প্রাকৃতিক বনে অগ্নিকাণ্ড: গড়ে উঠুক ‘প্রতিরোধী ডিসকোর্স’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় ২০২১ সালের ৩ মে আগুন লাগে। ছবি: সংগৃহীত

বনভূমির নির্দিষ্ট কোনো একক সংজ্ঞা নেই। বনভূমির সংজ্ঞায়ন ও চিহ্নিতকরণের ভেতর দিয়ে ক্ষমতার রাজনীতি ও কর্তৃত্ব বিরাজিত থাকে। রাষ্ট্র, বন বিভাগ, বহুপাক্ষিক ব্যাংক, দাতাসংস্থা, করপোরেট কিংবা বন-নির্ভর জনগণের একেকজনের কাছে বনভূমির সংজ্ঞা ও সম্পর্ক একেক রকম। 

বন-নির্ভর বনজীবী ও বনবাসী আদিবাসী জনগণ অরণ্যকে নিজের জীবনের অংশ এবং নিজেকে অরণ্যের সন্তান মনে করেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বন মানে হলো নানা ধরনের বৃক্ষ, বৃক্ষ-প্রজাতি এবং বন্যপ্রাণীর সমারোহ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (সিবিডি ১৯৯২) অনুযায়ী, বন-প্রাণবৈচিত্র্য বলতে একটি বনভূমির অন্তর্গত সব বৃক্ষ-প্রাণী ও অণুজীবের সমাহার, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ও তাদের প্রতিবেশীয় ধারা ও ক্রিয়াশীলতাকে বোঝায়। 

কোনো অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র ঐতিহাসিকভাবে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও জটিল সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বিকশিত হয়। আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে বনভূমির বৈচিত্র্য কম নয়—ম্যানগ্রোভ, উপকূলীয় প্যারাবন, পত্রঝরা শালবন, পাহাড়ি চিরসবুজ মিশ্র বন, রেইন ফরেস্ট, সোয়াম্প ফরেস্ট, রিড ফরেস্ট, গ্রামীণ বন, পবিত্র কুঞ্জ। 

দুনিয়াব্যাপী বহু লোকায়ত আখ্যান অনুযায়ী বন থেকেই সভ্যতার জন্ম। খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা ও জীবনধারণের জন্য মানুষসহ অগণিত প্রাণ-প্রজাতি বনের ওপর নির্ভরশীল হলেও প্রতিনিয়ত বনভূমির এই অবদান নিওলিবারেল ব্যবস্থায় অস্বীকৃত। জাহাজ, কাঠ ও ওষুধ ব্যবসা থেকেই বনভূমির একতরফা বাণিজ্যিকায়ণ, লুণ্ঠন ও দখল শুরু হয়। মুনাফা বাণিজ্য চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশসহ এশীয় অঞ্চলের বনভূমির ওপর তৈরি হয় উপনিবেশিক নানা নিয়ন্ত্রণ। উপনিবেশিক দখল ও কর্তৃত্ব থেকে বনভূমি বাঁচাতে নিম্নবর্গের জানবাজি রাখা লড়াই-সংগ্রাম আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী—চিপকো, হাতিখেদা বিরোধী আন্দোলন, হুল, উলগুলান, বালিশিরা পাহাড় আন্দোলন, ইকো-পার্কবিরোধী আন্দোলন, চিংড়িঘের বিরোধী আন্দোলন, ফুলবাড়ি আন্দোলন কিংবা সুন্দরবন সংগ্রাম। 

বাংলাদেশের বন ও বনের জেনেটিক সম্পদ প্রতিনিয়ত নানা যন্ত্রণা ও হুমকির সম্মুখীন। ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী গ্রামীণ বন, কুঞ্জ বন, সোয়াম্প ফরেস্ট, নল-নটার বন নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু টিকে থাকা বনগুলোরও সুনির্দিষ্ট ডিমার্কেশন নাই। উন্নয়ন অবকাঠামো, মনোকালচার, বাণিজ্যিক আগ্রাসী গাছের বাগান, পর্যটন, নগরায়ন, দূষণ, দুর্বল বন ব্যবস্থাপনা কাঠামো, দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব, বন্যপ্রাণি বাণিজ্য, জলবায়ু সংকট, বনবান্ধব নীতিমালার অভাব কিংবা নানামুখী দখল-প্রবণতা দেশের বনভূমির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। 

বনভূমি দখলের ক্ষেত্রে গত ২০-২৫ বছরে এক বিচারহীন অন্যায় প্রবণতা তৈরি হয়েছে, লাগাতার আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেওয়া। দেশে কোনো প্রাকৃতিক ফরেস্ট ফায়ার না ঘটলেও প্রতিবছর দেশে 'পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের' কারণে বিপুল বনভূমি ও বিরল জেনেটিক রিসোর্স হারিয়ে যায়। প্রাকৃতিক বনে অগ্নিকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এখনো সোচ্চার ও কাঠামোগতভাবে সক্রিয় নয়। এ নিয়ে বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক কোনো নীতিমালা, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাও গড়ে ওঠেনি। সকল অগ্নিকাণ্ডের পরিবেশবান্ধব তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয় না।

ক্ষয়ক্ষতি রোধে ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন এবং কমিউনিটি লেড ফরেস্ট ম্যানেজমেন্টের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয় না। দোষীদের আইন ও বিচারের আওতায় আনার কোনো দৃষ্টান্তও এক্ষেত্রে নাই। এমনকি গণমাধ্যমও এক্ষেত্রে দায়সারা গোছের কিছু রুটিন নিউজ করে, কোনো ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট করতে আগ্রহী হয় না। পরিবেশ সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক বনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নিশ্চুপ থাকে। অবহেলায়, অনাদরে, প্রশ্নহীনভাবে পোড়ে দেশের ফুসফুস। বিচারহীন ইকোসাইড ঘটে প্রতি বছর। 

মৌলভীবাজার, কুরমা বন, বন বিভাগ, সিলেট,
আগুনে বাঁশমহাল পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক বনের অগ্নিকাণ্ড রোধ না করতে পারলে কোনোভাবেই দেশের বন ও বনজ সম্পদের সামগ্রিক সুরক্ষা ও বিকাশ সম্ভব হবে না। প্রতি বছর ২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস পালিত হয়। এ বছরের বন দিবসের প্রতিপাদ্য হলো 'বন ও খাদ্য'।

দেশের বনগুলোতে লাগাতার অগ্নিকাণ্ডের ফলে বন্যপ্রাণী, অণুজীব, মানুষসহ সকল জেনেটিক রিসোর্স ও বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য, পুষ্টি ও জীবনযাত্রার নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ছে। এ লেখায় বাংলাদেশের বিগত সময়ের প্রাকৃতিক বনের অগ্নিকাণ্ডগুলোর দুঃসহ যন্ত্রণা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এবং বনভূমির ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।  

লাউয়াছড়া অগ্নিকাণ্ড

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রাকৃতিক বনে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন। মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের গ্যাস জরিপের মাধ্যমে এই ভয়াবহ ইকোসাইড বা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। অঙ্গার হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়া। 

মাগুরছড়া ইকোসাইডের ঠিক আগের বছরে ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে 'লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান' ঘোষণা করা হয়েছিল।

লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির প্রাণবৈচিত্র্যের ভেতর ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির অর্কিড, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় আছে। বনের চারপাশ ঘিরে আছে কালাছড়া, ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়া, গিলাছড়া, নূরজাহান, ফুলবাড়ি চাবাগান এবং বালিশিরা পাহাড়। 

১৯৯৭ সালের ইকোসাইডের কোনো বিচার হয়নি বলেই এরপর থেকে লাউয়াছড়াসহ দেশব্যাপী প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে জায়গা দখলে দুঃসাহসী হয়ে ওঠে বহু দুর্বৃত্ত। জুলভার্ণের দুনিয়া কাঁপানো বই থেকে নির্মিত হলিউড চলচ্চিত্র 'অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ' এর একটি দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল লাউয়াছড়া বনে। 

এই বনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল দেশের একমাত্র আফ্রিকান টিক ওক গাছটি। উল্লুক গিবনের অন্যতম বিচরণ অঞ্চল এই বর্ষাবন। বহুজাতিক কোম্পানির খনন, মার্কিন প্রকল্প, বনের ভেতর রেল ও সড়কপথ, কর্পোরেট হোটেল ও রিসোর্ট বাণিজ্য নানাভাবে এই বনটি আজ মুমূর্ষু। এই মুমূর্ষু বনটি আজ শুষ্ক মৌসুমে বিচারহীন অঙ্গারের নিশানা। 

২০২১ সনের ২৪ এপ্রিল বন বিভাগের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে লাউয়াছড়া বনের একটি অংশে আগুন লাগে ও পুড়ে যায় বন। বন বিভাগ তৎক্ষণাৎ তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঘটনার তিন দিন পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। 

প্রাকৃতিক বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবচে দ্রুততম সময়ে তৈরি হয় এই তদন্ত প্রতিবেদন। ২০২৩ সালেও আগুন দেওয়া হয় লাউয়াছড়ায়। ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দিনে-দুপুরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় প্রায় দুই একর বন। 

ভাওয়াল শালবন অগ্নিকাণ্ড

১৮৮৬ সালে 'লেটার্স অন স্পোর্টস ইন ইস্টার্ন বেঙ্গল' বইটিতে ফ্রাংক ভাওয়াল শালবনের শিকার কাহিনী লিখেছেন। ভাওয়াল শালবনকে একসময় বলা হতো ময়ূর-বন। গাজীপুরের প্রায় ৬৫ হাজার একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ শালবন আজ রুগ্ন, শীর্ণ, দখল ও দূষণে অস্থির। 

১৯৪০ সালে ভাওয়াল শালবনে বাঘের সবশেষ বিচরণের কাহিনী জানা যায়। ১৯৭৩ সালে 'ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান' ঘোষণার পর ২০১০ সালে ভাওয়ালের রাথুরা শালবনে গড়ে তোলা হয় বন্যপ্রাণীর 'সাফারিং পার্ক'। 

ভাওয়াল শালবনে ২২০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির উভয়চর ও ৫ প্রজাতির পাখি টিকে আছে। ভাওয়াল থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল শালবনও প্রতিবছর শীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর পোড়া বনের শেকড়-মুথা তুলে পরিষ্কার করে নতুন আবাসন, হোটেল, কারখানাসহ বিভিন্ন কিছু তৈরি করা হয়। 

২০২৩ সালের বিশ্ব বন দিবসের আগে গাজীপুরের শ্রীপুরের গোসিঙ্গা-পটকা এলাকায় আগুনে ছাই হয়ে যায় শালবনের বহু এলাকা। এর আগে ২০২২ এবং ২০২১ সালেও মার্চে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে আগুনে পুড়েছে সখিপুর শালবন।  

রাংটিয়া শালবন অগ্নিকাণ্ড

দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শালবন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া। নানা রকমের শণ-ঘাস রাংটিয়া শালবনের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই বনে প্রায় ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে। দেশের খুব কম বনেই দশটি ভেষজ উদ্ভিদের দেখা মেলে, যার মূল বা শেকড় লোকায়ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। শংখ মূল, বিন্দু মূল, বেনামূল, তেওড়ি মূল, ঈশ্বরমূল, শতমূল, বিন্যা মূল। একসময় বহু কাষ্ঠল লায়ানা ছিল প্রচুর। 

রাংটিয়া বনের ঘুপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাহাড়ি ঝোরা বা ছড়াগুলোর প্রবাহ দখল ও বন্ধ হওয়াতে। রাংটিয়া গ্রামের কালাঝুরি ঝোরা ও নকশি গ্রামের মালাক ঝোরা ক্ষতিগ্রস্ত। মঙ্গলঝোরা ও শিলঝোড়াও আগের মতো প্রবাহিত নয়। বহু পাহাড়ি মাছ, কচ্ছপ, সাপ ও জলজ প্রাণী এখন আর এই বনে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

আগে এই বন থেকে কুম্ভিরা পাতা বা বিড়ি পাতা বিক্রি হতো। নিওলিবারেল বাজারের দাপটে রাংটিয়াও একসময় চীনামাটি আর পাথরের খনি হয়ে ওঠে। ঝোরা, পাহাড়, বন তছনছ করে পাথর বাণিজ্য শুরু হয়। 

রাংটিয়া শালবনে বহু পবিত্র বৃক্ষ, পবিত্র ধর্মস্থল ও কুঞ্জবন আছে। যদিও তার বেশিরভাগই বেদখল ও জীর্ণ। ২০২৫ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে অগ্নিকাণ্ডে এক সপ্তাহ ধরে পুড়েছে রাংটিয়া। এর আগেও কয়েকবার এই বন অঙ্গার হয়েছে। 

মধুপুর শালবন অগ্নিকাণ্ড

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার শ্রী সূর্যকান্ত আচার্য বাহাদুর মধুপুর শালবনে তার বহু শিকার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন এবং সেইসব শিকার কাহিনী বাংলা ১৩১৩ সালে লেখা। সেইসব শিকার কাহিনীতে মধুপুর শালবনের যে চিত্র পাওয়া যায় তা এক দুর্ভেদ্য জঙ্গল বোঝায়। 

প্রায় ৭৫ বছর ধরে একটি বনের ওপর কত ধরণের জুলুম ও জবরদস্তি করা যায়, মধুপুর তার অন্যতম প্রমাণ। ১৯৫০ সালে মধুপুর শালবন এলাকায় জোর করে জুম আবাদ নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯২৭ সালের উপনিবেশিক বন আইনের ৬ ধারার মাধ্যমে তৎকালীন 'পূর্ববঙ্গীয় বনবিভাগ' ১৯৫৫ সালে একটি 'ফরেস্ট গেজেট' প্রকাশ করে। প্রাচীন এক বনের নাম পাল্টে হয়ে যায় 'উডলট বাগান'। 

১৯৬২ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। বন্যপ্রাণিদের আটক করে লহরিয়া চিড়িয়াখানা গড়ে তোলা হয় বনের ভেতর। ফায়ারিং রেঞ্জ ও বোম্বিং রেঞ্জ করা হয় বনের ভেতর। ১৯৮৯ সাল থেকে আগ্রাসী গাছের বাগান ও রাবার বাগান করা হয় প্রাকৃতিক বন কেটে। পরবর্তীতে বাণিজ্যিক আনারস ও কলা বাগান গড়ে ওঠে। 

শালবনে ৬১ হাজার ফুট রানিং দেয়াল দিয়ে ঘিরে ইকোপার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বন বিভাগ। একইসঙ্গে নতুন বসতি স্থাপনকারী বাঙালিরা বনের জায়গা জবরদখল করতে থাকে। ২০০০ সালের পর থেকে মধুপুর বনে প্রতিবছর নানা জায়গায় আগুন দিয়ে বন পরিষ্কার করে পরে এখানে চাষাবাদ করা হয়। 

সিংড়া শালবন অগ্নিকাণ্ড

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউনিয়নের অবস্থিত দেশের উত্তরাঞ্চলের এই বিশেষ পাতাঝরা বনে উঁচু উঁই ঢিবি দেখা যায়। ২০১০ সালে এই বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। ৩৫৫ হেক্টর আয়তনের এই বনের ৩০৫ দশমিক ৬৯ হেক্টর জাতীয় উদ্যান। এই শালবনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে নর্ত নদী। 

একদা এই বন নীলগাই ও বাঘের অন্যতম বিচরণস্থল ছিল। এই বনে দেশের অন্যতম শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। শীতকালে বিশেষত উত্তরাঞ্চলে ক্লান্ত আহত হিমালয়ান গৃধিনী শকুনদের উদ্ধার করে এই বনের পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে সুস্থ করে আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

২০২০ সাল থেকে নানা সময়ে সিংড়া শালবনের বিভিন্ন অংশে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি নর্ত নদী থেকে তোলা বালু স্তূপ করে রেখে এই বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে আগুনে পুড়ে গেছে সিংড়া শালবনের প্রায় ১৭ একর বন।

পাথারিয়া পাহাড় অগ্নিকাণ্ড

পাথারিয়া পাহাড় দেশের এক অনন্য প্রাচীন অঞ্চল। বিলাসী দামি সুগন্ধি আগর ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলের আগর গাছ থেকে আহরণ করা হয়। আর বাণিজ্যিকভাবে আগর আহরণই প্রথম এ অঞ্চলের অরণ্য বাস্তুতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলে। পাথারিয়া পাহাড়ের সমনবাগ বনাঞ্চলটি 'ইন্দো-বার্মা প্রাণবৈচিত্র্য অঞ্চলের (বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট এরিয়া)' অংশ। 

মৌলভীবাজারের বড়লেখা রেঞ্জের এই সমনবাগ সংরক্ষিত বনের আয়তন প্রায় ১৮০০ একর। এখানে প্রায় ৬০৩ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ২০৯ প্রজাতির বন্যপ্রাণী আছে। এর ভেতর ২০ প্রজাতির উভচর, ৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১৩ প্রজাতির পাখি, ৩১ প্রজাতির স্তন্যপায়ীসহ বহু কীটপতঙ্গ, অণুজীব ও লতাগুল্ম পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের বাসস্থান এই বন। 

২০২৩ সালে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের গ্যাস জরিপের নামে মৌলভীবাজারের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের সাঙ্গাইসাফি, কাঁঠালকান্দি ও বাঘাছড়া টিলাবন পুড়ে গেছে। আর পুড়েছে পাথারিয়া পাহাড়ের সমনবাগ বন। মৌলভীবাজারের জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় বিস্তৃত পাথারিয়া সংরক্ষিত বনে লাগানো আগুনে অঙ্গার হয়েছে ধলছড়ি ও মাকালজোরার প্রায় ৪০ হেক্টর বন। 

রাজকান্দি বন অগ্নিকাণ্ড

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিস্তৃত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনের আয়তন প্রায় ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর এবং এই অঞ্চল 'ইন্দো-বার্মা প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলের' অংশ। রাজকান্দি বনে ১২৩টি উদ্ভিদ পরিবারের প্রায় ৫৪৯ প্রজাতির ম্যাগনোলিওফাইটা (ফ্লাওয়ারিং প্ল্যান্ট) উদ্ভিদ আছে। প্রায় ১২ প্রজাতির বটগাছ এবং ১০ প্রজাতির কাষ্ঠল লতার বৈচিত্র্য খুব কম বনেই আছে। এই বনে আইইউসিএন লালতালিকাভূক্ত ২৫টি বিপন্ন উদ্ভিদ আছে। ৩০০ প্রজাতির পাখির আবাস এই বন। 

২০২৩ সালে সংরক্ষিত এই সিলেট বন বিভাগের অনাপত্তি সত্ত্বেও গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে চায়না কোম্পানি ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। গ্যাস অনুসন্ধানের ফলে বনে আগুন লাগে এবং কোম্পানি সেটি স্বীকার করে। ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু হলে কোম্পানি বনের ভেতর প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট চিহ্নিত করে সেখানকার বনতল বিনষ্ট করে গর্ত খনন করে। 

সুন্দরবন অগ্নিকাণ্ড

বনজীবী, সুন্দরবন অঞ্চলের আশেপাশের স্থানীয় মানুষ, বন বিভাগ ও গণমাধ্যমসূত্র মিলিয়ে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০২৪ গত ২৪ বছরে প্রায় ২৫ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। প্রায় ৭২ একর বন সরাসরি পুড়েছে। 

২০০২ সালের ২২ মার্চ বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে আগুন লাগে। ২০০৪ সনের ২৫ মার্চ আগুনে পুড়ে যায় চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী ক্যাম্পের মাদ্রাসারছিলা অঞ্চলের ৩ একর বন। ২০০৪ সনের ২৭ ডিসেম্বর আড়ুয়ারবেড় অঞ্চলে পুড়ে যায় ৯ শতক বন। 

২০০৫ সনের ৮ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী অঞ্চলে পুড়ে যায় আড়াই একর বন। একই সালের ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার পুড়ে চার একর বন। এরপর ২০০৬ সন থেকে লাগাতার বন পুড়তেই থাকে। ২০০৭ সালেও তিন বার আগুন লাগে। ২০১০ সনের ২০ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী এলাকায় পুড়ে যায় ৫ একর বন। 

২০১১ সালেও তিনবার আগুন লাগে। ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ পুড়ে যায় ১০ একর বন। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ধানসাগর স্টেশনের এই নাংলী ক্যাম্পেরই পচাকোড়ালিয়া, টেংরা ও তুলাতুলী এলাকার ম্যানগ্রোভ বন আগুন দিয়ে ঝলসে দেয় দুর্বৃত্তরা। 

২০১৭ সালের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলা এলাকার প্রায় পাঁচ একর বনভূমি আগুনে পুড়ে যায়। ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় এবং ৩ মে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভাড়ানি এলাকাতেও আগুন লেগেছিল। 

সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গণমাধ্যমে আমরা সর্বদা বন বিভাগের দায়িত্বহীন বক্তব্য দেখি। আগুনে বন পুড়ে গেলে খুব একপেশে কায়দায় এর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়। মূলত কতটুকু জায়গা পুড়েছে এবং কত ঘনফুট কাঠ পুড়েছে। 

সুন্দরবনের মতো এক জটিল বাস্তুতন্ত্র যখন ঝলসে যায়, তখন এর ক্ষতির হিসাব কি শুধু কাঠের ঘটপুটের মাপ কিংবা মাটির আয়তন দিয়ে হিসাব করা সম্ভব? প্রাকৃতিক বন নিশ্চয়ই কাঠের বাগান নয় বা কোনো শখের উদ্ভিদ উদ্যান কী চিড়িয়াখানা নয়। 

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য অগ্নিকাণ্ড

সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা। ১৯৮২ সালে এই বনকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। প্রায় ৪ হাজার ৪৩৬ দশমিক ৭১ একর আয়তনের এই বনটি চরিত্রের দিক থেকে মিশ্র চিরহরিৎ। 

লজ্জাবতী বানর, উল্টোলেজি বানর, পাঁচ প্রজাতির কাঠবেড়ালি, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, সজারু, গন্ধগোকূল, শূকর, সাপ ও নানা জাতের পাখির আবাসস্থল এই বন। বৃহৎ মালায়ান কাঠবিড়ালির বাস শুধু এই। 

এই বনে আছে বিরল সব ওষধি লতাগুল্ম। মোট ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে ভরপুর এই বন। দেশের সর্ববৃহৎ শকুনের বিচরণস্থলও এই বন, এখানকার ময়নাবিল এলাকায় প্রায় ৩৮টি শকুন পরিবারের বাস। 

২০২৩ সালে নিজেদের ইজারা নেওয়া জায়গার প্রায় ১৪০টি প্রাচীন বৃক্ষ কেটে চা বাগান সম্প্রসারণের জন্য আগুন দেয় হাতিমারা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগান কর্তৃপক্ষ আগুন লাগিয়ে শুধু বন্যপ্রাণি হত্যাই করেনি, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গাছ কেটে এই ভূমির শ্রেণিও পরিবর্তন করেছে। তারা টিলাভূমি কেটে সমান করেছে। বনতল, ঝোপ, লতাগুল্ম সব ধ্বংস করেছে। 

হাতিমারা চা বাগান সম্প্রসারণের জন্য লাগানো আগুনে পুড়ে যায় রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের বহু বন্যপ্রাণী। আগুন ছড়িয়ে পড়ে সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রে। ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি গণমাধ্যমে আগুনে নিহত বন্যপ্রাণীর বিভৎস লাশের ছবি ছাপা হয়। কিন্তু বরাবরের মতোই এ ঘটনা ক্ষমতার বলয়ে আড়াল হয়ে যায়। 

চা বাগান ও রাবার বাগান সম্প্রসারণের নামে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে নানা সময়ে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে নির্দয়ভাবে আগুন দেওয়া হয়। 

সাতছড়ি বন অগ্নিকাণ্ড

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক বন। সীমান্তবর্তী এই বনে অল্প জায়গায় বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য ব্যাপক। প্রায় ২৪৩ হেক্টর আয়তনের এই বনকে ২০০৫ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এটি ঐতিহাসিক রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ। 

এই বনে প্রায় ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ২০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণি রয়েছে। বন্যপ্রাণির ভেতর ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভয়চর এবং প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এখানে এশীয় কালো ভালুক দেখা গেছে এবং বানর-হনুমানদের বৈচিত্র্য এই বনে গুরুত্বপূর্ণ। এই বন শকুনের জন্য নিরাপদ অঞ্চল হিসেবেও ঘোষিত। বনের চারদিকে চা বাগান, লেবু বাগান ও ফলের বাগান। 

সীমান্তবর্তী এই বনে অস্ত্র চোরাচালানের মতো ঘটনাও ঘটেছে। একইসঙ্গে নানা সময় এখানে আগুনে লাগানো হয়। ২০২৫ সালের ১৪ মার্চ আগুনে পুড়ে গেছে এই বনের কয়েক একর এলাকা।

অগ্নিকাণ্ড রোধে গড়ে ওঠুক প্রতিরোধের ডিসকোর্স

বাংলাদেশে বিদ্যমান বন আইন, পরিবেশ আইন, বন্যপ্রাণি অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বনে আগুন লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আমরা কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও দণ্ডের কথা এখন পর্যন্ত শুনিনি। 
জাতিসংঘের সিবিডি ১৯৯২ এবং প্যারিস জলবায়ু ঘোষণা ২০১৫ সই করলেও প্রাকৃতিক বনের আগুন থামাতে পারেনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র। ২০১৬ 'বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬' খসড়া করলেও এখনো অনুমোদন হয়নি।

২০২১ সালে গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত বিশ্বের বৃক্ষ ও বন সুরক্ষা নীতি সই করলেও রাষ্ট্র জানে না আগুনে দেশের কতটুকু বন ও বৃক্ষের সংসার পুড়েছে। 

সংবিধানের ১৮(ক) ধারায় বনভূমি ও জেনেটিক রিসোর্সের সুরক্ষার দায়িত্ব ঘোষণা করলেও অগ্নিকাণ্ড থেকে বন সুরক্ষায় আমরা এখনো তৎপর নই। প্রতিটি বন অত্যন্ত নাজুক এবং বৈচিত্র্যময়। বনের কতটুকু এলাকা আয়তন হিসেবে পুড়েছে বা সংখ্যায় কতগুলো গাছ বা প্রাণি মারা গেছে সেটি বড় বিষয় নয়। কারণ এমন উদ্ভিদ বা প্রাণি সেখানে থাকতে পারে, যা সেই বনে আর নেই বা পৃথিবীতে এনডেমিক। 

অগ্নিকাণ্ডের ফলে একটি বনের সব স্তরে, সামগ্রিক ফুডচেইনে ক্ষয়ক্ষতি ছড়িয়ে পড়ে। কারণ ফরেস্ট একটি ইন্টারডিপেনডেন্ট ইকোসিস্টেম। একটি বনের কয়েক ইঞ্চি জায়গা পুড়ে গেলেও ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। প্রাকৃতিক বনে আগুন লাগে না এটি নানাভাবে লাগানো হয়। 

প্রথমত, এটি বন বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষকে হিসাবে নিতে হবে। কোনো অবহেলা নয়, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্বশীলভাবে অ্যাড্রেস করতে হবে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

অগ্নিকাণ্ডের পর বন বিভাগের মাধ্যমে সব ধরনের স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি ভিজিট করাতে হবে এবং কমিউনিটিসহ সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে তাৎক্ষণিক আগুন নেভাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এবং এতে কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। 

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী বন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সকল শ্রেণি-পেশা-জেন্ডার-জাতি-বর্গের নাগরিকদের মতামত ও পরামর্শ জানা-বোঝার জন্য বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের বন নিয়ে পাবলিক আলাপচারিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। 

বন নিয়ে নয়া-উদারবাদী বাণিজ্যিক ন্যারেটিভ বদলাতে হবে। বন নিয়ে বনবাসী, বনজীবী ও আদিবাসী জনগণের লোকায়ত বনবিদ্যা এবং বন ব্যবস্থাপনা আজ সর্বস্বীকৃত। জনগণের বন দর্শন এবং বনবিদ্যাকেই রাষ্ট্রের বন ব্যবস্থাপনার মূল শক্তি হিসেবে দেখতে হবে। 

মুক্তিযুদ্ধ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানও আমাদের এই জন-আকাঙ্ক্ষার বার্তাই দেয়। প্রাকৃতিক বন সুরক্ষার জন-আকাঙ্ক্ষা বিদ্যা ও বয়ান থেকেই নয়া পাবলিক ডিসকোর্স গড়ে ওঠুক সবাইকে নিয়ে। 

পাভেল পার্থ: বাস্তুতন্ত্র ও বৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক, লেখক

[email protected]
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

6h ago