ফেনীতে বন্যায় ২৩৭১ হেক্টর জমির ফসল ও ১২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি

সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যার পানিতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ফসল, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ, কৃষি ফসল ও সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে, ইতোমধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আজ রোববার দুপুরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
গত ৮ জুন থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলনিয়া নদীর ১২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও সদর উপজেলা প্লাবিত হয়।
কর্মকর্তারা জানান, এবারের বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারা আরও জানান, বন্যায় ফেনী জেলার ২ হাজার ৩৭১ হেক্টর কৃষি জমির ফসল, ২ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ, ১২৫ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, জেলার ২ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক স্থানের মাছের খামার ও পুকুর পানির নিচে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্যা বলেন, জেলায় ২ হাজার ৩৭১ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা ৯৩৪ হেক্টর, আদা ৭ হেক্টর, আউশ ধান ৮৫৫ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ৫৫৭ হেক্টর, মরিচ ১৪ হেক্টর, হলুদ ৩ দশমিক ৫০ হেক্টর।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় ২-৪টি প্রাণি মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন মুরগির খামারসহ ২০-৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, বন্যায় ১২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে, ফুলগাজী উপজেলায় ১০০ কিলোমিটার এবং পরশুরাম উপজেলায় ২০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, এখনো ২০-২৫ শতাংশ সড়ক পানির নীচে রয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফেনীর পরশুরাম-বিলোনিয়া-ফেনী ও ছাগলনাইয়া সড়কে পানি ছিল। এখন পানি সরে গেছে। যান চলাচল শুরু করেছে। সড়ক বিভাগের বড় ক্ষতি হয়নি।'
পরশুরাম উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের কৃষক আক্কাছ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর বন্যার পর আর কোনো ফসল করতে পারিনি। চলতি বছর আমন চাষের জন্য ১০ কেজি আমন বীজতলা প্রস্তুত করেছিলাম। বন্যায় তা পানির নীচে তলিয়ে গেছে। তাই এবার আর আমন চাষ করা সম্ভব হবে না।'
চিতলিয়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক শাহ জাহান, আবুল কাশেম, আলী আকবর জানান, আমন ফসলের জন্য প্রস্তুত করা বীজতলা চলতি বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়েছে।
পরশুরাম পৌরসভার বাসিন্দা সিএনজিচালক মামুন হোসেন বলেন, 'বন্যায় পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে দেখি টিনসেড ঘরের ভেতরে থাকা বিছানা ও আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা না থাকায় ঘর মেরামত করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।'
পরশুরাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, তার এক আত্মীয়ের মাছের খামারের ৬০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বন্যায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রী ও মালামাল নিয়ে গাড়ি চালানো মুশকিল। আয়-রোজগার না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।'
জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৮ জুলাই থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া এবং ফেনী সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলার ১১০টির মতো গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে এখন বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হলেও কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে।'
Comments