কঠোর বার্তা দিতেই বাদ লিটন

Litton Das
লিটন দাসের শট। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কদিন আগে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তিন সংস্করণের অধিনায়ক হওয়ার বিবেচনায় লিটন দাসও ছিলেন। অথচ এখন এক সংস্করণে তিনি ছিটকে গেলেন দলেরই বাইরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ে কঠোর এক বাস্তবতার ছবি দেখছেন ডানহাতি ব্যাটার।

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে লিটনের ব্যাটে। তার কাছে প্রত্যাশা যদিও ছিলো অনেক বেশি। বিশ্বকাপের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে চার নম্বরে নেমে করেন করেন ২২, ৬ ও অপরাজিত ১*।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ওপেনিংয়ে ফেরানো হয় লিটনকে। দুই ম্যাচেই তিনি শূন্য রানে আউট হয়ে বিপদ ডেকে আনেন। দুই ম্যাচেই তার হন্তারক দিলশান মাধুশঙ্কা। বাঁহাতি পেসারের বলে তার আউটের ধরণে বিশেষ করে অখুশি হয়েছেন নির্বাচকরা। প্রথম ম্যাচে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হওয়ার পর পরেরটিতে আলতো শটে বিদায়। তার এমন আউটে আত্মবিশ্বাসের প্রবল ঘাটতি খুঁজে পেয়েছেন। এই দুই আউটের ধরণকে বেশ ক্যাজুয়ালও মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

জানা গেছে, লিটনকে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা গণমাধ্যমে জানানোর আগে লিটনকেই জানানো হয়। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু লিটনের সঙ্গে লম্বা আলোচনা করেন।  জানিয়ে দেন কেন তাকে ওয়ানডে স্কোয়াডে রাখা হচ্ছে না। এবং কীভাবে আবার তিনি ফিরতে পারেন।

লিটনকে বাদ দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সেখানে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা ছিলো,  'সাদা বলে লিটনের সাম্প্রতিক পারফরম্যানের কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

পরে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'নতুন বলে লিটন ভালো না করায় তারা এমন পথে হাঁটছেন।' সাদা বল নাকি নতুন বল এই দ্বিধা কাটাতে প্রধান নির্বাচককের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সাদা বলের পারফরম্যান্সের জন্যই আপাতত বাদ লিটন।

সাদা বল মানে তো টি-টোয়েন্টিও। সেখানে সর্বশেষ ১২ ম্যাচে লিটনের রান দলের সর্বোচ্চ, স্ট্রাইকরেট, গড়ও সবার চেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে টি-টোয়েন্টিতে ৯ ইনিংস ব্যাট করে লিটন ৪০.৩৭ গড় আর ১৩৭.৪৪ স্ট্রাইকরেটে দলের সর্বোচ্চ ৩২৩ রান করেছেন। তার চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলেও শান্ত করেছেন ১০৫ রান কম।  সাদা বলের পারফরম্যান্স না বলে এক্ষেত্রে কেবল ওয়ানডের পারফরম্যান্স বললে জুতসই হতো।

গত ১০টি ওয়ানডে ইনিংসে ফিফটি নাই লিটনের। বিশ্বকাপে ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ফিফটি করলেও পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুরুটা পেয়েও ইনিংস টানতে পারেননি।

ওয়ানডেতে ভালো না করায় একাদশে জায়গা হারানোর যুক্তি আছে, এই সংস্করণে তার একটা বিরতিও হয়ত প্রয়োজন। তবে স্কোয়াড থেকে একদম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে মূলত কঠোর বার্তা দেওয়ার নীতি থেকে। লিটনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পারফর্ম না করলে কারো জায়গাই নিশ্চিত না।

এতে করে দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে সিনিয়র-জুনিয়র সবার ভেতরে তৈরি হতে পারে ভালো খেলার তাড়না। আবার হীতে বিপরীত হওয়াও অস্বাভাবিক না। বাদ পড়ার ভয়ে পারফরম্যান্সেও পড়তে পারে প্রভাব।  শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডেতে লিটনের বদলে যিনি ওপেন করতে নামবেন তার উপরও চাপ তৈরি হয়ে যাবে।

২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাংলাদেশের সামনে আছে আর কেবল ৬টি ওয়ানডে। জুলাইতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ও বছরের শেষ দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনটি। এই ছয় ওয়ানডের মাঝে আছে প্রচুর টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট।

বাকি দুই সংস্করণে পারফরম্যান্সের প্রভাব ওয়ানডে দলে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে লিটনের বদলে ওয়ানডেতে যাকে সুযোগ দেওয়া হবে তাকে ঠিক প্রক্রিয়ায় রাখা হয়ে পড়তে পারে কঠিন।

গত তিন বছরে টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ রান লিটনের। টি-টোয়েন্টিতেও তাই। এই দুই সংস্করণে তিনি যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, সেটা দিয়েই ওয়ানডে দলে ফিরতে পারবেন কিনা দেখার বিষয়।

শেষ ওয়ানডের দলে না থাকা লিটনকে টেস্ট সিরিজের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে বলা হয়েছে। আপাতত ওয়ানডেতে লিটনের ফেরার লড়াইয়ের মঞ্চ হতে পারে লিস্ট-এ টুর্নামেন্টটি।

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

5h ago