১ বছরে জাকারবার্গ হারিয়েছেন ৭১ বিলিয়ন ডলার
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ৫৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ২০তম অবস্থানে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ।
২০১৪ সালের পর এটাই তালিকায় তার সর্বনিম্ন অবস্থান।
আজ মঙ্গলবার ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, 'মেটাভার্সে' সময়-অর্থ বিনিয়োগই জাকারবার্গের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চাপে রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকারবার্গের সম্পদ হারানোর বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
এ বছর তার সম্পদের পরিমাণ ৭১ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ব্লুমবার্গের তথ্য মতে, ধনকুবেরদের মধ্যে এতো বেশি অর্থ এত অল্প সময়ে আর কেউ হারাননি।
ব্লুমবার্গ সূচকে ওয়ালটন পরিবারের ৩ সদস্য ও কোচ পরিবারের ২ জনের পেছনে থেকে জাকারবার্গে ২০তম অবস্থানে রয়েছেন।
২ বছরেরও কম সময় আগে ৩৮ বছর বয়সী জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০৬ বিলিয়ন ডলার। সেসময় শুধুমাত্র বিল গেটস ও জেফ বেজোস তার চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক ছিলেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। সেসময় তার প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ ৩৮২ ডলারে পৌঁছেছিল।
পরের মাসে জাকারবার্গ সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম 'ফেসবুক ইঙ্ক' পরিবর্তন করে 'মেটা' রাখেন। এরপর থেকেই প্রযুক্তি বিশ্বে খেই হারিয়ে ফেলে জাকারবার্গ ও তার প্রতিষ্ঠান।
মেটার সাম্প্রতিক আয়-ব্যয়ের হিসাব হতাশাজনক বললেও কম বলা হবে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এই ধারার সূত্রপাত। সে মাসে ফেসবুক জানায়, প্রথমবারের মতো তাদের মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি ঘটেনি। এই ঘটনার পর রাতারাতি পুঁজিবাজারে ফেসবুকের শেয়ারে ধস নামে। জাকারবার্গ ৩১ বিলিয়ন ডলার খোয়ান।
এক দিনের মধ্যে এত বেশি পরিমাণ সম্পদ হারানোর ক্ষেত্রে এটি ছিল নতুন রেকর্ড।
অন্যান্য সমস্যার মধ্যে ছিল টিকটকের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা। ফেসবুক এর অঙ্গসংগঠন ইনস্টাগ্রামে 'রিলস' ফিচারকে জনপ্রিয় করে টিকটকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা চালালেও তেমন সাফল্য আসেনি। সঙ্গে যোগ হয় করোনা মহামারি।
মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য দেখায়।
নিডহ্যাম অ্যান্ড কো'র জ্যেষ্ঠ ইন্টারনেট বিশ্লেষক লরা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ফেসবুকের শেয়ারের দরপতনের পেছনে মেটাভার্সে বড় আকারের বিনিয়োগও একটি কারণ।
জাকারবার্গ এক বিবৃতিতে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এই প্রকল্পটি (মেটাভার্স) আরও ৩ থেকে ৫ বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ হারাবে।
লরা আরও জানান, পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ফেসবুককে টিকটকের কাছে হারানো গ্রাহকদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
'মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি ও হস্তক্ষেপের কারণেও প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
মার্কিন শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফেসবুকই সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।
২০২২ সালে অ্যাপল ১৪ শতাংশ, অ্যামাজন ২৬ শতাংশ ও গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইঙ্ক ২৯ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে।
৫৭ শতাংশ মূল্য হারিয়ে ফেসবুক শুধু নেটফ্লিক্সের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি ৬০ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের প্রযুক্তি বিশ্লেষক মানদিপ সিং গণমাধ্যমকে বলেন, 'ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মেটা সুবিধা করতে না পারলে তাদের উচিৎ অ্যালফাবেটের পথে হাঁটা।'
তার মতে, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো আনুষঙ্গিক কিছু ব্যবসা বিক্রি করে দিলে মেটা কিছুটা হলেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের বেশিরভাগ মেটার স্টকের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ বিবৃতি মতে, জাকারবার্গ হাতে আছে ৩৫০ মিলিয়ন শেয়ার। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে আজ মেটার শেয়ারের মূল্য ছিল ১৪৬ দশমিক ১৮ ডলার।
জাকারবার্গ নিজের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি নিজের 'রিব্র্যান্ডিং'-এর প্রচেষ্টায় একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। এতে দেখা গেছে, তিনি 'মিক্সড মার্শাল আর্ট' অনুশীলন করছেন।
এ ছাড়াও, জো রোগানের সঙ্গে ৩ ঘণ্টার পডকাস্টে তিনি নিজেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পরিবর্তে 'প্রোডাক্ট ডিজাইনার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
Comments