ঢাকার কাছেই নরসিংদী, ঘুরে আসুন এ জেলার দর্শনীয় স্থান

নরসিংদী ভ্রমণ
মনু মিয়া জমিদার বাড়ি। ছবি: সালসাবিল

বৈচিত্র্যে ভরা বাংলাদেশে প্রতিটি জেলার রয়েছে নিজস্ব রূপ, গুণ আর বিখ্যাত জিনিস। আপনি কি জানেন সাগর কলা আর লটকনের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা? বলছি নরসিংদীর কথা।

ঢাকার কাছেই নরসিংদী। একদিন সময় করে ঘুরতে চলে যেতে পারেন সেখানে। চলুন জেনে নিই এই জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর নাম।

লটকন বাগান

টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন সবার পছন্দের তালিকায় সবসময়ই থাকে। ভালো লটকন পাওয়া যায় নরসিংদী জেলায়। এখানে রয়েছে প্রচুর লটকন বাগান। নরসিংদী ঘুরতে গেলে শিবপুর উপজেলায় অবশ্যই ঘুরে আসবেন লটকন বাগান থেকে।

লটকন বাগান
নরসিংদীর বেলাব উপজেলার গিলাবে এলাকায় লটকন চাষ। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

ঢাকা থেকে বাসে কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে সৃষ্টিগড় বা মরজাল বাসস্ট্যান্ড নামতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা করে লটকন বাগান ঘুরে দেখতে পারবেন।

ড্রিম হলিডে পার্ক

এটি নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা চৈতব এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসহড়ের পাশে অবস্থিত একটি থিম পার্ক। এখানে ছোট-বড় সবার জন্য রয়েছে মজার সব রাইড। বিভিন্ন রাইডের মাঝে প্যাডেল কোস্টার, বুল রাইড, কাইট ফ্লাইং, স্পিড বোট, নাইন ডি মুভি, মোটরবাইক, ওয়াটার কার, বুলেট কার, গোস্ট হাউস, বুলেট ট্রেন পাবেন। এখানে চাইলে পিকনিকও করতে পারবেন।

ড্রিম হলিডে পার্ক
ড্রিম হলিডে পার্ক। ছবি: ড্রিম হলিডে পার্কের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত

যদি রাতে থাকতে চান তবে আপনি ড্রিম হলিডে পার্কের পাশেই হোটেল পেয়ে যাবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মহাখালী, কমলাপুর যেকোনো স্থান থেকে নরসিংদীর বাসে উঠলেই আপনাকে পৌঁছে দেওয়া হবে আপনার গন্তব্যে। ভাড়া ৮০-১০০ টাকার মাঝে হয়ে থাকে।

ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি

ড্রিম হলিডে পার্ক সংলগ্ন মেহেরপাড়ায় অবস্থিত এই বাড়িটি নরসিংদীর একটি দেখার মতো চমৎকার স্থান। এই বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে, তবে ধরে রাখা হয়েছে পুরোনো রূপ। এই বাড়ির সংস্কারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা কাঠ, টালি ব্যবহার করা হয়েছে।

ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি
ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি। ছবি: সালসাবিল

তাছাড়া ব্রিটিশ আমলের আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে অন্দরমহল। ঢাকা থেকে পাঁচদোনায় এসে অটোরিকশায় সহজেই যেতে পারবেন ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িতে।

মনু মিয়া জমিদার বাড়ি

কালের আবর্তে বাংলাদেশের বহু জমিদার বাড়ি তার নিজস্ব রূপ হারিয়ে ফেললেও নরসিংদীর মনু মিয়া জমিদার বাড়ি আজও রয়েছে সগৌরবে, স্বরূপে। এটি পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি খুবই সুন্দর আর গোছানো। এটি মূলত ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ির তিনটি পৃথক বাড়ির একটি।

পাশাপাশি অবস্থিত বাকি দুটি বাড়ি হলো মৌলভী আবদুল কবিরের বাড়ি এবং নাজমুল হাসানের বাড়ি। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নরসিংদীগামী যেকোনো বাসে উঠে ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ি বললেই আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দেওয়া হবে। মূলত আপনাকে নামানো হবে ঘোড়াশাল ব্রিজে। ব্রিজ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে অটোরিকশা নিলে তারা সোজা মনু মিয়া জমিদার বাড়ি পৌঁছে দেবে আপনাকে।

সোনাইমুড়ি টেক 

শহরের কোলাহল থেকে বেড়িয়ে লাল মাটির পাহাড়ি টিলা আর পাহাড়ের ওপর সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান? খুঁজছেন ঢাকার আশপাশে এমন জায়গা? তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সোনাইমুড়ির টেক। নরসিংদী থেকে শিবপুর যাওয়ার পথে আপনার নজর কাড়বে সবুজ গাছগাছালি আর অসংখ্য লাল মাটির টিলা।

শুটিং স্পট হিসেবে জনপ্রিয় এই জায়গায় প্রায়ই বিভিন্ন নাটক ও সিনেমার শুটিং হয়ে থাকে। সোনাইমুড়ি টেকের পাশেই কুমারটেক। এখানে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছরের পুরোনো মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অল্প খরচে ঘুরে আসার সুন্দর একটা জায়গা এটি। নরসিংদী থেকে শিবপুরের কুন্দেরপাড়া পৌঁছে রিকশায় চড়ে সোনাইমুড়ি টেক পার্কে যেতে পারবেন সহজেই।

সরিষা খেত

সরিষা খেত দেখতে ইচ্ছা করছে? এখনই রওনা দিয়ে দিন নরসিংদী। নরসিংদীর চান্দের পারায় রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা খেত। একটা সুন্দর দিন কাটিয়ে আসুন ঢাকার কাছের এই সরিষা খেত থেকে।

সরিষা খেত
সরিষা খেত। ছবি:সাইমা তাবাসসুম উপমা

গুলিস্তান বা মহাখালী থেকে বাসে চড়ে নরসিংদীর নতুন বাস স্টপেজে চলে যান। সেখান থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশা করে সাটিরপাড়ায় রজনীগন্ধা মোড়ে। এবার নেমে আরেক অটোরিকশা করে চলে যান সুইচ গেট বাজার অথবা চান্দের পাড়া।

এ ছাড়াও উয়ারী বটেশ্বর, লক্ষ্মণ সাহার জমিদার বাড়ি, নবীন চন্দ্র সাহার জমিদার বাড়ি, বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতি জাদুঘর নরসিংদীর উল্লেখযোগ্য জায়গা।

ঢাকা থেকে নরসিংদী যেভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মহাখালী, কমলাপুর থেকে নরসিংদীর বাস পাবেন। বাস ভাড়া ৭০-১০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অথবা ট্রেনেও যেতে পারেন।

কী খাবেন

লটকনের সময় গেলে অবশ্যই লটকন খেতে এবং সঙ্গে করে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। নরসিংদীর সাগর কলা বেশ বিখ্যাত। তাই এটাও মিস করবেন না। এ ছাড়া শিবপুরের কলেজ গেটের গোল চত্বরের বাম দিকে হামদু হোটেল নামে পুরোনো একটি হোটেল আছে যেটি খুব প্রসিদ্ধ। দুপুরে এখানে খেতে পারেন।

এখানকার ভর্তা খুবই সুস্বাদু। আর গরুর মাংস, মাষকলাইয়ের ডাল খেতে কোনোভাবেই ভুলবেন না। কফি খেতে হলে শিরপুর মিলানায়তনের বিপরীত দিকে ইনায়াস কিচেনে চলে যান। তাছাড়া এখানকার বাংলা চাইনিজও বেশ ভালো। রাতে ফেরার পথে নিরালা হাড্ডি হোটেলের গরুর শিনার হাড্ডি আর মাটির চুলায় রান্না করা কালাভুনা আপনাকে নিরাশ করবে না। সবশেষে শিবপুর বাজারে বিখ্যাত লাক্কার মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি এবং পেয়ারা মিষ্টি নিজেও খাবেন, বাসার জন্যও নিয়ে যাবেন! 

  

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago