকেই বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে যাদের স্কোর নিচের দিকে থাকবে তাদের কোম্পানি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হতে পারে। 

তবে গুগলের দাবি, নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি কর্মীদের উন্নয়নের জন্যেই করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে প্রকাশিত বেশ কিছু গণমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই কর্মী মূল্যায়ন পদ্ধতিতে গুগলে কর্মরত ৬ শতাংশ কর্মী এই তালিকায় নিচের দিকে থাকবেন। এই ৬ শতাংশ সংখ্যাটি একেবারে কম নয়। গুগলের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দেশের মোট ১০ হাজার কর্মী এই ৬ শতাংশের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
 
এর আগে গুগলের কর্মীদের বছরে দুবার মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হতো। ওই পদ্ধতিকে নতুনভাবে সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই জিআরএডি পদ্ধতি। বর্তমান মূল্যায়নের পদ্ধতিতে প্রেশারের পাশাপাশি রয়েছে কাজ চলে যাওয়ার হুমকিও। 

একই সঙ্গে কর্মীদের অন্যান্য সমস্যাও হচ্ছে। যেমন, কর্মীদের কাজের মানের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানির ম্যানেজাররা তাদের বাড়তি বোনাস ও বিভিন্ন ইনসেনটিভগুলো কেটে নিতে শুরু করেছে। 

তবে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, যেসব কর্মী নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নিচের দিকে থাকবেন তাদের আবারও নিজেদের কাজে ভালো করার সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি কাজের উন্নয়নে সার্বিক সহায়তাও করবে গুগল। 

তবে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গে কোনো ইঙ্গিত দেননি সুন্দর পিচাই। 

এ বিষয়ে এনালিটিকস ইনসাইট জানিয়েছে, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে কর্মীরা নির্দিষ্ট কোনো কাজে মনোযোগী হবার পরিবর্তে নিজের কাজে বেশি মনযোগী হবেন। নিজেদের ব্যক্তিগত স্কোর বাড়ানোর জন্যই তারা বেশি চেষ্টা করবেন। এতে যদি কোনো অনৈতিক উপায় অবলম্বন করতে হয়, কর্মীরা হয়তো সেটাও করবেন। 

নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নিচের দিকের কর্মীদের দুটি পৃথক শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। ৬ শতাংশ কর্মীকে ২টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হবে। তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিটিকে ২ মাসের সময় দেওয়া হবে নিজেদের কাজের মানোন্নয়নের জন্য এবং ওই সময়ের মধ্যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মীদের ইস্তফা দিতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে তারা সঙ্গে কিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন।
 
একই সঙ্গে যাদের পারফর্মান্স দুর্বল তাদের একটি নির্দিষ্ট কোটার মধ্যে রাখা হবে। সেই দুর্বল পার্ফমান্সের সঠিক কোনো মানদণ্ড নেই। তবে কোটার বিষয়টিকে এখনো সেভাবে প্রকাশ করা হয়নি। 

তবে যারা শুধু কম কাজ করবে এই সমস্যা শুধু তাদের জন্য নয় বরং যারা তুলনামূলক ভালো কাজ করবেন তাদের জন্যেও রয়েছে। এই মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসারে মাত্র ২০ শতাংশ কর্মী টপ পারফরম্যান্সের মধ্যে থাকবেন। কর্মীদের মধ্যে এই সেরা ২০ শতাংশের মধ্যে যাওয়ার প্রতিযোগিতা থাকবে সার্বক্ষণিক। 

অর্থনৈতিক মন্দা এবং গত বছরের সংকট কাটানোর লক্ষ্যে অন্যান্য কোম্পানির মতো গুগলও নানা রকমের পদ্ধতি গ্রহণ করছে। নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই কর্মীদের পদোন্নতি সংক্রান্ত। 

তবে বেশ কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মীরা চাইলে এখনো বছরে দুবার পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সেই অনুযায়ী তারা পদোন্নতি পাবেন কি না সেটি নিশ্চিত না। 

তথ্যসূত্র: এনালিটিকসইনসাইটডটকম

গ্রন্থনা: আরউইন আহমেদ মিতু

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

5h ago