‘চীন নত হবে না’—প্রেরণায় মাও সেতুং

রয়টার্স ফাইল ছবি

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন একবার প্রচ্ছদে মাও সেতুংয়ের ঝাপসা ছবি ছেপে বলেছিল—চীনের বর্তমান কমিউনিস্ট নেতৃত্ব চেয়ারম্যান মাওকে ক্রমশ দৃষ্টির আড়াল করে দিচ্ছে। এর বহু বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গণচীনের বাণিজ্যযুদ্ধের পারদ যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন দেখা গেল—চীনে মাও এখনো প্রাসঙ্গিক।

গত শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয় বাণিজ্যযুদ্ধে চীন কেন মাথানত করছে না। প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের মুখে ইউরোপ মাথা নোয়ালেও চীন কেন পিছু হটছে না তা নিয়ে পাশ্চাত্যে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে।

চীনের শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা কোনো 'উৎপীড়কের' কাছে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিংয়ের নেতারা ট্রাম্পের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে কারণ যে ক্ষমতা চীনের রয়েছে, তা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের নেই। এই 'অতুলনীয় সক্ষমতা'ই তাদের ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের মুখে অনড় থাকার আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।

এর মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে সমাজতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের একটি ভাষণ। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে চেয়ারম্যান মাওয়ের বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। এর মধ্যে কোরিয়া যুদ্ধের সময়কার ভিডিও ক্লিপও আছে, যেখানে মাও তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, 'এই যুদ্ধ যত দীর্ঘই হোক না কেন, আমরা কখনো নতি স্বীকার করব না। আমেরিকানরা যত দিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, আমরা তত দিন লড়ে যাব। চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত আমরা লড়ব।'

ঐতিহাসিক সেই ভাষণের সঙ্গে মাও নিং পোস্টে নিজের মন্তব্যও জুড়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, 'আমরা চীনা জাতি। আমরা উসকানিতে ভীত নই। আমরা পিছু হটব না।'

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, চীন সরকার যখন এভাবে দেশের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংকে সামনে নিয়ে আসে, তখন বোঝা যায় যে তারা বিষয়টিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনাপ্রবাহ সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।

কী বলেছিলেন মাও

১৯৫০ সালে চেয়ারম্যান মাওয়ের বিখ্যাত একটি উক্তি ছিল: 'সঠিক সময়ে প্রথম আঘাত হানতে পারলে পরের একশ আঘাত এড়ানো যায়।' তিনি বিশ্বাস করতেন, উসকানির মুখে শুরুতেই শক্তি প্রদর্শন করলে তাতে যেমন নিজেদের অনমনীয় ভাবমূর্তি তৈরি হয়, তেমনি প্রতিপক্ষের জন্য সীমারেখাও নির্ধারণ হয়ে যায়। এর ফলে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আগ্রাসন প্রতিহত করা সহজ হয়।

মাও সেতুং যখন এই তত্ত্ব দেন ঠিক তখনই পাশের দেশ কোরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয় চীনের লালফৌজ। চীন যখন এই যুদ্ধে জড়ায় তখন, ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে গণচীন (পিআরসি) প্রতিষ্ঠার এক বছরও পূর্ণ হয়নি। দেশটি তখন সবেমাত্র জাপানি দখলদারিত্ব ও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল।

ওই যুদ্ধে সামরিক সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্র যোজন যোজন এগিয়ে থাকলেও 'সাম্রাজ্যবাদীদেরকে' প্রতিহত করতে সফল হয় চীন।

প্রথমবার ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে শুল্ক আরোপ করে চীনকে নত করতে পারেননি। সেই নীতি অব্যাহত রেখেছিলেন জো বাইডেন। এবারের চূড়ান্ত বাণিজ্যযুদ্ধের কে বিজয়ী হবে তা জানতে আমাদের হয়ত আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

9h ago