যোগ করা সময়ে গোল হজম করে বাংলাদেশের মেয়েদের ড্র

ছবি: প্রবীর দাশ

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর প্রথমবারের মতো খেলতে নামল বাংলাদেশ। নয় মাসের বেশি সময়ের ব্যবধানে মাঠে ফিরে জয়ের সম্ভাবনা জাগাল তারা। কিন্তু বিধি বাম। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে গোল হজম করল মেয়েরা। তাতে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।

বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। দুটি গোলই হয় দ্বিতীয়ার্ধে। ৬৫তম মিনিটে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এরপর যোগ করা সময়ে লড়াইয়ে সমতা টানেন সফরকারীদের সাবিত্রা ভান্ডারি।

ফাইনালে নেপালকে হারিয়েই সাফ জয়ের পর হয়েছে অনেক ওলটপালট। গোলাম রব্বানি ছোটন প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে চলে গেছেন। তার জায়গা নিয়েছেন এতদিন সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করা মাহবুবুর রহমান লিটু। তার অধীনে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পায়নি আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়রসহ একাধিক নিয়মিত ফুটবলারকে। তারপরও নেপালের বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স দেখা গেছে, সেটা হতাশাজনক নয় মোটেও।

ম্যাচের ১৭তম মিনিটে প্রথমবারের মতো সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। শিউলি আজিমের ক্রসে ডি-বক্সের সামনে বল পেয়ে যান সাবিনা। এই মিডফিল্ডার গোলপোস্টের বেশ কাছে বিপজ্জনক জায়গায় বল ফেলেন। সেখানে শরীর ঘুরিয়ে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানি সরকার। তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের চাপ এড়িয়ে বলের নাগাল পাননি তিনি।

২৩তম মিনিটে নেপাল ভীতি ছড়ায় স্বাগতিকদের রক্ষণে। অভিষিক্ত ডিফেন্ডার আফিদা খাতুনকে গতিতে পরাস্ত করে বামদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন সাবিত্রা ভান্ডারি। এই ফরোয়ার্ডের ক্রস গোলমুখ থেকে হেড করে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তহুরা খাতুন।

পরের মিনিটেই মঞ্চে আবির্ভূত হতে হয় বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমাকে। তিনি অবশ্য সহজেই লুফে নেন সতীর্থের কর্নারে করা সাবিত্রার হেড।

৩৫তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে দিপা শাহি ক্রস ফেলেন ডি-বক্সে। সেখানে ফাঁকা জায়গায় ছিলেন সাবিত্রা। কিন্তু বলে ঠিকঠাকভাবে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর বাংলাদেশের রক্ষণভাগও পারেনি বল ক্লিয়ার করতে। ফলে ডি-বক্সের ঠিক বাইরেই থাকা সারু লিম্বু বল পেয়ে যান। তবে তার ডান পায়ের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

গোলশূন্যভাবে বিরতিতে যায় দুই দল। প্রথমার্ধে আক্রমণের হিসাবে এগিয়ে থাকা সফরকারীদের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও হয় ঝলমলে। ৫৪তম মিনিটে আবারও সাবিত্রাই গোলের সম্ভাবনা জাগান। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া তার ফ্রি-কিক চলে যায় ক্রসবার ঘেঁষে।

৬০তম মিনিটে সানজিদা আক্তারের জায়গায় মাঠে নামেন রিপা। পাঁচ মিনিট পর বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার মূল কারিগর তিনিই। পায়ের কারুকাজে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তিনি রক্ষণচেরা পাস দেন সাবিনার উদ্দেশ্যে। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন সাবিনা। এরপর ডান পায়ের নিচু কোণাকুণি শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। তাতে উল্লাসে মেতে ওঠেন মাঠে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক।

৭৩তম মিনিটে সমতায় প্রায় ফিরেই গিয়েছিল নেপাল। তবে রুপনার অসাধারণ সেভে অক্ষত থাকে বাংলাদেশের গোলপোস্ট। ডি-বক্সের ভেতরে ডান দিক থেকে কাটব্যাক করেন সাবিত্রা। ফাঁকায় থাকা বদলি নামা রেশমি কুমারি ঘিসিং একা পেয়ে যান রুপনাকে। তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান বাংলাদেশের গোলরক্ষক।

দুই মিনিট পরই ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনা নিশ্চিত করে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন সাবিনা। মাঝে পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে। কিন্তু মূল জায়গায় গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন তিনি। শট নিতে দেরি করায় গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল লাথি দিয়ে বিপদমুক্ত করেন নেপালের গোলরক্ষক বিমলা বিকে।

এই ব্যর্থতা পরে হয়ে ওঠে জয়ের হাসি হাসতে না পারার কারণ। যোগ করা চার মিনিটের প্রথমটিতে সাবিত্রা স্কোরলাইন করেন ১-১। ডান দিক থেকে প্রথমে বল তিনিই ডি-বক্সে ফেলেছিলেন। এরপর বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা তা ক্লিয়ার করতে না পারলে ফের সাবিত্রাই বল পান। এরপর জটলার মধ্যে জাল কাঁপান তিনি।

আগামী রোববার দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

12h ago