সাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি, ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলে উদ্ধার

জেলেদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতির ঘটনার প্রায় ২৫ ঘণ্টা পর ৬৮ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটায় আনা হয়। জেলেরা দাবি করেছেন, ডাকাতরা ২০ লাখ টাকার মাছ, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ৩০টি মোবাইলফোন নিয়ে গেছে। এছাড়া ডাকাতদের হামলায় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আজ শুক্রবার সকালে পাথরঘাটা কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা এইচ এম এম হারুন অর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, 'খবর পেয়ে ডাকাতির শিকার ট্রলারসহ জেলেদের উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।'

এর আগে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাথরঘাটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বড় বাইজদা এলাকায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাত বাহিনীর নাম জানা যায়নি।

ডাকাতি হওয়া ট্রলারগুলো হলো—এফবি তারেক-২, এফবি তুফান-২, এফবি মা, এফবি আব্দুল্লাহ ও এফবি জুনায়েদ।

এফবি আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি রফিক গাজী বলেন, 'বুধবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলে মাছ ধরতে অপেক্ষা করি। এ সময় দ্রুতগামী ট্রলারে এসে ডাকাত বাহিনী হামলা চালায়। আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তারা ট্রলারে উঠে আমাদের মারধর করে মাছসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।'

'যাওয়ার সময় ইঞ্জিন বিকল করে দেয়। তারা ডাকাতি করে চলে যাওয়ার সময় জেলেরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে দূর থেকে গুলি ছোড়ে। এতে ট্রলারের অন্তত পাঁচ জেলে গুলিবিদ্ধ হন,' বলেন তিনি।

এ ঘটনায় আহত জেলেরা হলেন—পাথরঘাটা উপজেলার বড় টেংরা এলাকার মো. মনির হোসেন মাঝি (৩৫), কালমেঘা এলাকার মো. বেল্লাল (৪০), মো. আবুল কালাম (৫০), ছোনবুনিয়া কালমেঘা এলাকার মো. বেল্লাল (৩১), বরগুনা সদর উপজেলার চরকগাছিয়া এলাকার মো. জাহিদ (২২), নলি এলাকার মো. ইব্রাহিম (৩০), আজোকাঠি এলাকার মো. ইলিয়াস (২০) এবং নলি সাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তফা (৬০)।

এফবি জুনায়েদ ট্রলারের বাবুর্চি মিলন বয়াতি বলেন, 'ডাকাতেরা আমাদের ট্রলারে উঠে আমাকে মারধর করে। আমাদের সব মাছ ও খাবারসহ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রও দেখা গেছে। তারা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন ছিল।'

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ডাকাতেরা ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ারলেস নিয়ে যায়। পরে ডাকাতির শিকার জেলেরা ভ্যাসেল জাহাজের মাধ্যমে উপকূলে সংবাদ পাঠান। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ এবং কোস্ট গার্ডকে জানানো হয়। এ ছাড়া মালিক সমিতির দুটি ট্রলার পাঠিয়ে জেলেদের উদ্ধার করা হয়।

জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, 'মালিক সমিতির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির খবর জানতে পারি। এরপর কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও ট্রলার মালিক সমিতির সহযোগিতায় আমরা ৬৮ জেলেকে উদ্ধার করে রাত ৯টার দিকে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নিয়ে আসি। সেখান থেকে আহত জেলেদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।'

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন জানান, আহত জেলেদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ঝুঁকিমুক্ত।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে এলাকায় জলদস্যুদের হামলার ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের থানার অন্তর্ভুক্ত নয়। এ কারণে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তবে ট্রলারগুলোতে থাকা অধিকাংশ জেলে পাথরঘাটার বাসিন্দা। তাই কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'

Comments