আইফোন ১৫ প্রো বনাম স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ: কোনটি কিনবেন

আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত
আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন ১৫ প্রো মডেলে এনেছে আগের মডেলগুলোর তুলনায় আরও নান্দনিক ডিজাইন, ডায়নামিক আইল্যান্ড ডিসপ্লেসহ নানা নতুনত্ব। অপর দিকে, স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ মডেলেও রয়েছে আকর্ষণীয় ডিসপ্লে, উদ্ভাবনী ডিজাইন এবং প্রশংসনীয় ব্যাটারি।

বাজারে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের দুটি ফোনই পাওয়া যাচ্ছে কাছাকাছি দামে। তাই ক্রেতা হিসেবে কোন ফোনটি কিনবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তার জন্য এই লেখায় থাকছে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

ডিজাইন

দুটি ফ্ল্যাগশিপ ফোনের মধ্যে তুলনা করার আগে ঠিক করতে হবে আপনি গতানুগতিক ডিজাইন চান নাকি ফোল্ডেবল ফোন চান। গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ এর ফোল্ডেবল ডিজাইনের জন্য এটি যেমন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে রাখা যায়, তেমনি সহজে বহনও করা যায়। অন্যদিকে, আইফোন ১৫ প্রোর সুবিধাজনক বহনযোগ্যতার পাশাপাশি এতে রয়েছে টাইটানিয়াম বডি। যা আগের স্টেইনলেস স্টিল মডেলগুলোর তুলনায় দেখতে আকর্ষণীয় এবং টেকসই।

জেড ফ্লিপ ফাইভ এর প্রাইমারি ডিসপ্লের প্লাস্টিক শিল্ডের আবরণে রয়েছে আলট্রা-থিন গ্লাস এবং বাইরের স্ক্রিনে ব্যবহার করা হয়েছে গরিলা গ্লাস ভিকটাস প্লাস। আর আইফোনের অন্য মডেলের মতো এবারও ডিসপ্লে সুরক্ষার জন্য থাকছে সিরামিক শিল্ড। এ ছাড়া জেড ফ্লিপ ফাইভ এ ব্যবহার করা হয়েছে পানি নিরোধক আইপিএক্স এইট রেটিং, অন্যদিকে আইফোন ১৫ প্রো তে থাকছে পানি ও ধূলিকণা প্রতিরোধক আইপি সিক্সটি এইট। অ্যাপলের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে ইউএসবি-সি পোর্টের ব্যবহার এবং প্রোগ্রামেবল অ্যাকশন বাটন।

তবে ফ্লেক্স মোডের বদৌলতে সমতল স্থানে ফোন রেখে হাতের স্পর্শ ছাড়াই ভিডিও দেখার সুবিধা যোগ করার মতো স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও স্যামসাং উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে জেড ফ্লিপ ফাইভ মডেলে।

ডিসপ্লে

আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত
আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত

যারা বড় স্ক্রিন পছন্দ করেন তাদের কাছে আইফোনের ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি ডিসপ্লের চেয়ে ফ্লিপ ফাইভ এর ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চির ডিসপ্লে ভালো লাগতে পারে। আইফোন ১৫ প্রো এর সুপার রেটিনা এক্সডিআর ওলেড ডিসপ্লেতে পাওয়া যাবে উজ্জ্বল রঙ এবং গাঢ় কনট্রাস্ট। অন্যদিকে, জেড ফ্লিপ ফাইভে রয়েছে ডায়নামিক অ্যামোলেড ডিসপ্লে। ফোনটিতে পাওয়া যাবে এইচডিআর টেন প্লাস এর উজ্জ্বলতা। দুই ফোনেই ব্যবহার করা হয়েছে এলটিপিএল প্যানেল, যা ব্যাটারি বাঁচাতে রিফ্রেশ রেট হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আউটডোরে আইফোনের ব্রাইটনেস দুই হাজার নিটস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। 

বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা

এ ক্ষেত্রে দুই ফোনে রয়েছে ভিন্নধর্মী ফিচার।

গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ এ থাকছে সাইড-এমবেডেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার আর আইফোন আগের মডেলের মতো ১৫ প্রো তেও করেছে ফেস আইডির ব্যবহার।

ফোন কেনার সময় এ বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে অত বড় ভূমিকা না রাখলেও, এটা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। অনেকেই আজকাল ফেসআইডির প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন, কারণ এতে ফিঙ্গারপ্রিন্টের চেয়ে কিছুটা হলেও সময় কম লাগে।

চিপসেট ও পারফরম্যান্স

আইফোন ১৫ প্রো তে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপলের এ সেভেনটিন বায়োনিক চিপ। এটির থ্রিএনএম প্রযুক্তি ফোনের কর্মক্ষমতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি করবে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। 

আর গ্যালাক্সিতে ব্যবহৃত কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এইট জেন টু তে রয়েছে ফোরএনএম প্রযুক্তি, যা আকর্ষণীয় হলেও পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে অ্যাপলের চিপ থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে।

র‍্যাম ও স্টোরেজ

স্টোরেজের ক্ষেত্রে ১২৮ জিবি থেকে ১ টিবি পর্যন্ত অপশন রয়েছে আইফোন ১৫ প্রো তে। আর জেড ফ্লিপ ফাইভ পাওয়া যাবে ২৫৬ জিবি এবং ৫১২ জিবি ভ্যারিয়েন্টে।

উভয় ফোনেই রয়েছে ৮ জিবি র‍্যাম। তবে উন্নত র‍্যাম ব্যবস্থাপনার জন্য বেশি মাল্টিটাস্কিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে আইফোনে।

ক্যামেরা

আইফোন ১৫ প্রো এর আকর্ষণীয় দিক হলো এটির ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি ক্যামেরা। যা দিয়ে ছবি তুললে পাওয়া যাবে চমৎকার ডিটেইল এবং নিখুঁত রঙ। এ ছাড়া একটি ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা এবং ১২ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স আইফোনের ছবি তোলার সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে৷

জেড ফ্লিপ ফাইভ ক্যামেরার ক্ষেত্রে ততটা উন্নত না হলেও এতে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেলের ডুয়াল ক্যামেরা এবং সেলফি অপটিমাইজড রিয়ার-ফেসিং ক্যামেরা সেটআপ।

ভিডিও কোয়ালিটির ক্ষেত্রেও দুই ফোনে ভিন্নতা রয়েছে। জেড ফ্লিপ ফাইভ ফোনে সিক্সটি এফপিএস রেঞ্জে ফোরকে রেকর্ডিং করা যায়। অন্যদিকে, এ সেভেনটিন চিপের আইফোন ১৫ প্রো উন্নত লো-লাইট ভিডিও এবং অ্যাকশন মোড অফার করে। প্রোরেস ভিডিও রেকর্ডিং অপশন এবং ক্যাপচার ওয়ানের উন্নত কর্মক্ষমতা যোগ হওয়ায় পেশাদারদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আইফোন।

ব্যাটারি

আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত
আইফোন ১৫ প্রো বনাম গ্যালাক্সি ফ্লিপ ফাইভ। ছবি: সংগৃহীত

৩২৭৪ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ছোট ব্যাটারি হলেও, আইফোন ১৫ প্রো তে রয়েছে অপটিমাইজড সফটওয়্যার এবং এ সেভেনটিন প্রো সিপিইউ এর দক্ষতা। যা গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ এর ৩৭০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়। তবে ফ্লিপ ফাইভ এর কভার স্ক্রিনের ব্যবহারে কম শক্তি ব্যয় হওয়ায় ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়াবে।

এ ছাড়াও স্যামসাংয়ের ফোনে রয়েছে ৪ দশমিক ৫ ওয়াটের রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচার,  যার ফলে ব্যবহারকারীরা সরাসরি ফোন থেকে ইয়ারবাডের মতো ডিভাইস চার্জ করতে পারবে।

অন্যান্য ফিচার

এয়ারড্রপ ফিচার, অ্যাপল ওয়াচ এবং এয়ারপডের মতো ডিভাইসের সাথে সংযোগের সুবিধা পাওয়া যায় অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে। আর উন্নত কাস্টমাইজেশন, স্প্লিট-স্ক্রিন মাল্টিটাস্কিং ছাড়াও নানা সুবিধা পাওয়া যায় অ্যান্ড্রয়েডে। সফটওয়্যার আপডেটের ক্ষেত্রে, অ্যাপলের সময়সীমা পাঁচ বছর হলেও স্যামসাং এ সুবিধা পাওয়া যাবে চার বছর।

আইফোন ১৫ প্রো এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ফাইভ উভয় ফোনেই রয়েছে অসংখ্য ফিচার, কোনটি কিনবেন সেটি নির্ভর করবে নিজস্ব পছন্দ এবং ব্র্যান্ডের আস্থার উপর।

এই লেখাটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুনঃ iPhone 15 Pro vs. Samsung Galaxy Z Flip 5: Which one should you pick?

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago