বদভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন

বদভ্যাস দূর করার উপায়
ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে, মানুষ অভ্যাসের দাস। তবে বহুবার শোনা এই কথাটি যখন নিজের ক্ষেত্রে সত্যি হয়ে দেখা দেয়—তখনই শুধু মানুষ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারে। অবশ্য অভ্যাস আর বদভ্যাসের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে। সবার আগে সেই ফারাকটি বুঝতে হবে।

আমাদের সকলেরই জীবনে হয়তো কিছু না কিছু বদভ্যাস থাকে। আর সেই বদভ্যাস ছাড়ানোর ভাবনাও প্রায় দিনই মাথার মধ্যে আসা-যাওয়া করে, কিন্তু কোনোভাবেই সেটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। কিন্তু কিছু কৌশল মেনে চললে খুব সহজেই ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে কঠিন থেকে কঠিনতর বদভ্যাসের প্রভাব। কী সেগুলো? জেনে নেওয়া যাক।

বদভ্যাসের পেছনের কারণ

যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে এর পেছনের কারণটা চিহ্নিত করা খুব জরুরি। তাই কোন বিষয়টির কারণে আপনি এই বদভ্যাসটির কাছে বারবার ফেরত যাচ্ছেন, সেটি খেয়াল করুন। এই কারণটিকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় 'ট্রিগার' বলা হয়ে থাকে। একটি 'ট্রিগার' থেকে অন্যটি আসে এবং এর ফলে একটি বদভ্যাসের সিরিজ তৈরি হয়– যা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়। কোনো একটি অভ্যাসকে সচলভাবে ধরে রাখার জন্য বা তা থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে— দুই ক্ষেত্রেই এই সূক্ষ্ম কারণ বা ট্রিগারগুলোকে আলাদা করে চিনতে হবে। এতে করে কেউ যখন তার বদভ্যাস ছাড়াতে চাইবেন, তখন সহজেই সেই ট্রিগারগুলো থেকে দূরে থাকবেন।

বিকল্প বেছে নিন

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, 'প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না।' এই কথাটি অনেক সময় সত্যি বলেই আমাদের সামনে আসে। তাই তো বদভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া এত কঠিন মনে হয়। কিন্তু যদি আপনি নির্দিষ্ট একটি নেতিবাচক অভ্যাস বা কাজের বদলে একটি ইতিবাচক বিষয় সামনে নিয়ে আসেন, তাহলে কিন্তু আপনার সেই সময়টা শূন্য থাকছে না। যেমন ধরা যাক, কারো অভ্যাস হচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি একটি সিগারেট খান। তাহলে এই বদভ্যাসটি ছাড়াতে তাকে কী করতে হবে? সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বাস্থ্যকর কোনোকিছুর অভ্যাস করতে হবে। হতে পারে পানিতে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম বা ফলের জুস, অথবা একটি লবঙ্গ চিবোতে চিবোতে প্রাতঃভ্রমণ। বদভ্যাস থেকে মুক্তির প্রাথমিক ধাপগুলোর একটি নিঃসন্দেহে এর বিকল্প বেছে নেওয়া।

নিজের মনের খবর রাখুন

আমাদের বেশিরভাগ অভ্যাস বা বদভ্যাসের পথচলা কিন্তু মনের অলিগলি থেকেই। বদভ্যাস থেকে কী ধরনের ভালো অনুভূতি আসছে বলে সে অভ্যাসটিকে আমরা ধরে রাখছি, তা জানতে হবে। কখনো কখনো এমনটা হতে পারে যে রাতে ঘুমানোর আগে চকলেট খাওয়া বা টিভি দেখা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণেই মনটা ভালো থাকে। মনের মধ্যে চেপে বসা হতাশার ভারে যখন আর টেকা যাচ্ছে না— তখনই হয়তো আপনি আশ্রয় খুঁজছেন প্রিয় সব বদভ্যাসের কাছে। তাতে সাময়িক আরাম হলেও দীর্ঘমেয়াদে থেকে যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব।

তাই নিজের মনের খবর রাখুন। মন ভালো রাখাকে ক্ষতিকর দ্রব্য বা অভ্যাসের মুখাপেক্ষী না করে এর বদলে ভালো কিছু— যেমন ছবি আঁকা, গান শোনা, খোলা বাতাসে হাঁটাচলার মতো কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। ঘুমানোর অন্তত আধাঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, ঘুম না এলে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকুন— ঘুম আসবেই।

সবই তো ঠিক আছে, কিন্তু একটি বাজে অভ্যাস ছাড়াতে বা একটি ভালো অভ্যাসের চর্চায় সময় কতটা লাগে? ভীষণই জনপ্রিয় একটি ফর্মুলা অনুযায়ী, মাত্র ২১ দিন বা তিন সপ্তাহ হচ্ছে সেই নির্দিষ্ট সময়। যদিও এটি শুনতে বেশ লাগে, কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ অতটা কার্যকর হয় না। তাই নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণটা হাতে নিন। তথাকথিত ফর্মুলার পেছনে না ছুটে নিজের জন্য তৈরি করুন একেবারে সফল একটি ফর্মুলা— যাতে জীবনের বাজে সব অভ্যাসও পালাবে আপনার কাছ থেকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Magura child rape case trial begins; four indicted

The court has set April 27 for the next date of hearing in the case

41m ago