শিশুর দাঁতের যত্নে করণীয়

আমাদের শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো দাঁত। শিশুর সুস্থভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন এই বিশেষ অঙ্গের উপযুক্ত পরিচর্যা ও সংরক্ষণ। এ প্রসঙ্গে কিছু টিপস দিয়েছেন ডা. সাব্বির হাসান।

 

বয়স ভেদে দাঁতের সাধারণ রোগের উপসর্গ এবং কারণ শিশুর জন্মের ৬ মাস পর থেকে দুধ দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং প্রায় ৩ বছর বয়স পর্যন্ত উঠতে  থাকে। তাই ৬ মাস বয়স থেকেই দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসময় শিশুকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নরম খাবার দেয়া হয়। ফলে ল্যাকটোজ,  গ্লুকোজ ও অন্যান্য পলিস্যাকারাইড লম্বা সময় ধরে দাঁতের সংস্পর্শে থাকে। শিশুকে খাবার খাওয়ানোর পর ভালো ভাবে পরিষ্কার না করলে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে স্যালাইভা মিশে মিনারেল,  ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির সংস্পর্শে এসে খাবারের ফার্মেন্টেশন হয়। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়,  যা দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। এভাবেই দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয়ের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তা দাঁতের ডেন্টিন ও পাল্প পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে পারে। শিশুর দাঁতে বাদামি বা কালচে দাগ দেখলে দ্রুত ডেন্টিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত ৭-৯ বছরের শিশুদের সামনের দাঁতগুলোর কিছুটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে থাকে। এবিষয় নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই,  পার্মানেন্ট দাঁত উঠে গেলে তা আপনা আপনি সঠিক পজিশনে চলে যায়। 

খাবার শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও পুষ্টির জন্য সবধরনের খাবার প্রয়োজন,  তবে ক্যান্ডি,  মিষ্টি জাতীয় খাবার,  জুস ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। সাধারণত অ্যাসিডিক ফুড,  যেমন-  ল্যাকটিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার দাঁত ক্ষয়ের প্রধান কারণ। অতিরিক্ত চকোলেট,  আইসক্রিম খাওয়া যাবেনা এবং এ জাতীয় খাবার খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। সেটি সম্ভব না হলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ারপর আঁশ জাতীয় ফল,  যেমন-  পেয়ারা,  আপেল,  নাশপাতি ইত্যাদি খাওয়া উত্তম। ফলে সহজে দাঁতে ক্যাভিটি সৃষ্টি বা ব্যাকটেরিয়া জমতে পারেনা। দুই দাঁতের মধ্যবর্তী ফাঁকে খাবার লেগে থাকলে দাঁতের ক্ষতি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।

 

শিশুদের দাঁতের বিশেষ যত্ন

দাঁতের যত্নের ক্ষেত্রে ৩ বছরের কম বয়সের শিশুকে খুব কোমল ব্রিসেলযুক্ত ব্রাশ বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে,  টুথপেস্ট ব্যবহার ছাড়াই দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করাতে হবে। এমনকি দাঁত ওঠার আগেও শিশুকে খাওয়ানোর পর আঙুলে পাতলা ভেজা কাপড় পেঁচিয়ে শিশুর মাড়ি ও জিহ্বা আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুর বয়স ৩ বছর পার হলে ধীরে ধীরে তাকে নরম ব্রিসেলযুক্ত শিশুর ব্যবহার উপযোগী টুথব্রাশ ও অল্প পরিমাণে টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কারে অভ্যস্ত করতে হবে। দাঁত নির্দিষ্ট বয়সে স্বাভাবিক ভাবে না পড়লে অবশ্যই ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। দুর্ঘটনাজনিত কারণে শিশুর দুধ দাঁত পড়ে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দাঁতটি পুনরায় স্থাপন করা যায়। এক্ষেত্রে,  পড়ে যাওয়া দাঁতটিকে দ্রুত নরমাল স্যালাইন (০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড) দিয়ে এবং তা না থাকলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে যেখান থেকে দাঁতটি পড়েছে সেখানে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তা পুনরায় মাড়ির সঙ্গে আটকে যায়। শিশুর দুধ দাঁত সাধারণত ৬ বছর বয়স থেকে পড়া শুরু হয়, কোনো কারণে পার্মানেন্ট দাঁত উঠতে দেরি হলে এক্সরের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং প্রয়োজনে দাঁত কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করা যায়।

 

বিভিন্ন ঋতুতে দাঁতের বিশেষ যত্ন

বিভিন্ন ঋতুতে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর দাঁতে কোনো মাইক্রোস্কোপিক স্টোন জমা হয়েছে কিনা সেবিষয়ে অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। দাঁতে ব্যথা বা শিরশির অনুভূত হলে গরম পানিতে লবণ দিয়ে দিনে অন্তত ২-৩ বার কুলকুচা করতে হবে। ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে যদি ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া সম্ভব না হয়,  তখন তাৎক্ষণিক ভাবে ব্যথা কমানোর জন্য লবঙ্গ ছেঁচে সেটির রস নরম তুলো দিয়ে যেখানে ক্যারিজ হয়েছে, সেখানে লাগাতে হবে।

 

বর্জনীয়

অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার,  ক্যান্ডি,  আঠালো বা দাঁতের গায়ে লেগে থাকে এমন খাবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়ানো যাবেনা এবং খাওয়ারপর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুদের সাধারণ বদভ্যাসগুলো, যেমন- আঙুলচোষা, জিহ্বাচোষা, ঠোঁটচোষা, নখকামড়ানো ইত্যাদি দাঁতের স্বাভাবিক গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে, তাই এসব থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে।

 

বিশেষ সতর্কতা

অনেকেই দাঁতে ব্যথা অনুভূত না হওয়া পর্যন্ত ডেন্টিস্টের কাছে যান না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দাঁতের রোগের কারণে চিকিৎসা করানো হয়; কিন্তু পরবর্তীতে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করার ফলে অন্যস্থানে অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী দাঁত বা মাড়িতে পুনরায় ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত দু’বার দাঁত মাজার পাশাপাশি কুলকুচা এবং ফ্লসিংয়ের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া দাঁতের যেকোনো সমস্যার সমাধানে অবশ্যই বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নিয়মিত পরিচর্যা ও ৬ মাস অন্তর চেকআপের মাধ্যমে দাতের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।

পরামর্শদাতা

ডা. মো. সাব্বির হাসান

বিডিএস, এমপিএইচ

ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন

ছবি : সংগ্রহ

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

1h ago