আইফোন ১৫ সিরিজের ৫ সমস্যা
গত ১২ সেপ্টেম্বর অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন ১৫ সিরিজের ঘোষণা দেয়। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ফোনগুলো বাজারে আসে। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই ব্যবহারকারীরা নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন।
ব্যবহারকারীরা নতুন আইফোনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করায় সম্ভাব্য নতুন ক্রেতারাও দ্বিধায় পড়েছেন। তবে অ্যাপলের জন্য আশার কথা সবচেয়ে বড় আকারে দেখা দেওয়া সমস্যাগুলো সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। অ্যাপল ইতোমধ্যে ইঙ্গিতও দিয়েছে যে তারা সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করছে।
নতুন আইফোন ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় ফেলা পাঁচ সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।
১. নতুন আইফোন অনেক গরম হয়ে যায়
প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ম্যাশেবলের এক প্রতিবেদনে গ্রাহকদের অভিযোগের বরাত দিয়ে বলা হয়, নতুন আইফোন অনেক গরম হয়ে যায়। কিছু ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, গেম খেলার সময় তাদের ডিভাইসটি অত্যধিক গরম হয়ে যায়।
উচ্চ কোয়ালিটির ফোরকে ভিডিও ধারণের সময়ও নতুন আইফোন গরম হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, এমনকি চার্জ দিলেও ফোন গরম হয়ে যাচ্ছে।
এক ব্যবহারকারী বলেন, 'ফোন এতটাই গরম হয়ে যায় যে কল রিসিভ করেও অস্বস্তিতে থাকছি।'
গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম অ্যান্ড্রয়েড অথোরিটি ব্যাপারটি যাচাই করার উদ্যোগ নেয়। তাদের পরীক্ষাতেও দেখা গেছে নতুন আইফোন ১৫ লাইন আপের ফোনগুলো গুগল ও স্যামসাংয়ের নতুন ফোনগুলোর তুলনায় বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে।
নতুন সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে হয়তো এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারবে অ্যাপল। বিশ্লেষক মিং-চি কো দাবি করেন, নতুন আইফোনের ওজন কমাতে গিয়ে আইফোন ১৫ সিরিজের থার্মাল ডিজাইন আগের মডেলের মতো কার্যকর রাখতে পারেনি অ্যাপল। যার ফলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটি বস্তুত হার্ডওয়্যারের সমস্যা। সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপল এই সমস্যাটির কতখানি সমাধান করতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।
২. প্রথমবার চালু করার সময় ফোন ফ্রিজ হয়ে যাওয়া
পুরনো আইফোন থেকে আইফোন ১৫ মডেলে ডাটা ট্রান্সফারের সময় অনেক ব্যবহারকারী সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাদের স্ক্রিনে অ্যাপল লোগোটি দীর্ঘসময় ধরে আটকে থাকতো (বুট আপের সময়), যাকে ফ্রিজিং বলা হয়। সফটওয়্যারের বাগের কারণে এমন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে নতুন সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপল ইতোমধ্যে এই সমস্যার সমাধান করেছে। নতুন আইফোন ব্যবহারকারীরা সেটআপের সময় আইওএস আপগ্রেডের অপশনটি দেখতে পাবেন। যাদের নতুন আইফোন বুট আপের সময় অ্যাপল লোগোতে এসে আটকে যায়, তারা ফোন রিসেট দিয়ে নতুন ও আপগ্রেডেড আইওএস নিতে পারেন। তখন আর এই সমস্যাটি আর থাকবে না।
তবে এই সমাধান সত্ত্বেও একে একটি বিরক্তিকর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবহারকারীরা।
৩. ধীরগতির আইওস
অনেক আইফোন ১৫ ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তাদের ফোনটি অনেক ধীরগতির।
তবে এটি ফোনের সমস্যা নয়, বরং নতুন উন্মোচিত আইওএস ১৭ এর সমস্যা। এছাড়াও, অনেক অ্যাপ এখনও আইওএস ১৭ বা নতুন আইফোনের জন্য আপডেট চালু করতে পারেনি। যার ফলে কিছু সফটওয়্যার ফোনকে ধীরগতির করে দিচ্ছে।
এসব আপডেট চলে আসলে এ ধরনের সমস্যাগুলো দূর হবে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সব ব্যবহারকারীরা কিন্তু এসব সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছেন না।
৪. আইফোনের বডিতে দৃশ্যমান আঙুলের ছাপ অনেকটাই দৃষ্টিকটু
আইফোন ১৫ ব্যবহারকারীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তার প্রায় সবগুলোই নতুন সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।
কিন্তু নতুন আইফোনের টাইটানিয়াম বডিতে যেভাবে আঙুলের ছাপ পড়ছে, সেটার আপাতত কোনো সমাধান নেই।
তবে এটি ফোনের উপযোগিতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না। ম্যাশেবল বলছেন, টাইটানিয়াম বডিতে যেভাবে আঙুলের ছাপ লেগে থাকছে, তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আঙুলের ছাপ লেগে থাকার কারণে ফোনের সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হয়, এটা ঠিক। তবে এতে বাড়তি কোনো ক্ষতি নেই।
এখনকার নতুন ডিভাইসগুলোতে ধুলা বালি, ছোট-খাটো দাগ ও আঙুলের ছাপের বিষয়গুলো খুবই সাধারণ ব্যাপার।
তবে কোনো কোনো ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন তারা নতুন আইফোন বক্স থেকে বের করেই দেখেছেন এর বডিতে স্ক্র্যাচ বা দাগ। কেউ কেউ বলছেন ডিসপ্লের অ্যালাইনমেন্ট ঠিক ছিল না। এসব ক্ষেত্রে ক্রেতাদের উচিত দ্রুত আইফোনটিকে ফেরত দেওয়া বা বদলে আনা। এটা সামগ্রিক কোনো সমস্যা নয়—সুনির্দিষ্টভাবে ঐ ডিভাইসটির সমস্যা এবং ওয়ারেন্টির মধ্যে তা বদলে দিতে অ্যাপল বাধ্য।
ঠিক কতজন ব্যবহারকারী এ সমস্যায় পড়েছেন, তা নিশ্চিত নয়। আগামীতে হয়তো জানা যাবে এর মূল কারণ।
৫. ভঙ্গুর আইফোন ১৫
সম্ভবত আইফোন ১৫ সিরিজ নিয়ে যে উদ্বেগটা সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে, তা হচ্ছে ডিভাইসগুলোর স্থায়িত্ব। এটা এমন এক সমস্যা, যা সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে সমাধান করা যায় না।
যারা দীর্ঘদিন ধরে আইফোন ব্যবহার করেন, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন আগের আইফোনের তুলনায় নতুন আইফোনগুলো বেশ ভঙ্গুর।
ইউটিউবার 'জেরি রিগ এভরিথিং' তার এক ভিডিওতে নতুন আইফোনের স্থায়িত্ব কম হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। তার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। আইফোন ১৫ লাইন আপের মধ্যে স্থায়িত্বের সমস্যা ১৫ প্রো ম্যাক্সে সবচেয়ে বেশি। এক ব্লগার বলেন, ফোনের পেছনে (প্রো ম্যাক্সে) বুড়ো আঙুল দিয়ে কয়েকবার জোরে চাপ দিতেই তা ভেঙে যায়। তিনি ভিডিও করে বিষয়টি দেখান।
ইউটিউবার স্যাম কোল আইফোন ১৪ ও আইফোন ১৫ এর ড্রপ টেস্ট (হাত থেকে ফেলে দিয়ে) করে দেখেছেন দুটি ফোনের মধ্যে আইফোন ১৪ এর ক্ষতি কম হয়েছে।
মাত্র কয়েকবার হাত থেকে ফেলে দিলেই আইফোন ১৫ প্রো একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নতুন আইফোন ক্রেতাদের তাই কভার ছাড়া ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন স্যাম।
সূত্র: ম্যাশেবল
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments