মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ঘুণে খেয়েছে আসবাবপত্রশিল্প

সাধারণত বছরের এই সময়টায় আসবাবপত্রের বিক্রি বাড়লেও এবারের চিত্র আশানুরূপ নয়। ছবি: স্টার

দুই বছর মন্দার পর গত জুনে দেশে আসবাবপত্র বিক্রি সামান্য বেড়েছিল। জুলাইয়ে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের ফলে আগস্টে সরকারের পতন হয়।

এরপর থেকে খাতে সামগ্রিক বিক্রি অন্তত ৪০ শতাংশ কমেছে। সরকারি ও করপোরেট অফিসের আসবাবপত্র বিক্রি নেই বললেই চলে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ হিমশিম খেলেও এখন তারা মূলত নিত্য ব্যবহার্য আসবাবপত্র কিনছেন। তবে, এই শীতে বিক্রি প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। সাধারণত, বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের কারণে এই সময় আসবাবপত্র বিক্রি বেশি হয়।

যদিও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল হওয়ার পথে। তবুও মূল্যস্ফীতির চাপ এখনো প্রবল। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে নয় শতাংশের বেশি। এ ছাড়াও, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই আসবাবপত্র বিক্রিও কম।

১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ড হাতিল ফার্নিচারের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ বছর আমাদের সামগ্রিক বিক্রি কমেছে।'

তিনি জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সরকারি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা অন্তত ৮০ শতাংশ কমেছে।

'সাধারণত সরকার বছরে ১২০ কোটি টাকার আসবাবপত্র কিনলেও শিগগিরই বিক্রি বাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।'

গত পাঁচ মাস ধরেই কর্পোরেট অফিসের আসবাবপত্র কেনা প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিয়ের মৌসুম হওয়ায় সম্প্রতি ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি বাড়লেও হাতিলের চেয়ারম্যান জানান, ২০২৪ সালে তাদের সামগ্রিক বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে।

আসবাবপত্রের দামের ওপর ডলারের প্রভাব থাকায় পণ্য বিক্রি কম।

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে থাকায় কাঁচামালের বাড়তি দাম ও শুল্কের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আসবাবপত্রের দাম বাড়াতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আতিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর আমাদের আয় ছিল ৪৬৮ কোটি টাকা। এ বছর কমে হয়েছে ৩৩০ কোটি টাকা।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিগ্যাল ফার্নিচারের বিক্রি ব্যাপক হারে না কমলেও এ বছরে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হয়নি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক তৌহিদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যতটা আশা করেছিলাম বিক্রি ততটা বাড়েনি। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত পাঁচ মাসে বিক্রি কমেছে।'

দুই বছর চাহিদা কম থাকলেও তার দাবি, জুনের আগে ব্যবসা ভালো ছিল। বাড়ির আসবাবপত্রের বিক্রি বেড়েছিল।

রিগ্যাল ফার্নিচারের ব্যবসায়ের তিন বিভাগ: কর্পোরেট অফিসের আসবাবপত্র, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র ও নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য বাড়ির আসবাবপত্র।

তৌহিদুজ্জামান বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত আগস্ট থেকে সরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র বিক্রি অনেক কমেছে।'

তবে মধ্যবিত্তদের চাহিদা পূরণ করায় ঘরের আসবাবপত্রের বিক্রি তুলনামূলক ভালো বলে জানান তিনি।

যেমন, তাদের ঘরের আসবাবপত্র বিক্রির হার খুব বেশি ওঠানামা করেনি। ফলে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব অন্যদের তুলনায় দৃশ্যত কম।

বর্তমান বাজার মন্দা সত্ত্বেও তৌহিদুজ্জামান আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই খাত ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী কারণ অর্থনীতি ও সামগ্রিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে।

অপর শীর্ষ ব্র্যান্ড পারটেক্স ফার্নিচারের হেড অব মার্কেটিং সোহান আকন সানি ডেইলি স্টারকে জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত পাঁচ মাসে তাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা সবেমাত্র দুই বছরের মন্দা থেকে ফিরতে শুরু করেছিলাম। তবে অফিসের আসবাবপত্র বিক্রি আবার কমেছে।'

তার ভাষ্য, 'অর্থনৈতিক মন্দায় ধনীরাও নতুন আসবাবপত্র কিনছেন না। এ ছাড়াও, ডলারের উচ্চ দামের কারণে আসবাবপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে।'

সম্প্রতি, পারটেক্স পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি আশা করলেও তা হয়নি বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

10h ago