দেশে সংযোজিত বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘পালকি’ বাজারে আসতে পারে আগামী বছর

বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশই বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। গত এক দশকে অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে টেসলা, রিভিয়ান, এনআইও'র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রচলিত দ্রুতগতির গাড়ি প্রস্তুতকারক ভলভো, জিএম, নিসান এবং ফোর্ড ও বাজারে এনেছে বৈদ্যুতিক গাড়ির পসরা। বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির রেকর্ড এখন সর্বোচ্চ।

নরওয়ে, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতেও দ্রুত বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার হার। বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনায় ৫ বছর আগের হিসেবে সুবিশাল বাজার রয়েছে বর্তমানে চীনে, যার হার প্রায় ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশে অটোমোটিভ ইন্ড্রাস্ট্রির অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বদেশী স্টার্টআপ 'পালকি মোটরস'। চলমান স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে 'পালকি মোটরস' তাদের নিজস্ব সংযোজিত বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে।

চার দরজা, চার চাকার ওই বৈদ্যুতিক গাড়িতে চলছে প্রি-বুকিং সুবিধা।  প্রায় ৫ লাখ টাকার বাজেটের এই গাড়ি সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়ি কিনতে যারা আগ্রহী তাদের কাছে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

পালকির প্রথম গাড়িটির জন্য ইতোমধ্যে ৬০০'র বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন পালকি মোটরসের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা আল মোমিন। 

পালকির বর্তমান প্রোটোটাইপ গাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে চাইনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ির আদলে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে পালকি মোটরসের একটি অ্যাসেম্বলি শেড এবং কয়েক সপ্তাহ পরই তাদের প্রোটোটাইপ গাড়ি দেখা যাবে।

মোমিন জানান, পালকির ৪০ শতাংশ যন্ত্রাংশ বাংলাদেশের এবং বাকি অংশ চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানিকৃত।

সস্তায় সেকেন্ড-হ্যান্ড গাড়ি খুঁজতে গিয়েই এই উদ্যোগের শুরু বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোমিন।

তিনি বলেন, 'বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী এবং উদ্যোক্তা হওয়ার সুবাদে আমি বুঝতে পারি এটি বিশাল একটি বাজার। যেহেতু বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে অন্যান্য গাড়ির মতো ইঞ্জিনের জটিলতা নেই, সেহেতু স্থানীয়ভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বেশ সাশ্রয়ী এবং দক্ষভাবে পরিচালনা করা যাবে।'

২০১৩ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ির একটি প্রকল্পে কাজ করেন মোস্তফা আল মোমিন। তারপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষে দেশে ফিরে গ্রামীণফোনের অ্যাক্সিলারেটরের প্রোগ্রামের তৈরি স্টার্টআপ সিওয়ার্কে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সেটি টেকসই না হওয়ায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

তবু সাশ্রয়ী পরিবর্তনযোগ্য বৈদ্যুতিক ব্যাটারি-ভিত্তিক গাড়ির জন্য বাংলাদেশ একটি বিশাল বাজার বলে আশা করেন তিনি। এই ব্যবসায়িক মডেলে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার পরিবর্তে নতুন ব্যাটারির সঙ্গে চার্জশুন্য ব্যাটারিও ব্যবহার করা যায়।

৬০ভি ১০০এইচ লিড অ্যাসিড ব্যাটারি সম্বলিত পালকি একবার চার্জেই ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার মতো ড্রাইভ রেঞ্জের সুবিধা দেয়। এটির ব্যাটারি অ্যারে চার্জ হতে সময় নেয় প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। লিড অ্যাসিড ব্যাটারি ৩৬ হাজারের বেশি কিলোমিটার পথের পরিষেবা দিতে সক্ষম।

মোমিন বলেন, 'এই হিসেবে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে প্রায় ১ টাকা ৭৩ পয়সা।'   

'বাংলাদেশে গাড়ির অতিরিক্ত কর ও ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচের একটি ভালো বিকল্প হতে পারে স্থানীয়ভাবে সংযোজনকৃত বৈদ্যুতিক গাড়ি,' বলেন তিনি।  

এই প্রকল্পে মোমিন ও তার সহ প্রতিষ্ঠাতারা প্রায় ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন এবং চলতি বছরের মধ্যে তাদের প্রথম গাড়ি বাজারে আনার পরিকল্পনা আছে।

গাড়িটি রাস্তায় চলার বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোমিন বলেন, 'বর্তমানে পালকির গাড়িগুলো বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্ষা-নিরীক্ষা করছে। তবে পালকি ইতোমধ্যে স্থানীয় মানের প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি পূরণ করতে পেরেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটরের আউটপুট তুলনামূলকভাবে কম এবং গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের কম হওয়ায় নিয়মগুলো শিথিল হয়।'

'প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পালকির প্রথম ব্যাচ সরবরাহ করা হবে। প্রি-অর্ডারের পরে পালকির একক গাড়ি সরবরাহ করতে সময় লাগবে আনুমানিক ৫০-৬০ দিন। প্রি-অর্ডার করতে হলে ক্রেতাকে মোট মূল্যের ১০ শতাংশ দিতে হবে,' বলেন তিনি।

পালকি বাংলাদেশের যানবাহন শিল্পে বেশ ভালো প্রভাব ফেলতে পারবে বলে আশা জানান তিনি।

 

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া

Comments

The Daily Star  | English

Govt dissolves NBR as per IMF proposal

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

3h ago