ওয়াংখেড়ের মাঠের কারণে একইসঙ্গে বাংলাদেশের বিপদ ও সুযোগ
মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছিল ৪৮ বছর আগে। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পুরনো হলেও এই মাঠকে শহরের বাকি সব কিছুর তুলনায় একদম নবীনই বলা যায়। ব্রিটিশদের সাজানো আর পার্সিদের (ইরান থেকে আগত) স্পর্শে মুম্বাইয়ের অনেক অবকাঠামোই যে বয়সে দুইশ-তিনশ বছর পুরনো। ৪৮ বছর সেই তুলনায় আর এমন কী!
আরব সাগর তীরের এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগরীতে বাংলাদেশ দলেরও আশ্রয় হয়েছে শতবর্ষ পুরনো বিখ্যাত হোটেল তাজ প্যালেসে। এর আগে একবারই এই শহরে ক্রিকেট খেলেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ২৫ বছর আগে সেই দলের কেউ বর্তমান দলে থাকার বাস্তবতা নেই। এই দলের অনেকের তো তখনো জন্মই হয়নি!
অবশ্য বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বহরের দুজন তখনো ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ওয়াংখেড়েতে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে খেলা মিনহাজুল আবেদিন নান্নু প্রধান নির্বাচকের ভূমিকায় আছেন তাজ হোটেলেই, টিম ডিরেক্টর পদ নিয়ে আছেন খালেদ মাহমুদ সুজনও। সেই দলের আরও একজন আছেন এখন মুম্বাইতে, তিনি ধারাভাষ্যকার আতাহার আলি খান।
মাঠের আকৃতির কথা বলতে গিয়ে পেছনে যাওয়ার কারণ অনভিজ্ঞতার ছবি দেখানো। বিশ্বকাপে ভারতের বেশিরভাগ মাঠেই বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলছে প্রথমবার। ওয়াংখেড়েতে আগে একবার খেললেও সেই অভিজ্ঞতা এখন মূল্যহীন। উইকেট আর কন্ডিশনের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে মাঠের আকৃতিও হয়ে উঠে বড় প্রভাবক। একেক মাঠে গিয়ে একেক আকৃতিতে মানিয়ে নেওয়ার একটা চ্যালেঞ্জও থাকে।
ওয়াংখেড়ের মাঠের সেন্টার থেকে সব দিকেই দূরত্ব ৭০ মিটার। বাউন্ডারি লাইনে বিজ্ঞাপনী ডিজিটাল স্ক্রিন বসানোর পর এই দূরত্ব কমে যাবে আরও। ৬২ থেকে ৬৫ মিটারের বেশি আকার কোনদিকেই হবে না। প্রেসবক্সে মনে হয় বল উড়ে এসে কাঁচ ভেঙে দেবে না তো!
বাউন্ডারি ছোট হওয়ার পাশাপাশি ওয়াংখেড়ের উইকেটও একদম পাটা। পেসাররা শুরুতে কিছু সুবিধা পেলেও স্পিনারদের জন্য সাদা বলের ক্রিকেটে এখানে প্রায় কিছুই নেই। বাউন্ডারি ছোট হওয়ায় মিস টাইমিংও সীমানা পার হয় অনেক সময়।
শনিবার মুম্বাইতে বাংলাদেশ দল ছিল একদম বিশ্রামে। দুপুরে ক্রিকেটাররা যে যার মতন বাইরে গেছেন লাঞ্চ করতে। ঠিক অদূরেই ওয়াংখেড়েতে তখন ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করছিলেন হেনরিক ক্লাসেন, মার্কো ইয়ানসেনরা। এক বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে দুবার চারশো করার রেকর্ড প্রায় করেই ফেলেছিল তারা, এক রানের জন্য হয়নি। তবে ওতেই বুঝিয়ে দিয়েছে এসব মাঠে কতটা বিপদজনক হতে পারে তাদের ব্যাটিং।
ওয়াংখেড়েতে টানা দুই ম্যাচ খেলায় মাঠের তাল বেশি অভ্যস্ত থাকবে প্রোটিয়াদের। বাংলাদেশকে মানাতে হবে দুদিনের অনুশীলনে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেসব দলকে হারানোর লক্ষ্যে অনেক আশাবাদী ছিল সাকিব আল হাসানের দল, তার একটি দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের কাছে হারলেও কুইন্টেন ডি কক, টেম্বা বাভুমারা যে মানের ক্রিকেট খেলছেন তাতে আশার বদলে ভয় ঢুকে যাওয়া এখন অসম্ভব নয়।
স্কিলসেট অনুযায়ী বাংলাদেশের একাদশে তিন স্পিনার আর তিন পেসার খেলার সম্ভাবনা বেশি থাকে বরাবর। স্পিনারদের মধ্যে রিষ্ট স্পিনার না থকায় বিপদ আরো বেশি। ইংল্যান্ড যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলিয়েছে একমাত্র স্পিনার আদিল রশিদকে। লেগ স্পিনার হওয়ায় আদিল কিছুটা রানের চাকায় বাধ দিতে পারেছেন।
প্রোটিয়ারা পেস অলরাউন্ডার সহ গতিময় বোলার নামায় চারজন। বিশেষজ্ঞ স্পিনার কেবল কেশব মহারাজ। এইডেন মার্করাম করেন অনিয়মিত স্পিন। এদিক থেকে বাংলাদেশ চার পেসার নামাবে কিনা এটা এক প্রশ্ন। পেসাররাও কেউ ভালো না করায় এই জায়গাতে নেই ভরসাও। উইকেটের ধরণ আর মাঠের আকৃতির কারণে বোলিং আক্রমণ সাজাতে তাই বেশ কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে সাকিবদের।
চার ম্যাচ খেলে ফেলেও এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আড়াইশ রানই ছাড়াতে পেরেছে কেবল একবার। কোন ম্যাচে টপ অর্ডার রান পেলেও ব্যর্থ হচ্ছে মিডল অর্ডার, কোন ম্যাচে মিডল অর্ডারে ভরসা পেলেও টপ আর লোয়ার অর্ডারে ধসে পড়ছে হুড়মুড় করে।
মুম্বাইতে সহায়ক কন্ডিশন পেয়ে ব্যাটারদের ছন্দে ফেরার একটা বড় সুযোগ থাকছে। যদি আগে ব্যাট করে বড় রান করা যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলা হয়ত সম্ভব হতে পারে। আগে ব্যাট করে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে থাকলেও রান তাড়ায় এখনো তালগোল পাকানো রয়ে গেছে প্রোটিয়ারা। ডাচদের বিপক্ষে মামুলি রান তাড়ার চাপও নিতে পারেনি তারা।
বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান তলানিতে, মাঠের বাইরের পরিস্থিতিও বেশ তালগোল পাকানো। তবু একটা জয় সব কিছুই বদলে দিতে পারে, সেদিন দলের হয়ে কথা বলতে এসে বলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেই একটা জয়ের জন্য মাঠের আকৃতি, উইকেটের ধরন, প্রতিপক্ষের অবস্থা বিচার করে আদর্শ একাদশ বাছাই আর উপযুক্ত ব্যাটিং অর্ডার খুঁজে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের
Comments