চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর লোকসান বাড়তে পারে ৫ গুণ

চলতি মাসে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লোকসান গুনবে সরকারি সংস্থাগুলো।
চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর লোকসান বাড়তে পারে ৫ গুণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট লোকসান চলতি অর্থবছরে এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল সাত খাতের ৫০ প্রতিষ্ঠানের বাজেট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে।

এর মধ্যে শিল্প খাতে ছয়টি; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির অধীনে ছয়টি; পরিবহন ও যোগাযোগে আটটি; বাণিজ্যিক তিনটি; কৃষি ও মৎস্য খাতে ছয়টি; নির্মাণে ছয়টি ও সেবা খাতে ১৮টি প্রতিষ্ঠান আছে।

চলতি মাসে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লোকসান গুনবে সরকারি সংস্থাগুলো।

এটি গত অর্থবছরের মোট পাঁচ হাজার ৯৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার লোকসানের চেয়ে চার দশমিক ৬৮ গুণ বেশি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাগুলোর মোট আয় ধরা হয়েছে চার লাখ এক হাজার ৬৮৯ কোটি এক লাখ টাকা ও সামগ্রিক খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলো তিন লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আয় করেছে। খরচ করেছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট লোকসান ছিল ১৩৮ কোটি চার লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুসারে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান মুনাফা করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (টিসিবি) ১৩ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অন্যদের সাফল্য ম্লান করছে।

চলতি অর্থবছরে এই ১৩ প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৬ হাজার ১৪৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

করোনা মহামারির পর থেকে সরকার খরচ কমাতে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বছরের পর বছর ধরে বেড়েই চলেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর লোকসানের এই ধারা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘস্থায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট সর্বস্তরের মানুষকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে বলে মনে করছেন তারা।

জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক মানের অডিট ফার্মগুলো যদি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ-ক্ষতির পরিসংখ্যান নিরীক্ষা করে, তাহলে আরও ভালো চিত্র পাওয়া যেতে পারে।'

কারণ অতীতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানের হিসাব ও আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া, যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তারা বাজারে একক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে মুনাফা করছে বলে মনে করেন তিনি।

'তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার অধীনে তাদের কতটা লাভ হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'টিসিবির মতো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি বোধগম্য। কারণ, তারা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দামে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ করে।'

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'তবে দুর্বল পরিকল্পনা ও নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর লোকসান হচ্ছে।'

লোকসান দিয়ে কিছু উৎপাদনকারী সংস্থাকে সচল রাখার পরিবর্তে বিকল্প পরিচালন পদ্ধতি নেওয়া যায় কি না সেটি ভাবা যায় বলেও মনে করেন তিনি।

সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখে পড়তে পারে পিডিবি। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি হতে পারে ১৮ হাজার ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে লোকসান প্রায় তিন গুণ বেশি হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট নথি অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ১১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিতীয় বৃহত্তম লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে টিসিবি।

সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ হতে পারে পাঁচ হাজার ৯৮৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এটি গত বছরের ছয় হাজার ৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার লোকসানের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।

লোকসানের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এরপরেই থাকবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।

চলতি অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান হতে পারে পাঁচ হাজার ২৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এটি আগের অর্থবছরের পাঁচ হাজার ৩৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লোকসানের চেয়ে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি।

বিপিসির লোকসান ধরা হয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এটি গত বছরের লোকসানের চার হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা থেকে কমেছে।

বিসিআইসির লোকসান হতে পারে এক হাজার ৩৩৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এটি আগের বছরের লোকসান এক হাজার ৫০৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার তুলনায় কম।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus sits with BNP delegation over reform commissions

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir is leading the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

1h ago