শচীনের প্রথম সাক্ষাৎকারের মাঠ ও ‘বিভিন্ন ধর্মীয়’ জিমখানা

গান্ধীর সংগ্রহশালা থেকে বেরিয়ে এসে একেক ধর্মের নামে এমন আলাদা মাঠ ও ক্লাব দেখে একটু ধাক্কার মতন লাগতে বাধ্য। সাতচল্লিশ পূর্ববর্তী উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের রগরগে সব স্মৃতি ধারণ করছে। বিরোধের সেই বিষ আজও নানাভাবে বহমান। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাই বলে খেলার মাঠেও তেমন থাকবে?

মুম্বাই থেকে

শচীনের প্রথম সাক্ষাৎকারের মাঠ ও ‘বিভিন্ন ধর্মীয়’ জিমখানা

sachin tendulkar & gymkhana
১৯৮৯ সালে হিন্দু জিমখানা মাঠে প্রথম সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

অক্টোবরের শেষ দিকেও মুম্বাইতে বাতাস ভীষণ উত্তপ্ত। আরব সাগরের ঝাঁজে চিটচিটে গরম দেয় অস্বস্তি। কিন্তু গাম্বদেবি এলাকার গান্ধী সংগ্রহশালার দু'তালা ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াও এতই শীতল পরিবেশ যে ওখানে শহরের বাস্তবতা মেলানো বেশ মুশকিল হচ্ছিল। মহাত্মা গান্ধীর অহিংসার মতাদর্শের আবহের মতই যেন চারপাশের শীতলতা।

মহাত্মা গান্ধী মুম্বাইতে এলে এই ঘরেই কাজ করতেন, থাকতেন। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র রেখে দেওয়া হয়েছে। ছবি: একুশ তাপাদার

এই ভবনে গান্ধী এসেছেন, থেকেছেন, কাজও করেছেন। তার থাকা ও কাজের ঘর। বিছানা, খড়ম সবই আলাদা করে রাখা আছে। গান্ধীর সংগ্রহশালায় কিছুটা সময় পার করে ছুটলাম মেরিন ড্রাইভের তপ্ত রোদে জিমখানা ক্লাবের দিকে। মুম্বাইতে এক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে জিমখানা মাঠেই।  রোববার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। পৌঁছাতে সময় বেশি লাগলো না।

মেরিন ড্রাইভে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে টানা চারটি জিমখানা, আরেকটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত। মেডিকেল ছাত্রদের একটি জিমখানা ছাড়া বাকি তিনটি তিন ধর্মের নামে! হিন্দু জিমখানা, ইসলাম জিমখানা আর পার্সিয়ান জিমখানা।

Islam Gymkhana
মুম্বাইর ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হাউজ ইসলাম জিমখানা। ছবি: একুশ তাপাদার

গান্ধীর সংগ্রহশালা থেকে বেরিয়ে এসে একেক ধর্মের নামে এমন আলাদা মাঠ ও ক্লাব দেখে একটু ধাক্কার মতন লাগতে বাধ্য। সাতচল্লিশ পূর্ববর্তী উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের রগরগে সব স্মৃতি ধারণ করছে। বিরোধের সেই বিষ আজও নানাভাবে বহমান। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাই বলে খেলার মাঠেও তেমন থাকবে?

তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে ইসলাম জিমখানায় কেবল মুসলিমরাই খেলেন বা হিন্দু জিমখানায় কেবল হিন্দু। মোহামেডান ক্লাব যেমন নামেই একটা সম্প্রদায়ের পরিচয় বহন করছে। এইগুলোও সেরকমই। ব্রিটিশ আমলে কোন এক বাস্তবতায় ধর্মীয় পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়েছে (হয়ত বিভাজনের রাজনীতির ভিত্তিও তখন থেকেই মজবুত হওয়া শুরু)। বর্তমানে নামটাই শুধু একেক সম্প্রদায়ের।

শুরুতেই ঢুকলাম ইসলাম জিমখানায়। একটা অ্যামেচার ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল তখন। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে অ্যামেচার ক্রিকেট ম্যাচ হয়ে থাকে। তবে দেখে বোঝার উপায় নেই এসব শখের  ক্রিকেট। পেশাদার আদলের সমস্ত ব্যবস্থাই আছে। প্রতি দলের টিম মিটিং, পরিকল্পনা সাজানো সবই চলছে লড়াইয়ের ঝাঁজ রেখে। ক্রিকেটের গভীরতায় যে তারা প্রখর, কথাবার্তা শুনলেই আঁচ পাওয়া যায়। সাংবাদিক পরিচয় জেনে সহজেই অন্দরমহলে প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। সুযোগ মিলছিল তাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি বোঝার।

টানা চার মাঠে চলছে চার ম্যাচ

সৌখিন ক্রিকেট ম্যাচে খেলছেন, এমন অনেকে আবার পেশাদার ক্রিকেটারও। খেলেন বিভিন্ন ক্লাবে। এমনই একজন অঙ্কিত রাও। আলাপে জানালেন, 'মুম্বাইর ক্রিকেট সংস্কৃতিই এমন শক্ত। পেশাদার ক্রিকেটের বাইরেও যেসব খেলা হয় সেসব নেহাত সময় পার করার জন্য না। শখের ক্রিকেট থেকে আলো কেড়ে অনেকে পেশাদার জগতে চলে গেছে এমন উদাহরণও অনেক। সব রকমের ক্রিকেট এখানে সিরিয়াসলি খেলা হয়। '

পাশাপাশি চারটা মাঠে চলছে চারটা ম্যাচ। ইসলাম জিমখানা থেকে খানিকটা এগিয়ে হিন্দু জিমখানায় যেতেই দেখা মিলল আরেক ম্যাচের। এই মাঠের সঙ্গে কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের দারুণ এক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

১৯৮৯ সালে এই মাঠের এক কোণাতেই যে অভিনেতা টম আল্টারকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ১৫ বছরের কিশোর শচীন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা পড়ার আগে তখন স্বপ্নের দোলাচল ধরা পড়েছিল তার চোখে, কণ্ঠে। ইউটিউবে সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও আজও পাওয়া যায়।

Hindu Gymkhana
হিন্দু জিমখানা মাঠ

হিন্দু জিমখানার পাশেই মেডিকেল কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জিমখানা। এই মাঠেও চলছিল একটি ক্রিকেট ম্যাচ। কথা বলে জানা গেলো এমন ছবি রোজকার। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ক্রিকেট ম্যাচে ব্যস্ত থাকে এসব মাঠ। সকাল ও বিকেল দুই আলাদা সূচিতে চলে একাডেমির কার্যক্রম। মুম্বাইয়ের তুমুল প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ক্রিকেটে একটা ঠাঁই করে নিতে কিশোর-কিশোরীদের প্রাণান্তকর চেষ্টা চলে নিয়মিত। এই কয়েকটি জিমখানা মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের অদূরেই। সাগর পাড়ের এই রাস্তাটা পুরোটাই তাই দখলে ক্রিকেটের।

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম থেকে দেড়  কিলোমিটার দূরে মুম্বাইয়ের আরেক মাঠ ব্র‍্যার্ভোন স্টেডিয়াম। যার মালিকানায় বিখ্যাত ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়া। আগে ওখানেই হতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। টিকেট ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পরে নানাসাহেব ওয়াংখেড়ে  মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের জন্য আলাদা একটি স্টেডিয়ামই বানিয়ে ফেলেন। সেই স্টেডিয়াম এখন মুম্বাই তথা ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। যার চারপাশ জুড়েই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে উঠে আসার তোড়জোড়।

Comments

The Daily Star  | English

India bans select jute, fabric imports from Bangladesh via land routes

Today's action by DGFT came a little more than one month after India had imposed port restrictions on the import of certain goods like readymade garments and processed food items from Bangladesh via land routes

19m ago