‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমাদের অর্থনীতি এখনো প্রাণবন্ত’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি বৈশ্বিক সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে বিশ্ব চললেও দেশের অর্থনীতি সচল ও প্রাণবন্ত আছে। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমাদের অর্থনীতি এখনো চলমান এবং প্রাণবন্ত। তবে, সবার সহযোগিতায় আমরা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবো।
আজ সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২২ উপলক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে।'
তিনি বিশ্বব্যাপী সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে নিজস্ব খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য সবার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং গ্রেট ব্রিটেন থেকে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ব্রিটেন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে এটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করতে পারি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস থেকে বিপর্যস্ত, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পৃথিবী আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যার জন্য জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন পণ্যের পরিবহন খরচের পাশাপাশি দাম বহুগুণ বেড়ে গেছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও তার সরকার জনগণকে দুর্ভোগ থেকে দূরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের দেশের মানুষকে যেন বৈশ্বিক সংকটে ভুগতে না হয়। সুতরাং, তার সরকার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করে আনছে।
২০০৮ এর নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে তার সরকার এ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। তবে, দুর্ভাগ্য হল, করোনাভাইরাস যেতে না যেতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব মন্দা এবং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।'
সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, 'মানুষের জীবনমান যাতে সহজভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'শুধু তাই না, যারা একেবারে বয়োবৃদ্ধ বা পঙ্গু অসহায়, তাদের প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল আমরা দিচ্ছি বিনা পয়সায়। আমাদের যারা নিম্নবিত্ত, তাদের ৫০ লাখ মানুষকে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছি। আরও ১ কোটি মানুষকে আমরা কার্ড করে দিয়েছি, যাতে তারা তাদের প্রয়োজনীয় ৪টি পণ্য চাল, ডাল, তেল, চিনি ক্রয় করতে পারে।'
তিনি বলেন, 'তারা স্বল্পমূল্যে মাত্র ৩০ টাকায় যাতে চাল ক্রয় করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাও করে দিয়েছি। করোনার সময় আমরা গ্রাম পর্যায়ে নগদ অর্থ পর্যন্ত প্রেরণ করেছি, যাতে কোনো শ্রেণীর মানুষ যেন এতটুকু অবহেলিত না থাকে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি বাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করে দিয়েছে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একে একে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তুলেছে, যেন আমাদের সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী কাজ করে। তাদেরকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে দীক্ষিত করে গড়ে তুলছি, যেন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারে।
তিনি বলেন, 'আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করবো না, আমরা শান্তি চাই। 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়' জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এই নীতি শিখিয়ে গেছেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমি বলতে পারি, আমরা সেই নীতিতে অটল থেকে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।
তার সরকার সেনাবাহিনীর নতুন নতুন ঘাঁটি তৈরি করা থেকে শুরু করে, অনেক কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করছে।
নৌ বাহিনীকেও তার সরকার ত্রিমাত্রিক করেছে এবং সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার সেটা অর্জন করেছে। ভারতের সঙ্গ সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ ছিটমহল বিনিময় করেছে।
তিনি এটাকে পৃথিবীর কাছে একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর কোথাও দুই প্রতিবেশী দেশ এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছে, এমন নজীর নেই। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীগণ ৩৪ বছর ধরে ত্যাগ-তিতিক্ষার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায়, আমরা এখন সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন,'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন,'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণের বাহিনী তথা পিপলস আর্মি।' আমি বিশ্বাস করি, সত্যিই আমাদের সেনাবাহিনী এখন পিপলস আর্মি, কারণ যে কোনো দুর্যোগে অথবা যে কোনো দুর্ঘটনায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদেরকে সহযোগিতা করে যায়। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর পর '৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন, তখন দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। তিনি সেই ঘাটতি মোকাবিলা করে ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত রেখে, ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মত শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
Comments