বিয়ের উপহার মানেই কি ব্লেন্ডার আর কাপ-প্লেট? বিকল্প কী হতে পারে

এক সময় বিয়েতে নবদম্পতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিভিন্ন রকম উপহার দেওয়া হতো। তাই নতুন বউ তার পঞ্চম আইসক্রিম বোল সেটটি খুলতে খুলতেও মুখে জোর করে হাসি ধরে রাখতেন। উপহার বলতে তখন বস্তুগত আশীর্বাদই বোঝানো হতো।
বর্তমানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপহারের ধারণাটি পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন উপহার দেওয়ার সময় হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকেন সবাই। মুড বোর্ড, কালার প্যালেট আর ডিজিটাল ওয়ালেটের যুগে বিয়ের উপহার এখন আর নবদম্পতির জন্য কোনো চমক নয়, বরং পরিকল্পিত এক আয়োজন।
এখন আর কেউ সিরামিকের জিনিসপত্র চায় না। আইসক্রিম বোল সেট তো একেবারেই না। কে জানে হয়তো তাদের কাছে আগে থেকেই একটি আইসক্রিম বোল সেট আছে! তাদের যা দরকার, তা হলো বিশাল বিয়ের খরচ সামাল দেওয়ার জন্য একটু আর্থিক সহায়তা। এখানেই শুরু হয় টাকার চমক, এমন একটি উপহার যা সহজেই ক্লাচ বা খামের ভেতর এঁটে যায়।
নিজের নতুন জীবন শুরু করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তাসফিয়া তাহরিন বলেন, 'আমার জন্য বিয়েতে সবচেয়ে ভালো উপহার ছিল নগদ টাকা, যা ব্যবহার করে আমি এবং আমার স্বামী আমাদের সংসার জীবনের শুরুতে এসি, ফ্যান, ফ্রিজ এবং অন্যান্য গৃহস্থালী সামগ্রী কিনতে পেরেছিলাম। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে টাকাটা খুব ভালো মতো কাজে এসেছিল আমাদের।'
আরও অনেক নবদম্পতি তাসফিয়ার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।
তাদের কেউ বিয়েতে উপহার পাওয়া নগদ অর্থ দিয়ে ঘর সাজিয়েছেন, আবার কেউ বা হানিমুনে বেরিয়ে পড়েছেন। বলা বাহুল্য, টাকা এমন একটি উপহার যা পেলে সবাই বেশ খুশি হয় এবং এটি খুব ভালোমতো কাজে লাগানো যায়।
এখন একটি আলোচিত বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। আর তা হলো বিয়ের উপহারে ক্রোকারিজ! যদিও ক্রোকারিজকে উপহারের ভিলেন মনে করা হয়, তবে এগুলোর উপকারিতা কিন্তু কম নয়। যে নবদম্পতি বিয়ের পর নিজের বাসায় উঠবে এবং সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজছে, তাদের জন্য একটি ভালো ডিনার সেট বা রান্নার প্যান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের উপহার আপনাকে গোল্ডেন রিম বা ফুলপাতা আঁকা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঝামেলা থেকে বাঁচাবে। তবে মনে রাখবেন, রান্নাঘরের জিনিসগুলো যেন আধুনিক, ভালো মানের এবং অবশ্যই মাইক্রোওয়েভ-সেইফ হয়। উপহার কেনার সময় অতিরিক্ত জাঁকজমকপূর্ণ জিনিসের চেয়ে জিনিসের কার্যকারিতা কতটুকু এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।
৩০ বছরের সাফিন হাওলাদার বলেন, 'বিয়ের শুরুতে আমরা এতগুলো ক্রোকারিজ পেয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে যখন একটু সময় নিয়ে ভাবলাম, বুঝতে পারলাম যে এই জিনিসগুলো আমাদের অনেক কাজে লাগছে। আমার মনে হয় একই ধরনের ক্রোকারিজ অনেকগুলো পাওয়া স্বাভাবিক। কারণ সবাই তো জানে না কে কী উপহার দিচ্ছে। তাই যেগুলো ডাবল বা ট্রিপল হয়েছে, সেগুলো আমরা আমাদের কাজিনদের দিয়ে দিয়েছি, যা ওদেরও বেশ কাজে লেগেছে।'
যদি নগদ অর্থ বা কোনো ক্রোকারিজ উপহার দিতে না চান তাহলে অনায়েসে বেছে নিতে পারেন গিফট কার্ড। গিফট কার্ড সরাসরি টাকা না হলেও টাকার মতোই কাজে আসে। এতে নবদম্পতি নিজেদের পছন্দ মতো জিনিস বেছে নিতে পারে এবং আপনিও প্রশংসা পাবেন। ব্যক্তিগত পরিসরে হাত না দিয়েই এটি দারুণ এক উপহার হতে পারে। প্রিয় কোনো রেস্টুরেন্ট বা হোম ডেকরের দোকানের গিফট কার্ড দিয়ে নবদম্পতিকে খুশি করে তুলতে পারেন খুব সহজে।
এক বছর আগে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করা তাসনিয়া ইশা বলেন, 'আমি আমার প্রিয় একটি ব্র্যান্ড থেকে গিফট ভাউচার পেয়েছিলাম, যার মূল্য ছিল অনেক। আমি ও আমার স্বামী সেখানে কেনাকাটা করতে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম! আমরা যেসব শাড়ি বা পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছিলাম সেগুলো গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অন্যদিকে গিফট কার্ডের সবচেয়ে ভালো দিক যেটা হয়েছে, আমরা নিজেদের পছন্দে কেনাকাটা করতে পেরেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'টাকাও আমার জন্য খুব দারুণ একটা উপহার ছিল। আমি আর আমার স্বামী সেই টাকাতেই দুই সপ্তাহের জন্য থাইল্যান্ড ঘুরে এসেছিলাম!'
এখনো অনেক মানুষ আছেন যারা প্লেট-ব্লেন্ডারের মতো জিনিস বা আসবাবপত্র উপহার দেওয়ার সেই ধারাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন। তবে আধুনিক যুগের দম্পতিরা এগুলো দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। চিন্তা করতে থাকেন, এগুলো কি অনলাইনে বেঁচে দেবেন, না কী করবেন। তাহলে কী দেওয়া যায়? সোজা কথা বলতে গেলে, প্রথমত টাকা এবং দ্বিতীয়ত আরও টাকা! তৃতীয়ত কিছু ব্যবহারযোগ্য ক্রোকারিজ। চতুর্থত কাজে লাগার মতো উপহার যেমন ডিনার ভাউচার, স্পা ডে বা গিফট কার্ড। পঞ্চমত, যদি আপনি সত্যিই অন্য কিছু উপহার দিতে চান, তাহলে সেটা যেন হয় দৃষ্টিনন্দন, ব্র্যান্ডেড আর সহজে বদলানো যায় এমন কিছু।
বাঙালি বিয়ে যতই হট্টগোলপূর্ণ, দীর্ঘ, আর ধাঁধার মতো মনে হোক না কেন, উপহার দেওয়ার নিয়ম কিন্তু একেবারেই সহজ। চিন্তা করে উপহার দিন, কাজে লাগে এমন উপহার দিন, আর যদি সেটাও না পারেন তাহলে টাকা দিন। কারণ উপহার মনের মতো না হলে কষ্ট পেতে দেখলেও, কেউ খামে ভরা টাকা পেয়ে দুঃখ পেয়েছে- এমনটা শুনেছেন কখনো?
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments