সেরা ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কদের অধীনেও ব্যাটিং ধস চলছে

গত বছরের ৫ নভেম্বর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন শারজাহতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পড়ে ব্যাটিং ধসে— যা একটি পরিচিত দৃশ্য।
২৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় টাইগাররা ৩ উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলে ফেলেছিল। স্বাচ্ছন্দ্যে এগোচ্ছিল তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই ঘটে বিপর্যয়। নবাগত স্পিনার আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফরের ঘূর্ণিতে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। টপাটপ উইকেট খুইয়ে মাত্র ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় দলটি। হেরে যায় ৯২ রানের বড় ব্যবধানে।
ঘরোয়া ক্রিকেট অঙ্গনের প্রখ্যাত কোচ সালাহউদ্দিন তখন দলের সঙ্গে ছিলেন না। ওই মাসের শেষদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এখনও ধরা পড়েনি। বরং ব্যাটিং ধস যেন তিন সংস্করণেই ভয়াল থাবার মতো তাড়া করছে বাংলাদেশ দলকে।
সাত মাস পেরিয়ে গেলেও গত বুধবার একই কায়দায় ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলের দেখা মিলেছে।
কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১০০। এরপর ব্যাখ্যাতীত ছন্দপতন— ২৬ বলের মধ্যে মাত্র ৫ রান যোগ করতেই নেই ৭ উইকেট। ছেলেদের ওয়ানডেতে এত কম রানের ব্যবধানে আগে কখনও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম উইকেট পড়েনি। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে হার মানে দলটি। এই ধস নামানোর কারিগর ছিলেন দুই লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্ডিস। তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন ৭ উইকেট।
যখন সালাউদ্দিনকে কোচিং স্টাফে যুক্ত করা হয়েছিল, তখন এটিকে ভীষণ ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়েছিল। কারণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাদের কৌশলগত ও মানসিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতার জন্যও তিনি পরিচিত। তাই মনে করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম আরও আরামদায়ক হবে এবং সেখানে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেসব প্রত্যাশা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি টেস্টের পাশাপাশি সীমিত ওভারের দুটি সিরিজেও ব্যাটিং ধসে পড়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা। সেটা সামলে ২২৮ রান পর্যন্ত পৌঁছালেও তা যথেষ্ট ছিল না লড়াইয়ের জন্য। দুবাইয়ে দলটি শেষমেশ ৬ উইকেটের ব্যবধানে পরাস্ত হয়।
সেই থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের পর শ্রীলঙ্কা সফরেও ব্যাটিং ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের সঙ্গী। শুধু তাই নয়, দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও ব্যতিক্রম ঘটেনি।। ব্যাটিং লাইনআপ যেন ক্রমেই অনির্ভরযোগ্য রূপে হাজির হতে থাকছে।
সালাহউদ্দিনের যোগদানের মাধ্যমে একটি হাই-প্রোফাইল গ্রুপ গঠিত হয়— যাদেরকে দেশের সেরা ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাকি দুজন হলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
ধারণা করা হয়েছিল, তারা একসঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ বদলে দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশাবাদী হওয়ার উপায় নেই। কারণ ব্যাটিং ধস নামক ব্যর্থতার চক্র চলমান রয়েছে।
তাই প্রশ্ন হলো, সালাহউদ্দিন, লিপু ও ফাহিমের সমন্বয়ে এই 'থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক'টি পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে কিনা? আর যদিও সব প্রশ্নের জবাব সময়ই দেবে, তারপরও হাতে কতটা বাকি আছে তা অনিশ্চিত।
Comments