যেসব ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড থেকে পিছিয়ে আইফোন

ফোল্ডিং ফিচারের অভাব, লাইটনিং কানেক্টর ও নচের মতো একাধিক বিষয়ে আইফোন এখনো অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে
ফ্ল্যাগশিপ ফোনের ৬ সীমাবন্ধতা
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপল যখনই নতুন কোনো আইফোন বাজারে ছাড়ে, তখনই তারা সেটিতে সর্বকালের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে বলে দাবি করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের দাবিটি আসলে সত্য নয়।

ফোল্ডিং ফিচার বা ভাঁজ করা যায় এমন ফোনের অভাব, লাইটনিং কানেক্টর, নচের মতো একাধিক বিষয়ে আইফোন এখনো অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। 

চলুন দেখে নেওয়া যাক এরকম ৬টি দিক সম্পর্কে। যেখানে আইফোন এখনো অ্যান্ড্রয়েড থেকে অনেক পিছিয়ে।

নচ এবং ডাইনামিক আইল্যান্ড

২০১৭ সালে অ্যাপল তাদের আইফোন এক্স-এর মাধ্যমে তাদের আলোচিত-সমালোচিত নচের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও অ্যাপল বিগত বছরগুলোতে নচটিকে কিছুটা সঙ্কুচিত করেছে। কিন্তু বেস মডেলের আইফোনগুলোতে এখনো নচ দেখা যায়। 

২০২২ সালে এসে অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো এবং প্রো ম্যাক্সে ডায়নামিক আইল্যান্ড উন্মোচন করে। নচের পরিবর্তে, তারা সামনের সেন্সর প্যাকেজটিকে স্ক্রিনের ওপরে একটি বড় পিল-আকৃতির কাটআউটে নিয়ে এসেছে। 

অ্যাপল নচটিকে একটি আইল্যান্ডে পরিণত করলেও, এটি আসলে আকারে ছোট হয়নি। যেহেতু ডিসপ্লেতে ডায়নামিক আইল্যান্ডের অবস্থান নচের তুলনায় অনেক নিচে। যার কারণে দেখা যায় এটি আরও বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ল্যান্ডস্কেপ মোডে; বেশিরভাগ মানুষ সিনেমা দেখার বা গেম খেলার সময় নচকে উপেক্ষা করতে পারলেও, ডাইনামিক আইল্যান্ড উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

মূল বিষয় হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কয়েক বছর ধরেই ছোট হোল-পাঞ্চ ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু আইফোন এখনো একটি অল-স্ক্রিন ডিসপ্লে নিয়ে আসা থেকে কয়েক বছর দূরে রয়েছে। 

ফোল্ডিং আইফোন এখনো স্বপ্ন

ফোল্ডিং বা ভাঁজ করা যায় এমন ফোন এখন আর নতুন নয়। স্যামসাংয়ের প্রথম গ্যালাক্সি ফোল্ড এসেছিল ২০১৯ সালে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, স্যামসাং ফোল্ডিং ফোনগুলোকে সবার কাছে বেশ সাধারণ করে তুলেছে। গ্যালাক্সি ফোল্ড ছাড়াও ভাঁজ করা যায় এমন কিছু অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে রয়েছে মটোরোলা রেজর, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ সিরিজের মতো ডিভাইসগুলো। যেগুলো স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছে আশ্চর্যজনক উদ্ভাবন।

কিন্তু, আইফোন এখনো অনেকটাই গতানুগতিক ধাঁচের রয়ে গেছে। অ্যাপল এখনো একটি ফোল্ডিং ফোন বাজারে আনতে পারেনি এবং নিকট ভবিষ্যতেও প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না।

ইউএসবি-সি পোর্টে নেই

যেখানে বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোন কয়েক বছর ধরেই ইউএসবি-সি ব্যবহার করছে। সেখানে আইফোন এখনো ২০১৩ সালে আইফোন ৫-এ চালু হওয়া লাইটনিং কানেক্টরের সঙ্গেই আটকে আছে।

লাইটনিং কানেক্টরের কারণে অ্যাপল যে আলাদা করে অর্থ উপার্জন করতে পারছে সেটিও সবার জানা। বিভিন্ন কোম্পানি লাইটনিং ক্যাবল এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ বানাতে চাইলে অ্যাপলকে লাইসেন্সিং ফি দিতে বাধ্য হয়। যা অ্যাপলের জন্য লাভজনক হলেও গ্রাহকদের জন্য লাভজনক নয়। ইউএসবি-সি লাইটনিং কানেক্টরের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে চার্জ করতে পারে। এ ছাড়া ইউএসবি-সি-এর ডেটা স্থানান্তর গতিও লাইটনিং থেকে অনেক দ্রুত।

যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করেছিল। যেখানে বলা হয়, তাদের অঞ্চলের মধ্যে বিক্রি হওয়া নতুন ডিভাইসগুলোতে ইউএসবি-সি যোগ করতে স্মার্টফোন নির্মাতারা বাধ্য। তাই আশা করা যায়, আমরা সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে একটি ইউএসবি-সিসহ আইফোন দেখতে পারি। 

রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং নেই

অনেকেই ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচ বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জিংয়ের জন্য ওয়্যারলেস চার্জিং ব্যবহার করে থাকে। এগুলোর জন্য সাধারণত চার্জিং প্যাড ব্যবহার করা লাগে। তবে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিজেই একটি ওয়্যারলেস চার্জিং প্যাডে পরিণত হতে পারে। 

রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েডে রয়েছে। যা দিয়ে আপনি চার্জিং প্যাড ছাড়াই ফোন থেকে সরাসরি এ সব ডিভাইস চার্জ করতে পারবেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত, আইফোনে ম্যাগসেফের মতো কিছু দুর্দান্ত ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচার থাকলেও, রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের ফিচারটি নেই। 

বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন ক্যামেরা আইফোনের নয়

অ্যাপল তার আইফোনের ক্যামেরাকে কেন্দ্র করেই ফোনগুলোকে বেশি বাজারজাত করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্যামেরা আইফোনের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে।

অ্যাপল তাদের আইফোন ১৪ প্রো-তে ব্যাপকভাবে ক্যামেরার আপগ্রেড করেছে। তারা তাদের প্রধান ক্যামেরার ১২ মেগাপিক্সেল রেজ্যুলেশনকে ৪৮ মেগাপিক্সেলে উন্নীত করেছে। তবে তারপরও এটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রার ১০৮-মেগাপিক্সেল সেন্সরের তুলনায় কিছুই নয়।

তবে শুধু মেগাপিক্সেলের দিক দিয়েই নয়, আইফোন ১৪ প্রো-এর তুলনায় গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা আরও প্রাণবন্ত রঙ প্রদান করে এবং কম আলোয় আরও ভালো পারফরম্যান্স দেখায়। এ ছাড়া এতে রয়েছে একটি অবিশ্বাস্য ১০০এক্স ডিজিটাল জুমের ফিচার। 

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আইফোনের ক্যামেরাটি অত্যন্ত চমৎকার। অধিকাংশ মানুষ এতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু আপনি যদি স্মার্টফোনে ফটোগ্রাফি করতে চান এবং এর জন্যে সম্ভাব্য সেরা ক্যামেরা চান। তাহলে আইফোনের থেকে অ্যান্ড্রয়েডে আপনি আরও ভালো ক্যামেরা পাবেন।

অ্যান্ড্রয়েড আপনাকে অনেক বিকল্প প্রদান করে

আপনি যদি একটি নতুন আইফোন কিনতে চান, তাহলে বেছে নেওয়ার জন্য আপনার কাছে অনেক কম বিকল্প থাকে। আইফোনের মডেলের সংখ্যা সীমিত। আপনি চাইলে বাজেটের মধ্যে শুধু আইফোন এসই কিনতে পারবেন, আর নাহলে বেস আইফোন কিংবা প্রো আইফোনের মধ্যে আপনাকে কোনো একটি বেছে নিতে হবে। যেখানে এগুলোর ফিচার একই মডেলের ক্ষেত্রে অনেকটাই অভিন্ন।

আর অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে আপনার কাছে রয়েছে বিপুল সংখ্যক বিকল্প। অ্যান্ড্রয়েডে একই ব্র্যান্ডের ফোনে যেমন বৈচিত্র্য আছে, ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডে রয়েছে আরও বেশি বৈচিত্র্য। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজ কিংবা গুগলের পিক্সেল ফোনগুলো থেকে আপনি যেমন একটি গতানুগতিক স্মার্টফোন কিনতে পারেন। আবার আপনি চাইলে, গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৪ বা জেড ফ্লিপ ৪-এর মতো অত্যাধুনিক ফোল্ডেবল ফোনও নিতে পারেন। এমনকি আপনি এমন ফোনও খুঁজে পাবেন, যেগুলো শুধু স্টাইল এবং অনন্যতার জন্য তৈরি। যেমন নাথিং ফোন ওয়ান। মোট কথা, অ্যান্ড্রয়েডে আপনি আইফোনের তুলনায় বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং বিশাল সংখ্যক বিকল্প পাবেন। 

তথ্যসূত্র: এমইউও 

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments