বঙ্গবাজারে আগুন

পরিত্যক্ত লোহালক্কড়ের খোঁজে ভাঙারি ব্যবসায়ীদের ভিড়

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুড়ে যাওয়া মার্কেট এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লোহালক্কড়, টিন, রড ও এঙ্গেলের খোঁজে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুড়ে যাওয়া মার্কেট এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লোহালক্কড়, টিন, রড ও এঙ্গেলের খোঁজে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার ও এর আশপাশের বাজারগুলোতে আগামীকাল শুক্রবার থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হবে।

তবে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর থেকেই কয়েকশ মানুষ সেখানে ভিড় জমান।

গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে সরেজমিনে পুড়ে যাওয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মীদের তোয়াক্কা না করেই অক্ষত-আধপোড়া টিন, এঙ্গেল, রড—যে যার মতো সরিয়ে নিচ্ছেন।

নিরাপত্তাকর্মীদের তোয়াক্কা না করেই অক্ষত-আধপোড়া টিন, এঙ্গেল, রড—যে যার মতো সরিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারামারিও হয়েছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

বঙ্গবাজারের পাশের আদর্শ মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী আমির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে ২ হাজার ৯৬১টি দোকান ছিল। কোনো দোকানমালিক যদি পরিচয় দিয়ে এসব মালপত্র নিতে চায়, তাহলে সেটা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। কিন্তু এখন যে যেভাবে পারছে, এখান থেকে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে বাধা দিতে গেলে উল্টো হেনস্তা হতে হচ্ছে।'

বঙ্গবাজারের হানিফ ফ্লাইওভারের সামনে কয়েকটি টিন ও লোহার বার নিয়ে যাচ্ছিলেন মো. আলী (২৫)। বঙ্গবাজারের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে থামিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার এখানে দোকান ছিল।'

দোকানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলএমএমএস স্পোর্টস দোকানটি তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মালিকের নাম বলতে পারেননি।

এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।

জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী হারুন শেখ বলেন, 'তিনি ৪-৫টা দোকানের মালামাল জড়ো করেছেন। বলছেন তার দোকান ছিল। কিন্তু মালিকের নাম বলতে পারছেন না। এ নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি করেছেন।'

নিরাপত্তাকর্মীদের তোয়াক্কা না করেই অক্ষত-আধপোড়া টিন, এঙ্গেল, রড—যে যার মতো সরিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি, মারামারিও হয়েছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

কিছুদূর এগোতেই দেখা গেল কয়েকজনের মারামারিতে একজনের মাথা ফেটে গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার নাম সজীব শিকদার। এখানে আমার দোকান ছিল, সুমাইয়া প্যান্ট হাউস নাম। আমি আমার দোকানটা দেখতে আসছিলাম। ওরা বলছে, আমি নাকি মালামাল নিচ্ছি। এই মারামারির মধ্যে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।'

নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, 'কে মাথা ফাটিয়েছে জানি না। তারা নিজেরাই মারামারি করেছে। মারামারির মধ্যে মাথা ফেটেছে।'

এনেক্সকো টাওয়ারের পাশে পোড়া জায়গায় টিন নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন এক নারী। কথা বলে জানা যায় তার নাম রহিমা বেগম। তিনি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। সকাল থেকে দোকান বন্ধ রেখেই বঙ্গবাজারে এসেছেন তিনি।

রহিমা বলেন, 'আমার বাসা রায়েরবাগে। কালকে টিভিতে খবর পেয়ে দেখতে আসলাম।'

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ৬ বস্তা ভাঙারির মালামাল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৪ জন নারী। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।

জানতে চাইলে জানান, তারা কামরাঙ্গিরচর থেকে এসেছেন। এখান থেকে কিছু পোড়া টিন নিয়েছেন। কোনো রড, এঙ্গেল নেইনি। সবমিলিয়ে তারা যা নিয়েছেন, তা ১২০ কেজির মতো হবে।

দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, 'এগুলো কামরাঙ্গিরচরে ৩০ টাকা করে বেচি। এখানে ২০ টাকা বলছে।'

তাদের সঙ্গে মালপত্র নিয়ে দর কষাকষি করছিলেন মো. সুমন। তিনি কল্যাণপুর নতুন বাজার বস্তি থেকে এসেছেন।

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুড়ে যাওয়া মার্কেট এলাকা থেকে পরিত্যক্ত লোহালক্কড়, টিন, রড ও এঙ্গেলের খোঁজে ভিড় করেছেন কয়েকশ মানুষ। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

জানতে চাইলে সুমন বলেন, 'আমরা ৮-১০টা ভাঙারির দোকানের লোক একসঙ্গে এসেছি। পোড়া জায়গায় ভাঙারির মালপত্র বিক্রি হয়, সেই ধারণা থেকেই এখানে আসা।'

তিনি আরও বলেন, 'এই টিনগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে টিনে টোকা দিলে ৩ ভাগের ১ ভাগও থাকবে কি না সন্দেহ। এ কারণে কেজিতে ২০ টাকার বেশি দিতে পারছি না। এমনিতে কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়।'

'এখানে দুই-আড়াইশ ভাঙারির দোকানদার এসেছে। মোটামুটি ঢাকা শহরের সবাই এসছে। অনেকে ভ্যানগাড়ি, পিকআপ নিয়ে এসছে। প্রচুর মালপত্র বিক্রিও হয়েছে', বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোরে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। যা পরে ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গমার্কেটের সঙ্গে লাগোয়া মহানগর শপিং মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, ইসলামিয়া ও এনেক্সকো টাওয়ারে।

Comments

The Daily Star  | English
US airstrike on Iran

Strikes on Iran mark Trump's biggest, and riskiest, foreign policy gamble

The dramatic US strike, including the targeting of Iran’s most heavily fortified nuclear installation deep underground, marks the biggest foreign policy gamble of Trump’s two presidencies and one fraught with risks and unknowns.

1h ago