উৎপাদন খরচ না ওঠায় বিপাকে উত্তরাঞ্চলের আলু চাষি

আলু, আলু উৎপাদন, কৃষক, কীটনাশক, মজুরি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর,
গত বছরের চেয়ে এবার ১৯ হাজার ৪৭ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

আলুর উৎপাদন খরচ না ওঠায় বিপাকে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের কৃষক। তাদের দাবি, 'এ বছর বীজ, সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি ছিল। ফলে প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা। অথচ প্রতিকেজি আলু বিক্রি করতে হয়েছে ১৩ টাকা থেকে ১৪ টাকা দরে। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।'

তাই এ বছর আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে এক লাখ ১৯ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৭ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে এবার ১৯ হাজার ৪৭ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছর আলু চাষ হয়েছিল এক লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে।

রংপুর অঞ্চলে ৭১টি কোল্প স্টোরেজ আছে। এসব কোল্ড স্টোরেজে সাত লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। এবার প্রতিকেজি আলুর সংরক্ষণে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা। গত বছর যা ছিল পাঁচ টাকা।

জানতে চাইলে লালমনিরহাটের তিস্তা হিমাগারের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার প্রতিকেজি আলুর কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া নির্ধারণ করেছে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা। তবে মালিকপক্ষ বলছে আট টাকা। অনেক সময় এলাকাভেদে ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে।'

গত বছরের চেয়ে এবার ১৯ হাজার ৪৭ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

'তবে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে,' বলেন তিনি।

লালমনিরহাট কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোকছেদুর রহমান বলেন, 'সরকার ছয় টাকা ৭৫ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। তবে শ্রমিকের মজুরি ও বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধির কারণে আমরা লাভের বদলে লোকসানের দিকে যাচ্ছি। আমাদের দাবি, কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া সাত টাকা করা হোক।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া পাঁচ টাকা করার দাবি করছেন কৃষকরা। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকারিভাবে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটাই আপাতত বহাল থাকবে।'

'কোনো কোল্ড স্টোরেজ মালিক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিলে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়ারকুটি গ্রামের আক্কাস আলী জানান, এ বছর এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা, গত বছর যা ছিল ৩৫ হাজার  থেকে ৩৬ হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘা জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ মণ (প্রতি মণ ৪০ কেজি)।

তিনি বলেন, 'আমি আট বিঘা জমিতে ৬০০ মণ আলু পেয়েছি। নগদ টাকার প্রয়োজন ২০০ মণ আলু বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতিকেজিতে দর পেয়েছি মাত্র ১৪ টাকা। আরও ২০০ মণ আলু বিক্রির ইচ্ছে আছে। বাকি ২০০ মণ আলু সংরক্ষণ করবেন।'

'আলু চাষ করে এ বছর লোকসানের মুখে পড়েছি,' দাবি করেন আক্কাস আলী।

গত বছরের চেয়ে এবার ১৯ হাজার ৪৭ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার
কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া কামানোর দাবি করেন কৃষকরা। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুল জব্বার জানান, গত বছর প্রতিকেজি আলু সংরক্ষণ করতে পাঁচ টাকা খরচ হয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, 'এ বছর সরকারিভাবে ছয় টাকা ৭৫ পয়সা করা হলেও কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আট টাকা করে দাবি করছেন।'

আব্দুল জব্বার বলেন, 'এমনিতেই বাজারে আলুর দাম নেই, তার ওপর কোর্ড স্টোরেজের ভাড়া বৃদ্ধিতে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।'

রংপুরের নব্দীগঞ্জ এলাকার অরুণ চন্দ্র সেন জানান, গত বছর বাজারে আলুর দাম বেশি হওয়ায় এ বছর বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু বাজারে আলুর দাম কমায় হতাশায় পড়েছেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, 'উৎপাদিত আলুর ১৫ থেকে ২০  শতাংশ কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করতে পারবেন চাষিরা। বাকি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে।'

'সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া বেশি হলে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া বেশি নেওয়া হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ মনিতেই বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষকরা হতাশ।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বীজ, সার, কীটনাশকের দাম ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

4h ago