সিএনএনের প্রতিবেদন

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে মিত্রদের হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতাগ্রহণ করেছেন জানুয়ারিতে। তার প্রশাসন গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিভিন্নভাবে অপমান করেছে, তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, এমনকি কিছু দেশের ভূখণ্ড দখলের হুমকিও দিয়েছে।

বর্তমানে চীনের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে আছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কীভাবে জেতানো যাবে, ট্রাম্প নিজেও তা জানেন না। ট্রাম্পের হুমকি-ধামকির কাছে নতি স্বীকার করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না চীনের মধ্যে। ট্রাম্প প্রশাসন তাই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ওপর চাপ প্রয়োগের উপায় খুঁজতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।

এর একটি উপায় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক শক্তি ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে বেইজিংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এভাবে বাজারে প্রবেশাধিকার, মেধাস্বত্ব চুরি, শিল্পখাতে গোয়েন্দাবৃত্তিসহ বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের অভিযোগগুলো নিরসনের পথে যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কৌশল ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ট্রাম্পের হাতে নতুন শুল্ক চার্ট। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের হাতে নতুন শুল্ক চার্ট। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ সপ্তাহে ফক্স বিজনেসকে বলেন, 'জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, এমনকি ভিয়েতনামও শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করবে।'

'সবাই এখন আলোচনার টেবিলে আসছে। চীন কার্যত ঘেরাও হয়ে গেছে,' যোগ করেন তিনি।

বেসেন্টের মতে, এসব আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হবে বাণিজ্যখাতে কীভাবে 'চীনের ভারসাম্যহীনতা' ভেস্তে দেওয়া যায়।

'সেটাই হবে বড় জয়,' বলেন বেসেন্ট।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্প যেভাবে বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে সবার সঙ্গেই একইরকম আচরণ করে যাচ্ছেন, এ অবস্থায় মিত্র দেশগুলো কেন চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করবে?

জবাবে তিনি বলেন, 'এই প্রশ্ন আমাদের মিত্রদের করুন। তারা তো আমাদের ফোন করেই যাচ্ছে। তারা পরিষ্কার করে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায়। আমাদের বাজার, আমাদের ভোক্তাদের ছাড়া চলতে পারবে না তারা।'

কিন্তু দেশগুলোর এই আলোচনায় বসার আগ্রহ এসেছে ট্রাম্পের হুমকি-ধামকি ও রেসিপ্রোকাল শুল্ক ঘোষণার পর। দীর্ঘমেয়াদে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকতে চায় কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জোটকে দুর্বল করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এই সপ্তাহেও একাধিকবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচনা করেছেন তিনি।  বলেছেন, 'ইইউ গঠিত হয়েছিল মূলত বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য।'

এই ইউরোপবিদ্বেষ তার প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও আছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন ও ইয়েমেনে বিমান হামলা সংক্রান্ত আলোচনায় ইউরোপের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বক্তব্যে ইউরোপের তীব্র সমালোচনা করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। ছবি: রয়টার্স

পশ্চিম গোলার্ধের প্রতি ট্রাম্পের প্রতিহিংসাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উত্তর আমেরিকায় একটি বাণিজ্যিক জোট করে চীনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলাটা দীর্ঘদিন ধরেই সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বারবার কানাডা দখলের হুমকি দিয়েছেন, মেক্সিকোর ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করে সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করেছেন।

কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার দীর্ঘদিনের মিত্রতার সম্পর্ক এখন আর নেই।

মিত্রদের সঙ্গে ট্রাম্পের এমন আচরণ এবারই প্রথম না। ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের দিনেই ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন তিনি। এই জোটে মেক্সিকো, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিত্ররাষ্ট্র ছিল। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারকে যুক্ত করার জন্য পরিকল্পিত ট্রান্সআটলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপও বাতিল করেছেন ট্রাম্প।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেভাবে শীতল হচ্ছে, সামনে কি তারা আলোচনায় বসতেও অস্বীকৃতি জানাবে?

ওবামা প্রশাসনের অধীনে কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্সের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেসন ফারম্যান বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র এমন এক দেশ হয়ে উঠেছে যাকে বিশ্বের কোনো দেশই আর বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার মনে করে না। এই বিশ্বাসযোগ্যতা আবার ফিরে আসবে কি না—তা আমি জানি না।'

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

5h ago