বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে ভয়? এই কৌশলগুলো মেনে চলুন

বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমণ
ছবি: সংগৃহীত

নতুন বাবা-মায়েরা যে ব্যাপারটি নিয়ে অনেক বেশি ভোগেন, তা হচ্ছে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর থেকে আগের মতো ঘোরাঘুরি করতে পারেন না। আসলে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়াটা দূর থেকে অনেক বেশি ঝামেলার মনে হলেও কিছু কৌশল খাটিয়ে চললে এটি তেমন কোনো বিষয়ই নয়। বরং ঝক্কির চেয়ে আনন্দটাই বেশি হবে।

ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণ শুরু

অনেকেরই মাথায় চিন্তা থাকে যে সঙ্গে বাচ্চা থাকা মানেই স্বতঃস্ফূর্ত ভ্রমণের দিন শেষ, কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে। শিশুদেরকে যদি কম বয়স থেকেই বিভিন্ন নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত করে তোলা যায়, তবে সেটি তাদের জন্য ভালো। নতুন ও ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে মেলামেশা করিয়ে নেওয়ার অভ্যাস করিয়ে নিলে দেখা যাবে বাচ্চারাও আপনার সঙ্গে ঘোরাঘুরিটা উপভোগ করছে।

উপযুক্ত গন্তব্য বেছে নিন

ঘোরাঘুরির জন্য ঠিকঠাক গন্তব্য বেছে নেওয়াটা জরুরি। বাচ্চার বয়স যদি মোটামুটি মতামত নেওয়ার মতো হয়, তবে গন্তব্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তার যৌক্তিক মতামতও নিন। এতে করে তারাও আগে থেকে জানতে পারবে যে আসন্ন সফরে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। ভ্রমণের পরিকল্পনায় বাচ্চাদেরকে রাখলে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং ভয়ও পাবে না।

এমন সব জায়গা বেছে নিন, যেখানে বাচ্চাদের খেলার সুযোগ আছে, যেমন পুল, প্লেগ্রাউন্ড, খোলা মাঠ ইত্যাদি। আপনি আগে গিয়েছেন, এমন নিরাপদ স্থানগুলোতেও তাদের নিয়ে যেতে পারেন। এতে করে হারিয়ে যাওয়ার ভয় কম থাকবে, আর আপনার নিজের আনন্দেও ভাটা পড়বে না।

তল্পিতল্পা হোক হালকা

প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনিমালিজম মেনে চলবেন। স্মার্টভাবে জিনিসপত্র গোছগাছ করাটা এখানে আবশ্যিক। তাই আগে থেকেই একটি চেকলিস্ট তৈরি করে নিন, যাতে করে অতিরিক্ত জিনিসপাতি না নেওয়া হয়। একেবারে ছোট বাচ্চা সঙ্গে থাকলে তাদের জন্য আগেই অনেক বেশি ডায়াপার, বেবি ফুড ও অন্যান্য পণ্য দিয়ে ব্যাগ বোঝাই না করে বরং গন্তব্যস্থল থেকে কেনার সুযোগ থাকলে সেটিই বেছে নিন। এমনিতে রাস্তার জন্য দুয়েকটি রেখে নিতে পারেন। তবে বাচ্চার প্রিয় খেলনা, গরম কাপড়ের মতো দরকারি জিনিস ভুলে গেলে চলবে না।

লাগেজের জন্য উজ্জ্বল রং বেছে নিন, যাতে করে এয়ারপোর্টে লাগেজ খুঁজতে গিয়ে ঝক্কি না পোহাতে হয়। দুই বছরের ছোট বাচ্চাদের জন্য সুবিধামতো স্ট্রলার বা সফট লিশ ব্যবহার করতে পারেন।

যাত্রার বিনোদন

যাত্রা যদি বেশ দীর্ঘ হয়, তবে অবশ্যই বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের কিছু ব্যবস্থা হাতের কাছেই রাখুন। কালারিং বুক, পাজল বা পছন্দের কার্টুন ডাউনলোড করে নিন আগে থেকে। এমনিতে স্ক্রিনটাইমে নজর রাখলেও এ সময়টায় একটু ঢিল দিলে বাচ্চার মন-মেজাজ ভালো থাকবে। পরে ঘোরাঘুরির সময়েও ঝামেলা কমবে।

অন-বোর্ড এমিনিটির সদ্ব্যাবহার করুন

বিমানযাত্রায় বিভিন্ন দ্রব্য পাওয়া যায়, যেমন ফ্যামিলি চেক-ইনের ক্ষেত্রে ব্যাসিনেট, গরম পানি ইত্যাদি থেকে থাকে। অনেক এয়ারলাইনসে তো পারিবারিক যাত্রার জন্য আলাদা করে বিমানবন্দর থেকে অন্য গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত সাহায্য করা হয়। তাই সম্ভব হলে প্রথমেই কাপল বোর্ড নিয়ে নিন, যাতে বাচ্চারা আসার আগে ঝামেলাদায়ক বড় বড় লাগেজগুলো সরিয়ে নেওয়া যায়।

হালকা কিছু নাশতা সঙ্গে রাখুন

খিদে পেলে বাচ্চাদের মেজাজ খুব খিটমিটে হয়ে যায়। তাই হাতের আশেপাশে ওদের পছন্দের কিছু নাশতা রাখুন। অনেক হোটেলে রেফ্রিজারেটর আগে থেকেই দেওয়া থাকে। সম্ভব হলে খাবার গরম করার ব্যবস্থা আছে কি না, সেটিও দেখে নিন।

কিছু রুটিন মানতেই হয়

একদিকে বাচ্চাদের ঘুমের নিয়মিত রুটিন, অন্যদিকে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াবার ইচ্ছা। এই দুয়ের মধ্যে তালমিল আনতে হবে। ছুটিছাটায় কোথাও ঘুরতে গেলেও তাদেরকে রাতের সময়টা ছাড়াও মাঝেমধ্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারেন, এতে করে নতুন পরিবেশটা তাদের জন্য আরো আরামদায়ক হবে।

এছাড়া কখনো কোনো পরিকল্পনা হুট করে বদলে গেলে বা কোনো বাধা-বিপত্তি এলে মাথা ঠান্ডা রাখুন। কারণ আপনি অস্থির হলে বাচ্চারাও অশান্ত হয়ে উঠবে।

কুশন ডেইস, ডাউনটাইম ও প্লেটাইম

ভ্রমণ যদি হয় দেশের সীমান্তের বাইরে, তবে সেই দেশের সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে 'কুশন ডেইস' এর মতো কৌশল ব্যবহার করুন। এতে করে জেট ল্যাগের মতো বিষয় থেকে খুব সহজে রেহাই পাওয়া যাবে। আস্তেধীরে ঘোরাফেরা শুরু করুন। এজন্য হাতে বাড়তি কিছুটা সময় রাখবেন।

একা ঝাড়া হাত-পা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমণটা নিঃসন্দেহে আলাদা। বাচ্চাদের বিভিন্ন সময় একটু বিরতির দরকার হয়। তাই পার্ক বা স্থানীয় দর্শনীয় জায়গাগুলোতে তাদেরকে কিছু সময় হাঁটতে বা নিজের মতো থাকতে ছেড়ে দিন, কিংবা কিছুক্ষণ হোটেল পুলের জলে খেলা করতে দিন। এতে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়ানোর ফলে তারা অতিমাত্রায় উত্তেজিত বোধ করবে না, একইসঙ্গে ভ্রমণের আনন্দটাও বুঝতে পারবে।

প্রয়োজনে সাহায্য নিন

যে বাবা-মায়েরা নিজেদের মধ্যে একা সময় কাটাতে আগ্রহী, তারা চাইলে সঙ্গে করে বাচ্চাদের জন্য সহায়ক কাউকে রাখতে পারেন। হোটেল বা বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে বেবিসিটারের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। এই কৌশলটির মাধ্যমে দম্পতিরা নিজেদের জন্য সময় বের করতে পারেন সহজেই।

প্রথমেই দীর্ঘ যাত্রা নয়

প্রথমবার বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে খেয়াল রাখবেন, যেন গন্তব্যটা আশেপাশেই হয় এবং খুব বেশি সময়ের না হয়। পরে দূরবর্তী স্থানে যাওয়া যাবে, কিন্তু প্রথম ধাপটা বাচ্চার জন্য সহজ করাটা জরুরি। বাড়ির আশপাশে হলে তারা ভয় পাবে কম এবং যদি ভ্রমণের বিষয়টি পরিকল্পনা মাফিক নাও এগোয়, তখন চাইলেই কম সময়ের মধ্যে ফিরে আসা যাবে। এই বিষয়টি আপনাদের বাচ্চা ও বাবা-মা, দুই পক্ষের জন্যই যেহেতু পরীক্ষামূলক, তাই আস্তেধীরে এগোনোই ভালো।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Exporters caught off guard by India’s import curbs

"This sudden decision could severely disrupt bilateral trade"

8h ago