জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির সাশ্রয় হবে ৭৬৭ কোটি টাকা

আগামী ছয় মাসে দেশে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আটটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশনে প্রতিটি পণ্যের প্রিমিয়াম নির্ধারণে সাড়ে তিন মার্কিন ডলারেরও বেশি সাশ্রয় হয়েছে। সেই হিসাবে আগামী ছয় মাসে জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রিমিয়াম বাবদ বিপিসির মোট সাশ্রয় হবে প্রায় ৭৬৭ কোটি টাকা।

বিপিসির কাছে পাওনা না থাকায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা ফিরেছে। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল হয়ে আসায় সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্ৰহও বেড়েছে। তাই নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় প্রিমিয়াম কমেছে।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ডিজেলের প্রিমিয়াম ছিল সর্বনিম্ন তিন মার্কিন ডলার। যুদ্ধ শুরু পর পর সেই প্রিমিয়াম বেড়ে নয় মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার পর থেকে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের খরচ পোষাতে জ্বালানি বিক্রির সময় প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেয়।

বিপিসি পরিশোধিত জ্বালানি সরবরাহের জন্য যে আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি করেছে সেগুলো হলো—ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ভূমি ছিয়াক পোছাকো (বিএসপি), মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, থাইল্যান্ডের পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড, আরব আমিরাতের অ্যামিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি), সিঙ্গাপুরের পেট্রো চায়না লিমিটেড, ওমানের ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড এবং ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল)।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জিটুজির ভিত্তিতে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নির্ধারিত দামের সঙ্গে ব্যারেল প্রতি নির্ধারিত প্রিমিয়াম পায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে (চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর) পরিশোধিত ডিজেলের ক্ষেত্রে ব্যারেল প্রতি আট ডলার ৭৫ সেন্ট প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা রয়েছে। তবে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন) জন্য পরিশোধিত ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়েছে পাঁচ ডলার ১১ সেন্ট, যা আগের দামের চেয়ে তিন দশমিক ৬৪ ডলার কম।

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল জেট এ-১ এর দাম ছিল ১০ দশমিক ৮৮ ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৬ দশমিক ৭০ ডলার, অকটেন নয় দশমিক ৮৮ ডলার এবং মেরিন ফুয়েলের দাম ছিল ৭৬ দশমিক ৮৮ ডলার। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুনে প্রতি ব্যারেল জেট এ-১ এর দাম তিন দশমিক ৫৬ ডলার কমে সাত দশমিক ৩২ ডলার, ফার্নেস অয়েল দুই দশমিক ০২ ডলার কমে ৪৪ দশমিক ৬৮ ডলার, অকটেন তিন দশমিক ৯৫ ডলার কমে পাঁচ দশমিক ৯৩ ডলার এবং মেরিন ফুয়েলের দাম তিন দশমিক ৯৮ ডলার কমে ৭২ দশমিক ৯০ ডলারে দাঁড়াবে।

পাশাপাশি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত সরবরাহকারীদের কাছ থেকেও আগের চেয়ে কমে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করছে বিপিসি। এতে শুধু প্রিমিয়াম খাতে বর্তমানের চেয়ে আগামী ছয় মাসে ৭৬৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানান বিপিসির কর্মকর্তারা।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিপিসির কাছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো বকেয়া নেই। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা অর্জন করেছে বিপিসি। তাই তারা এবার প্রিমিয়াম কম ধরেছে। টেন্ডারে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। এতে বিপিসির অনেক সাশ্রয় হবে।

'প্রত্যেক আইটেমেই প্রিমিয়াম কমেছে। প্রিমিয়াম কমার কারণে আগামী ছয় মাসে জিটুজি এবং টেন্ডার অংশেও বিপিসির বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে', বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে সমন্বয় করে। আর তেলের দামের সঙ্গে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ ভাড়া, ইনস্যুরেন্সসহ আনুষঙ্গিক যে খরচ ধরে, তাই প্রিমিয়াম।

Comments

The Daily Star  | English

Remittances grow 3% in January

Migrants sent home $2.18 billion in the first month of 2025

1h ago