হামাস নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র দাবি করে হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রায় ১৭ মাসের যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ হাসপাতাল ধ্বংস ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এখনো রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন, এমন হাসপাতালের সংখ্যা হাতে গোনা। আজ সেরকম এক হাসপাতালে দিনের শুরুতেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-আহলি হাসপাতালের অপর নাম দ্য ব্যাপটিস্ট বা আহলি আরব হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি যুদ্ধের শুরু থেকেই হাজারো গাজাবাসী উত্তর গাজার এই হাসপাতালে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়ে এসেছেন।
হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষতি

এই হামলায় কেউ হতাহত না হলেও হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এমন সময় এই হামলা এলো, যখন ত্রাণ সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ হুশিয়ারি দিয়েছে যে গাজায় হতাহতের সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে এবং একইসঙ্গে কমে আসছে জরুরী ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ।
গাজার সিভিল ডিফেন্স রেসকিউ এজেন্সি জানিয়েছে, 'বোমা হামলায় সার্জারি ভবন ও আইসিইউ'র অক্সিজেন উৎপাদন স্টেশন ধ্বংস হয়েছে।'
সংস্থাটি জানায়, 'হামলার মাত্র কয়েক মিনিট আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দেয়।'
হামলার পর তোলা ছবিতে ঘটনাস্থলে বিশাল আকৃতির কংক্রিটের স্ল্যাব ও বেঁকে যাওয়া ধাতুর টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিস্ফোরণের দমকে হাসপাতালে একটি ভবন ফুটো হয়ে গেছে। লোহার দরজাগুলো পাল্লা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইরাকের এক সম্প্রচার কেন্দ্র জানিয়েছে, তাদের একটি টিভি ভ্যানও এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মোরাগ করিডরের দখল নেওয়ার পর হামলার মাত্রা বৃদ্ধি
গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ ঘোষণা দেন, সামরিক বাহিনী দক্ষিণের রাফা ও উত্তরের খান ইউনিসের মধ্যবর্তী 'মোরাগ অ্যাক্সিস' বা 'মোরাগ করিডরের' সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এ অঞ্চলের দখল নেওয়ার পরই সামরিক বাহিনী তাদের অভিযানের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে বলে জানান ক্যাটজ।
মোরগ অ্যাক্সিস দখলের ফলে রাফা এখন কার্যত গাজার বাকি অংশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পৃথক হামলায় নিহত ৭
রোববার গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত দেইর এল-বালাহ শহরে পৃথক এক হামলায় একই পরিবারের ছয় ভাই সহ মোট সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদ আবু আমশা এএফপিকে বলেন, নিহতরা ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ত ছিলেন।
'তারা শিশু বা কারা নিহত হচ্ছে, সেটা নিয়ে চিন্তিত নয়—নিহতরা বাস্তুচ্যুত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছিলেন', যোগ করেন তিনি।
রোগীরা সড়কে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সতর্ক বার্তার পেয়ে রোগী, তাদের আত্মীয়স্বজন ও চিকিৎসাকর্মীরা দ্রুত আল-আহলি হাসপাতাল ছেড়ে যায়।
অনেকেই আশেপাশের সড়কগুলোতে আটকা পড়েন।
হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন নায়েলা ইমাদ (৪২)।
তিনি বলেন, 'আমরা কোনোমতে হাসপাতালের ফটক পর্যন্ত পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই তারা বোমাবর্ষণ শুরু করে। অনেক বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল।'
'এখন আমি আর আমার সন্তানরা রাস্তায়। (এই যুদ্ধে) আমরা অন্তত ২০ বার আশ্রয় ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছি। হাসপাতাল ছিল আমাদের শেষ ভরসার জায়গা', যোগ করেন তিনি।
হামাসের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র দাবি
যথারীতি, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাবি করেছে, ওই হাসপাতালের কম্পাউন্ডকে হামাসের কর্মীরা 'নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র' হিসেবে ব্যবহার করছিল।
হামাস ইসরায়েলি হামলাকে 'বর্বরোচিত অপরাধ' বলে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
হামাস ওই হাসপাতালকে সামরিক কাজে ব্যবহারের দাবি অস্বীকার করে বলেছে, 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন' নিয়ে ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে।
হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনকারী কাতার এই হামলাকে 'নিন্দনীয় অপরাধ' বলে অভিহিত করেছে।
বারবার হাসপাতালে হামলা

আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে সুরক্ষিত অবস্থান বলে বিবেচিত হলেও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজা উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতাল বারবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর আল-আহলি হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বোমা বিস্ফোরণে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছিলেন।
ত্রাণ সংস্থাগুলো ও জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৩৬ হাসপাতালের মধ্যে বেশিরভাগই বর্তমানে অকার্যকর রয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকারী নিহত হন। আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এখনো শাস্তি পাননি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়য় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এক হাজার ৫৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সবমিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ৯৪৪। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
Comments